লাফিয়ে লাফিয়ে আয় বেড়েছে স্বীকৃতিহীন রাজনৈতিক দলগুলির। ২০২২-২৩ অর্থ বছরে দেশের নিবন্ধিত কিন্তু স্বীকৃতিহীন রাজনৈতিক দলগুলির ঘোষিত আয় ২৩৩ শতাংশ বেড়েছে, অথচ তাদের ৭৩ শতাংশের বেশি দল আর্থিক হিসাব প্রকাশ করেনি। এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে অ্যাসোসিয়েশন ফর ডেমোক্রেটিক রিফর্মস (এডিআর)-এর সর্বশেষ প্রতিবেদনে।
এডিআর জানিয়েছে, দেশে মোট নিবন্ধিত স্বীকৃতিহীন দলের মধ্যে ২২টি রাজ্যের ৭৩৯টির বার্ষিক অডিট বা অনুদান রিপোর্টেই রাজ্য নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত। কিন্তু এদেরও মাত্র ১৮.১৩ শতাংশ দলের (৫০১টি) হিসাব উন্মুক্ত আছে। বাকি ৭৩.২৬ শতাংশ দলের (২০২৫টি) অনুদান ও আউট রিপোর্টের কোনও হদিশ নেই।
Advertisement
প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, উত্তরপ্রদেশে সবচেয়ে বেশি দল তাদের হিসাব জামা দিয়েছে, তার পরে দিল্লি ও বিহার। যেখানে শূন্য রিপোর্টিং: পাঞ্জাব (৭৩টি দল), উত্তরাখণ্ড (৪০টি) এবং গোয়া (১২টি)—কোনও দলেরই রিপোর্ট নেই।
Advertisement
সবচেয়ে ভালো রিপোর্টিংয়ের রাজ্যগুলি হলো বিহার (৩৬.৪১ শতাংশ), গুজরাত (৩৭.৮৯ শতাংশ), দিল্লি (৩০ শতাংশ), উত্তরপ্রদেশ (২৩.২৫ শতাংশ) ও তামিলনাড়ু (২১.৭৪ শতাংশ)। দু’টি রিপোর্ট (অডিট ও অনুদান) প্রকাশের দিক থেকে গুজরাত (৩০.৫৩ শতাংশ), দিল্লি (২১.৬৭ শতাংশ) ও বিহার (১৮.৪৮ শতাংশ) জাতীয় গড়ের চেয়ে এগিয়ে।
আগের বিচারে শীর্ষ ১০ দলের মধ্যে ৫টিই গুজরাতের। এই ৫টি দল মিলে শীর্ষ ১০ দলের মোট আয়ের ৭৩.২২ শতাংশ (১,১৫৮.১১ কোটি) টাকা গুজরাত থেকেই এসেছে। এর মধ্যে ভারতীয় ন্যাশনাল জাতীয় দল একাই ৯৫৭.৪৫ কোটি আয় দেখিয়েছে (২০১৯-২০ থেকে ২০২৩-২৪ পর্যন্ত), যা মোট আয়ের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ।
২০২৩-২৪ সালে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে সত্যবাদী রক্ষকপার্টি ২০২৩-২৪ সালে ৩৩০.৫৫ কোটি টাকা সহ মোট আয় ৪১৬.২৩ কোটি টাকা আয়। শীর্ষ ১০ দলের মধ্যে বেশ কয়েকটি ২০১৫ সালের পর গঠিত, যেমন—সত্যবাদী রক্ষক পার্টি (২০২২), জন মন পার্টি (২০২১), জন সেবক ক্রান্তি পার্টি (২০২১), নিউ ইন্ডিয়া ইউনাইটেড পার্টি (২০১৮)।
শীর্ষ ১০ দলের আয়ের ৯৯.৯৯ শতাংশ এসেছে অনুদান থেকে। এর মধ্যে ৯৩.৫৬ শতাংশ অনুদানই ২০ হাজারের বেশি মূল্যের বড় অনুদান। জাতীয় দলগুলির ক্ষেত্রে এই অনুপাত মাত্র ৩৩ শতাংশ, আর আঞ্চলিক দলগুলির ক্ষেত্রে আরও কম, মাত্র ১৪ শতাংশ। যেমন, নিউ ইন্ডিয়া ইউনাইটেড পার্টি তাদের সম্পূর্ণ অনুদান ২০ হাজারের বেশি বড় দাতাদের থেকে পেয়েছে (৪০৭.৪৫ কোটি টাকা) কোনও কোনও দল প্রথমে শূন্য বা সামান্য আয় দেখিয়েও হঠাৎ কয়েক বছরের মধ্যে শত কোটি টাকার ওপরে আয় করেছে। যেমন, আম জনমত পার্টি ২০২০-২১ সালে ৮ হাজার থেকে ২০২২-২৩ সালে লাফিয়ে ২২০.৩৬ কোটি টাকা আয় করেছে। সৌরাষ্ট্র জনতা পক্ষ শূন্য থেকে ১৩১.৩১ কোটি টাকা আয় দেখিয়েছে।
এডিআর আশঙ্কা প্রকাশ করে জানিয়েছে, এইসব দলের অনেকেই বড় অনুদান নিচ্ছে অথচ কোনও নির্বাচনে প্রতিদ্ধন্দ্বিতা করছে না। তাই নির্বাচন কমিশনের আরও কঠোর নজরদারি ও নিয়মিত পর্যালোচনা দরকার। এডিআর-এর সুপারিশ, পাঁচ বছর ধরে নিষ্ক্রিয় দলগুলিকে তালিকা থেকে বাদ দিন। কর ছাড় পেতে হলে আর্থিক হিসাব প্রকাশ বাধ্যতামূলক করতে হবে। রাজ্য নির্বাচন কমিশনকেই নির্দেশ দিতে হবে, হিসাব পাওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ওয়েবসাইটে আপডেট করতে হবে।
শীর্ষ ১০ স্বীকৃতিহীন দলের মোট আয় (২০২২-২৩) ছিল ১,৫৮১.৭৫ কোটি। মোট অনুদান পেয়েছে ১,৫৮১.৬৬ কোটি। তার মানে, শীর্ষ ১০ দলের আয় ও অনুদান কার্যত সমান— প্রায় পুরোটা আসছে বড় দাতাদের কাছ থেকে।
এডিআর-এর মন্তব্য, স্বীকৃতিহীন দলগুলির আয়-অনুদান প্রকাশে বড় পার্থক্য, যা হয়তো অল্প কিছু বড় দাতাদের ওপর নির্ভরশীলতা বা অন্যরকম রিপোর্টিং পদ্ধতির ইঙ্গিত দিচ্ছে। যে রাজনৈতিক দলগুলি নির্বাচনে অংশও নেয় না, অথচ কোটি কোটি টাকা অনুদান পায়, তাদের প্রতি নির্বাচন কমিশনের কড়া নজরদারি দরকার।
Advertisement



