দেশবাসীকে আরও বেপরোয়া হয়ে লুট করছে মোদী সরকার। তৃতীয় দফায় একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারিয়ে দুই শরিকের সমর্থন নিয়ে কেন্দ্রে ক্ষমতায় এসেছে বিজেপি, গঠন করেছে তৃতীয় মোদী সরকার। সংখ্যায় মোদী সরকার দুর্বল হলেও লুট ও দুর্নীতিতে দুর্বল হয়নি। তা আরও বেড়েছে। ১৬ সেপ্টেম্বর তৃতীয় মোদী সরকার ১০০ দিন পার করেছে। শততম দিনে বাজারে মূল্যবৃদ্ধির হার ছিল বেশ চড়া। আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত তেলের দাম বিপুল হারে কমে গেলেও দেশে পেট্রোল, ডিজেলের দাম চড়া হারেই বেড়ে রয়েছে। দেশে পেট্রোল, ডিজেলে বিপুল হারে কর চাপানোর ফলেই দাম কমেনি। উল্টে শতাংশের হারে কর চাপানোর ফলে তার দাম ধাপে ধাপে বেড়ে চলেছে। কেন্দ্রের পেট্রোলিয়াম মন্ত্রক সূত্রে খবর, পেট্রোল-ডিজেলে বিপুল হারে কর চাপিয়ে রেকর্ড অর্থ সংগ্রহ করেছে মোদী সরকার। এই অর্থের পরিমাণ প্রায় ৩৫ লক্ষ কোটি টাকা। করের নামে জনতার কাছ থেকে এই অর্থ লুট করা হয়েছে। কর চাপানোর নামে সরকার যেভাবে লুট চালাচ্ছে তাতে পেট্রোপণ্যের মতো জ্বালানির দাম বেড়ে বাজারে সবকিছুর দাম আগুন হয়ে রয়েছে।
মোদী সরকার ২০১৪ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকে পেট্রোল, ডিজেল, কেরোসিন, রান্নার গ্যাস সহ সমস্ত জ্বালানির দামই বেড়েই চলেছে। তৃতীয় দফায় বিজেপি একক গরিষ্ঠতা হারালেও দাম বাড়ানোর নীতি বদল করেনি। আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত তেলের দাম যত কমেছে, মোদী সরকার কর বসিয়ে উল্টে তার দাম দেশে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। উদাহরণ হিসাবে বলা যায়, ২০১৪ সালে আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম ছিল ১০৭ ডলার প্রতি ব্যারেলে। সেখানে পেট্রোল, ডিজেলের দাম ছিল যথাক্রমে ৭১.৫১ টাকা এবং ৫৭.২৮ টাকা প্রতি লিটার। ২০২৪ সালে আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত তেলের দাম কমে হয়েছে ৭২.৪৩ ডলার প্রতি ব্যারেল। অথচ দেশে পেট্রোল-ডিজেলের দাম এক পয়সাও কমেনি। উল্টে তা বেড়ে হয়েছে যথাক্রমে ৯৪.৭২ টাকা এবং ৮৭.৬২ টাকা প্রতি লিটার।
১০০ দিন পেরিয়ে গিয়েছে তৃতীয় মোদী সরকারের। অথচ দিশাহীনভাবেই চলছে সরকার। ভোটের সময় বিজেপি যেসব প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, তা পালনের কোনও উদ্যোগই নেই। মোদী সরকার দাবি করেছিল দেশে সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপ একদম রোধ করা হবে। কিছুই রোধ হয়নি। তা আরও বেড়েছে। গত ১০০ দিনে দেশে ২৫টি সন্ত্রাসবাদী হামলার ঘটনা ঘটেছে, যাতে ২১ জন সেনা প্রাণ হারিয়েছেন, আহত হয়েছেন ২৯ জন সেনা এবং ১৫ জন নাগরিক। ফলে প্রথম শতদিনের মাথায় দেখা গেল মোদী সরকার সন্ত্রাস দমনে সম্পূর্ণ ব্যর্থ।
মোদী সরকারের শততম দিনে আরও দেখা গেল, নতুন পরিকাঠামো প্রকল্প গড়ে ওঠা দূরে থাক, একের পর এক নির্মিত পরিকাঠামো প্রকল্পগুলি ভেঙে পড়ছে। কম করে ৫৬টি নির্মিত পরিকাঠামো গত ১০০ দিনে ভেঙে পড়েছে। তার মধ্যে রয়েছে বিমানবন্দর, ব্রিজ বা সেতু এবং সড়ক। এইসব প্রকল্প উদ্বোধনের কিছুদিন পরেই ভেঙে পড়েছে। জব্বলপুর বিমানবন্দর, দিল্লি বিমানবন্দর, রাজকোট বিমানবন্দর প্রতি বর্ষায় ফাটা ছাদ থেকে পড়া জলে প্রায়শই ভেসে যায়। ১৮ হাজার কোটি টাকা খরচে তৈরি হয়ছে অটল সেতু। এই সেতুতে এখনই ফাটল ধরা পড়েছে। রামমন্দির উদ্বোধনের পরই সামান্য বৃষ্টিতে জল থৈ থৈ অবস্থা। ফাটলও ধরা পড়েছে। নতুন সংসদ ভবন চত্বরও তথৈবচ। গুজরাতের সুদর্শন সেতুতেও চওড়া ফাটল ধরা পড়েছে। বেশির ভাগ পরিকাঠামো নির্মাণে বিপুল দুর্নীতির খবর প্রকাশ পাচ্ছে। চরম দুর্নীতির জন্য পরিকাঠামোর মান খারাপ হওয়ায় তা ভেঙে পড়েছে। ফলে যতই ঢাকঢোল পিটিয়ে প্রচার করা হোক না কেন, ১০০ দিনে মোদীর রোজনামচায় বিকশিত ভারতের ছবি নেই। পিছিয়ে যাওয়া ভারতের ছবিই প্রকট হয়ে ধরা পড়েছে।