• facebook
  • twitter
Saturday, 6 December, 2025

মা দুর্গা হেমা মালিনীও নন, তাঁর স্থান পিরামিডের কবরেও নয়

প্রমথেশবাবু আরও বলেন, ‘যা ঐতিহ্যের সঙ্গে খাপ খায় না, তা কার্যত অশালীন। যারা দেবী মা’কে আবর্জনার স্তূপে রাখতে চান তাঁরা রাখুন। আমরা মা’কে দেবালয়ে রাখছি এবং রাখব।

মা দুর্গা সিনেমা জগতের চিত্রতারকা নয়, মা দুর্গার বাসস্থান পিরামিডের কবরখানাতেও নয়। মায়ের অধিষ্ঠান খোদ মন্দিরে, দেবালয়ে। কিন্তু আমাদের এই বাংলায় বহু আঁতেল নারী-পুরুষ আছেন, যাঁরা নিজেদের ভীষণ পণ্ডিত মনে করেন। তাঁরা সামনে ক্যামেরা আর বুম পেলে দারুণ বিপ্লবী হয়ে ওঠেন। তখন তাঁদের মুখ চুলবুল করতে থাকে।

ইউটিউবকে ঘিরে এখন চূড়ান্ত উত্তেজনা। চলছে তীব্র প্রতিযোগিতা, আর হুড়োহুড়ি। ঘুঁটে কুড়োনি থেকে সেলিব্রিটি সকলেই নাওয়া-খাওয়া ভুলে বাইট দিতে ব্যস্ত। এই আঁতেলরাই মা দুর্গার সঙ্গে নারী-স্বাধীনতার কেমিক্যাল সংমিশ্রণ ঘটিয়ে শেষে মায়ের মুখের আদল হেমামালিনীতে পরিণত করেন। আর পুরস্কারের লোভে ‘থিমে’ পুজোর নামে মা’কে রাখেন কখনও পিরামিডের মমির সঙ্গে কবরে, কখনও বা তাজমহলের মতো স্মৃতিসৌধে।

Advertisement

আধুনিকতার নামে এই ধরনের চিন্তাভাবনার নিম্নগামিতার জন্যে আজ ঘরের মা থাকেন বৃদ্ধাশ্রমে আর দেবী মা থাকেন কবরে বা আমেরিকার ট্রেড সেন্টারের মাথায়। হলিউড থেকে রাইটার্স বিল্ডিংস, বুর্জ খলিফা থেকে আইফেল টাওয়ার সর্বত্র দেবী মা’কে গুঁজে দেবার অশ্লীল খেলা চলছে।

Advertisement

রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন— ‘আমরা সাধনার বিষয়কে খেলার সামগ্রীতে পরিণত করি, আর খেলার সামগ্রীকে সাধনার বিষয় করে তুলি। কিন্তু সকলেই এমন নয়। প্রয়াত মন্ত্রী এবং রাজ্যের জনপ্রিয় নেতা সুব্রত মুখোপাধ্যায় একবার এই প্রতিবেদককে বলেছিলেন, ‘আমি জীবিত থাকতে একডালিয়া এভারগ্রিনের পুজোতে থিমটিম হবে না। আমরা চিরকাল মায়ের সাবেকি ভাবমূর্তিতে বিশ্বাসী।সেই ঐতিহ্যই আমরা বজায় রাখব। সুব্রতবাবুর মুখ আর মন এক ছিল।

ঘটনাচক্রে টালিগঞ্জ আজাদগড়ের উদ্যোগী ক্লাবও মায়ের সাবেকিয়ানার পূজারী। ক্লাবের সম্পাদক রবীন সাহা বলেন, ‘আমরা মনে করি, মা থাকবেন দেবালয়ে।’ এ ব্যাপরে উদ্যোগী ক্লাব সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের ভাবনাচিন্তার অনুগামী। রবীনবাবু বলেন, ‘মা দুর্গাকে হেমা মালিনী বা শ্রীদেবী বানিয়ে, কিংবা অসুরকে আমজাদ খান বানিয়ে আমরা ছিনিমিনি খেলতে চাই না।’ অন্যদিকে মধ্য কলকাতার ট্যাংরা ঘোলপাড়া সার্বজনীন দুর্গোৎসবের এবার ১০৫ বছর পূর্তি হচ্ছে।

পুজো কমিটির সভাপতি এবং বিশিষ্ট রাজনৈতিক নেতা প্রমথেশ সেন আক্ষেপ করে বলেন, এই বাংলায় মা দুর্গার কয়েকটা পাষণ্ড ছেলেমেয়েও আছে। তারা মা দুর্গার পুজো আার ভাবমূর্তি নিয়ে ছ্যাবলামি করে। পুজো মণ্ডপ শৈল্পিক হওয়া উচিত। কিন্তু শিল্পের নামে মূল ঐতিহ্য নষ্ট করা নয়। প্রমথেশবাবু আরও বলেন, ‘যা ঐতিহ্যের সঙ্গে খাপ খায় না, তা কার্যত অশালীন। যারা দেবী মা’কে আবর্জনার স্তূপে রাখতে চান তাঁরা রাখুন। আমরা মা’কে দেবালয়ে রাখছি এবং রাখবো।’

Advertisement