ভোটের মুখেও প্রতিশ্রুতি

Written by SNS April 8, 2024 1:08 pm

লোকসভা ভোটের দিনক্ষণ কর্মসূচি ঘোষিত হয়ে গিয়েছে৷ আগামী ১৯ এপ্রিল থেকে শুরু হবে নির্বাচন৷ আর এই লোকসভা নির্বাচন যত এগিয়ে আসছে, কেন্দ্রের মসনদে আসীন বিজেপি নামক দলটির শীর্ষ নেতৃত্বের মধ্যে নিরাপত্তাহীনতা ক্রমশঃ বৃদ্ধি পাচ্ছে৷ লোকসভা ভোট বৈতরণি পেরোতে রামমন্দিরকে হাতিয়ার করতে চেয়েছিল বিজেপি৷ কিন্ত্ত এখন বিজেপি বুঝতে পারছে, রামমন্দির ইসু্য ভোট বৈতরণি পার হওয়ার জন্য একেবারে যথেষ্ট নয়৷ আর তাই নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের (সিএএ) গাজর ঝুলিয়ে এ যাত্রায় পার পেতে চাইছে গেরুয়া শিবির৷ এর পাশাপাশি ভয় দেখানোর জন্য পুরোদমে কেন্দ্রীয় এজেন্সিকে মাঠে নামানো হয়েছে৷ ঝাড়খণ্ডের হেমন্ত সোরেন, বিআরএস নেত্রী কে কবিতা এবং দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল গ্রেফতার হয়েছেন৷ এভাবেই নিজেদের রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার জন্য সারা দেশে ‘অঘোষিত ইমার্জেন্সি’ জারি করতে চাইছে বিজেপি৷ বিরোধী শাসিত রাজ্যগুলির তাবড় তাবড় রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বকে লোকসভা নির্বাচনের আগে গ্রেফতার করিয়ে তাদের মনোবল ভেঙে দিতে চাইছে তারা৷

প্রসঙ্গত বলা দরকার, ভারতীয় জনতা পার্টির শাসনকালে ভারতবর্ষের গণতন্ত্র আজ ভুলুণ্ঠিত৷ গেরুয়া পার্টির অপশাসনে এ দেশের ‘ধর্মনিরপেক্ষ চরিত্র’, ‘সংসদীয় গণতন্ত্র’ এবং ‘যুক্তরাষ্ট্রীয় পরিকাঠামো’ ভয়ঙ্কর বিপর্যয়ের মুখে এসে দাঁড়িয়েছে৷ ভুয়ো হিন্দুত্বের জিগির তুলে মানুষে মানুষে বিভাজন সৃষ্টি করাটাই ভারতীয় জনতা পার্টির মূল উদ্দেশ্য৷ এর আগে ক্ষমতার জোরে নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের জন্য গঠিত হওয়া সংশ্লিষ্ট সুপারিশকারী কমিটিতে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতিকে সরিয়ে দিয়ে ক্যাবিনেট মিনিস্টারের অন্তর্ভুক্তিকরণ করানো হয়েছে পদ্ম শিবিরের অঙ্গুলি হেলনে৷ ফলস্বরূপ নিজেদের পছন্দের লোককে নির্বাচন কমিশনার হিসেবে নিয়োগের পথকে সুগম করা হয়েছে৷ কেন না, এই নিয়োগ কমিটিতে কেন্দ্রীয় সরকারের প্রাধান্য থাকায় (প্রধানমন্ত্রী এবং কেন্দ্রীয় ক্যাবিনেট মিনিস্টার) লোকসভার বিরোধী দলনেতার পক্ষে কিছুই করা সম্ভব নয়৷ সম্পূর্ণ অনৈতিক উপায়ে লোকসভা নির্বাচন জেতার জন্য স্বশাসিত সংস্থাকেও কুক্ষিগত করার চেষ্টা করেছে বিজেপি৷ তবে নির্বাচনী বন্ড নিয়ে খুবই বেকায়দায় পড়েছে কেন্দ্রের শাসত দল৷ সম্প্রতি, স্টেট ব্যাঙ্ক সুপ্রিম কোর্টের কাছে নির্বাচনী বন্ড সংক্রান্ত যে তথ্য প্রেরণ করেছে, তা থেকেই পরিস্কার, নির্বাচনী বন্ড বিক্রির মাধ্যমে সবচেয়ে লাভবান দল হল এই বিজেপি৷ সুতরাং ভেকধারীদের মুখোশ খুলে গিয়েছে৷ এখন শুধু দিন গোনার পালা৷

প্রতিশ্রুতি বিলিতে নরেন্দ্র মোদি অবশ্য অবিচল৷ নির্বাচনী বিধিনিষেদ চালুর পরও থেমে যাননি মোদি৷ লোকসভা ভোটে কৃষ্ণনগর কেন্দ্রে বিজেপির প্রার্থী কৃষ্ণনগর রাজবাড়ির রাজমাতাকে ফোন করে মোদিজি বলেছেন, ‘বাংলায় তিন হাজার কোটি টাকা ইডি বাজেয়াপ্ত করেছে৷ এই টাকা গরিব মানুষের৷ তাদের মধ্যে কেউ শিক্ষক, কেউ ক্লার্ক হওয়ার জন্য টাকা দিয়েছিলেন৷ নতুন সরকার গঠন হলে আইনের মাধ্যমে টাকা ফেরত দিতে চাই৷ আমি আইনি পরামর্শ নিচ্ছি৷ প্রধনমন্ত্রীর এই প্রতিশ্রুতি একরাশ প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে৷ কারণ, নিয়ম হল, বাজেয়াপ্ত টাকা আদালতের নির্দেশে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের রিজিওনাল হেড অফিসে জমা রাখতে হয়৷ প্রিভেনশন অব মানি লন্ডারিং অ্যাক্ট বা এমএলএ আইন অনুযায়ী মামলার নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত বাজেয়াপ্ত টাকা ব্যবহার করা যায় না৷ সুতরাং সব মামলার নিষ্পত্তি না হলে ওই অর্থ ব্যবহার করা যায় না৷ তাছাড়া ঘুষের বিনিময়ে চাকরি পাওয়া অপরাধ৷ যিনি ঘুষ দেন, আইনের চোখে তিনিও অপরাধী৷ কাজেই তাকে টাকা ফেরত দেওয়ার প্রশ্নই ওঠে না৷ ভোটের মুখে সরকারের ব্যর্থতাকে আড়াল করতে নানা প্রতিশ্রুতির মোড়কে মানুষের আস্থা অর্জনের মরিয়া প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছেন মোদি৷