মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের হয়ে নির্বাচনী প্রচার করেছিলেন নরেন্দ্র মোদী। ‘আবকি বার ট্রাম্প সরকার’ বলেও শেষ রক্ষা হল না। তাই মোদী সরকার এখন দেশের মানুষকে নানাভাবে বোঝানোর চেষ্টা করছেন, ২৫ শতাংশ শুল্ক এমন কী ব্যাপার! আমেরিকায় ভারতের মোট রপ্তানির সামান্য অংশে তার প্রভাব পড়বে। বাকি অংশে নাকি তেমন আঁচই পড়বে না। এরই মধ্যে দেশের লক্ষ লক্ষ লক্ষ বস্ত্র শিল্পের শ্রমিক গণছাঁটাইয়ের মুখে।
পয়লা আগস্ট থেকে বিভিন্ন দেশের উপর বর্ধিত হারে শুল্ক চাপিয়েছেন ট্রাম্প। বেশ কয়েকটি দেশের ক্ষেত্রে আগে বেশি মাত্রায় শুল্ক চাপানো হলেও পরে তা কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। বিনিময়ে সেই সমস্ত দেশকে তার বাজার, লাভজনক ক্ষেত্রে কিংবা প্রাকৃতিক সম্পদের উল্লেখযোগ্য অংশ মার্কিন বিনিয়োগের জন্য খুলে দিতে হয়েছে। চিন, ভিয়েতনাম, মেক্সিকো ও দক্ষিণ আফ্রিকার মতো বেশ কয়েকটি দেশ আবার আমেরিকার এই একতরফা সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছে। ফলে তাদের শুল্কের হার কমানো হয়নি। আবার কিছু দেশ পূর্বোক্ত সমস্ত কিছু আমেরিকার কাছে সমর্পণ করেও বর্ধিত শুল্কের থেকে রেহাই পায়নি। দুঃখজনক হলেও মোদীর ভারত এমন সমস্ত দেশের তালিকাতেই রয়েছে।
Advertisement
গত এপ্রিল মাসে ভারতের উপর ২৬ শতাংশ শুল্ক চাপানোর ঘোষণা করেন ট্রাম্প। তারপর চার মাস ধরে ট্রাম্পের থেকে ‘শুল্ক সমঝোতার’ ভিক্ষা চেয়ে এসেছে মোদী প্রশাসন। এর টোপ দিয়েই নাকি ভারত-পাকিস্তান সংঘর্ষ বন্ধ করেছেন ট্রাম্প, এই দাবিও জানিয়ে আসছে আমেরিকা। তবে তারপর অনুনয়-বিনয় করে মাত্র ১ শতাংশ শুল্ক কমিয়ে আনতে পেরেছে মোদী সরকার। এখন আমদানি শুল্ক হয়েছে ২৫ শতাংশ। আবার রাশিয়া থেকে তেল আর অস্ত্র কেনার অপরাধে ভারতকে জরিমানাও দিতে হবে। প্রসঙ্গত, এপ্রিল মাসে ভারতের পাশাপাশি পাকিস্তানের উপরেও ২৯ শতাংশ শুল্ক চাপায় আমেরিকা। অবশ্য ১ আগস্ট পাকিস্তানের আমদানি শুল্কের হার কমিয়ে ১৯ শতাংশ নির্ধারিত হয়েছে। অর্থাৎ মোদীর ‘মাই ডিয়ার ফ্রেন্ড ডোনাল্ড’ পাকিস্তানকে আমদানি শুল্কে ১০ শতাংশ ছাড় দিয়েছেন।
Advertisement
ভারতের উপর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অতিরিক্ত শুল্ক ও জরিমানা চাপানো নিয়ে শেষ পর্যন্ত মোদী সরকার মুখ খুলতে বাধ্য হয়েছে। এক বিবৃতিতে দেশের স্বার্থ এবং অর্থনৈতিক সুরক্ষায় ভারত সরকার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে বলে জানিয়েছে। কিছুক্ষণের জন্য দেশের স্বার্থরক্ষায় মোদী সরকার আমেরিকার চাপের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবে বলে মনে হলেও, কয়েক ঘণ্টার মধ্যে পাল্টে গেল মতটা। এরপরই আর একটি বিবৃতি প্রকাশ করে মোদী সরকারের কৃষি ও কৃষক কল্যাণমন্ত্রক জানিয়েছে, মার্কিণ কৃষি বিপণন কোম্পানিগুলির জন্য দেশের কৃষিপণ্যের বাজার খুলে দেওয়া হবে। আমগদানি-রপ্তানি শুল্ক কমানো এবং মুক্ত বাণিজ্যের প্রসার ঘটাতে আমেরিকার সঙ্গে খুব শীঘ্রই উপযুক্ত সমঝোতা করা হবে।
কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ট্রাম্পের অতিরিক্ত হারে শুল্ক চাপানো এবং জরিমানা ঘোষণার প্রতিবাদ জানিয়ে ভারত সরকারের উচিত চলতি আলোচনা থেকে অবিলম্বে বেরিয়ে আসা। আমেরিকার থেকে আমদানিকৃত পণ্যে চিনের মতো প্রত্যাঘাতী শুল্ক চাপানোর কথাও অনেকে বলেছেন। কিন্তু কেন্দ্রের বিবৃতিতে ট্রাম্পের তেলা মাথায় তেল দেওয়াটাই স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।
বিশ্লেষকদের একাংশ আবার বলেছেন, আমদানি শুল্ক কমানোর বিনিময়ে কোনও দেশের যে কোনও লাভজনক ক্ষেত্র আমেরিকার হাতে তুলে দেওয়ার জন্য চাপ দিচ্ছেন ট্রাম্প। উদাহরণ স্বরূপ, পাকিস্তানের উপর ১৯ শতাংশ শুল্ক চাপানো হয়েছে। বিনিময়ে সেখানে জ্বালানি তেলের খননের সামগ্রিক বরাত আ্মেরিকাকে দেওয়া হয়েছে। ঠিক একই কায়দায় মোদী সরকার ভারতের কৃষিক্ষেত্রে আমেরিকার হাতে তুলে দেওয়ার চেষ্টা করছে। এর আগেই ব্রিটেনের সঙ্গে স্বাক্ষর করা বাণিজ্য চুক্তিতে একইভাবে কৃষিক্ষেত্র ব্রিটেনের বৃহৎ পুঁজির কর্পোরেট সংস্থাগুলির জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে। দেশের স্বার্থ এবং অর্থনৈতিক সুরক্ষার নামে আমেরিকার কাছে মোদী সরকার কৃষক-খেত মজুরদের স্বার্থ বিসর্জন দিতে চলেছে।
Advertisement



