• facebook
  • twitter
Wednesday, 13 August, 2025

পিছিয়ে মোদীর ভারত

শ্রমিকদের অধিকার লঙ্ঘনের মাপকাঠিতে আইটিইউসি-র রিপোর্টে মোট পাঁচটি বিভাগে বিশ্বের বিভিন্ন দেশকে ভাগ করা হয়েছে।

প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র

এদেশের শ্রমজীবী মানুষের অবস্থা এক কথায় ‘শোচনীয়’। কথাটা বিরোধী দলগুলির সমালোচনা নয়। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সমীক্ষা একথা জানিয়েছে। খাতায়-কলমে শ্রম আইন থাকলেও, বাস্তবে শ্রমিকদের কোনও অধিকার প্রায় নেই বললেই চলে। বিশ্বের ১৫১টি দেশের মধ্যে শ্রমিকদের প্রাপ্ত অধিকারের নিরিখে ভারত ‘সব থেকে পিছিয়ে থাকা’ দেশগুলির মধ্যে রয়েছে। সম্প্রতি ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড ইউনিয়ন কনফেডারেশন (আইটিইউসি)-র প্রকাশ করা শ্রমিক অধিকার সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক রিপোর্টে উঠে এসেছে এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য। ভারতের শ্রমজীবী মানুষ কী অসহনীয় পরিবেশের মধ্যে কাজ করতে বাধ্য হচ্ছেন, তার মর্মান্তিক চিত্র তুলে ধরা হয়েছে এই রিপোর্টে। দেশের অধিকংশ শ্রমজীবী মানুষের ইউনিয়ন করার অধিকার নেই। অন্যান্য দেশে শ্রমিকদের যতটুকু সামান্য অধিকার অতি অবশ্য প্রাপ্য, তার প্রায় কিছুই নেই এদেশে।

অথচ, ‘মন কি বাতে’ অনুষ্ঠানে বারে বারে বিকশিত ভারতের স্বপ্ন পূরণে দেশের শ্রমজীবী মানুষকে ‘কর্মযোগী’ হতে পরামর্শ দেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। বিজেপির ‘সব কা সাথ, সব কা বিকাশ’-এ নাকি সত্তর বছরের মধ্যে এই প্রথম দেশের শ্রমজীবী মানুষের মুখে হাসি ফুটতে চলেছে।

শ্রমিকদের অধিকার লঙ্ঘনের মাপকাঠিতে আইটিইউসি-র রিপোর্টে মোট পাঁচটি বিভাগে বিশ্বের বিভিন্ন দেশকে ভাগ করা হয়েছে। এক, যে সমস্ত দেশে অধিকার লঙ্ঘনের প্রবণতা খুবই সামান্য। দুই, যে সমস্ত দেশে বারংবার অধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটে থাকে। তিন, যেখানে নিয়মিত অধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটে। চার, যেখানে অধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা স্বাভাবিক বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। পাঁচ, যেখানে শ্রমিকদের অধিকারের কোনও নিশ্চয়তা নেই। এই পঞ্চম বিভাগে আবার দুই ধরনের দেশ রয়েছে। এক, যেখানে গৃহযুদ্ধ বা অন্য কোনও কারণে আইনের শাসন ভেঙে পড়ায় শ্রমিক অধিকারের কোনও আইনি ভিত্তি নেই। দুই, যে সমস্ত দেশে আইনের শাসন অব্যাহত থাকলেও, শ্রমিকদের অধিকার রক্ষার কোনও আইনি নিশ্চয়তা নেই। ভারত এই বিভাগের অন্তর্ভুক্ত বলে জানিয়েছে আইটিইউসি-র রিপোর্ট। এই রিপোর্ট আরও জানিয়েছে, মোদীর ‘বিকশিত ভারত’ শ্রমিক অধিকারের মাপকাঠিতে সব থেকে পিছিয়ে থাকা দেশগুলির মধ্যে রয়েছে। শ্রমিকদের অধিকার রক্ষায় মোদী সরকার বারংবার ব্যর্থ হয়েছে। বেশ কিছু ক্ষেত্রে শ্রমিক অধিকার লঙ্ঘনে রাষ্ট্রের তরফে প্রত্যক্ষ মদত দেওয়ার ঘটনাও ঘটেছে বলে এই রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে। প্রতিনিয়ত শ্রমিকরা মালিকপক্ষের অসহনীয় অত্যাচার ও রাষ্ট্রীয় দমনের মুখোমুখি হচ্ছেন। ভারতের মতো ‘পঞ্চম বিভাগে’ থাকা দেশগুলোয় শ্রমিকদের কার্যত দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গিয়েছে।

ইউনিয়নের অধিকারের পাশাপাশি, শ্রমিকদের ধর্মঘট করার অধিকারেও বড় রকমের দমন চালানো হচ্ছে। এই প্রসঙ্গে ইউনিয়নের স্বীকৃতি ও ন্যায্য মজুরির দাবিতে তামিলনাড়ুর ৯০০ জন স্যামসাং শ্রমিকদের ধর্মঘট এবং তা দমনে সেখানকার সরকারের শ্রমিকদের উপর জোরজুলুমের ঘটনাও আইটিইউসি-র রিপোর্টে উঠে এসেছে। সার্বিকভাবে দেশে শ্রমিকদের যে কোনও আন্দোলন বা বিক্ষোভকে ‘অপরাধমূলক কাজ’ হিসাবে চিহ্নিত করার এক রাজনৈতিক সংস্কৃতি তৈরি হয়েছে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে আইটিইউসি। প্রান্তিক অংশের শ্রমিকদের ন্যূনতম কোনও অধিকার না থাকার সমস্যাও উঠে এসেছে আইটিইউসি-র রিপোর্টে। এর মধ্যে বিশেষভাবে সংকটজনক পরিস্থিতির মুখে পড়েছেন ভারতের পরিযায়ী শ্রমিক, বিড়ি শ্রমিক ও গৃহ পরিচারক-পরিচারিকারা। কোনও আইনি নিরাপত্তা কিংবা সরকারি পরিষেবার অধিকার তাঁদের নেই।

একুশ শতকেও বিশ্বের তথাকথিত চতুর্থ অর্থনীতিতে যে এখনও কার্যত ‘দাস শ্রমিকদের’ অস্তিত্ব রয়েছে এই ভারতেই, তা নিয়ে সমীক্ষকরা বিস্ময় প্রকাশ করেছেন।