• facebook
  • twitter
Wednesday, 30 July, 2025

মধ্যপন্থী বিজেপি সভাপতি

গত বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে ভোটের ময়দানে নেমেছিল। এই দলের লক্ষ্য ছিল শাসক তৃণমূল কংগ্রেসকে উৎখাত করে ক্ষমতা দখল করা।

প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র

অবশেষে রাজ্য বিজেপির সভাপতি নির্বাচিত হলেন রাজ্যসভার সাংসদ শমীক ভট্টাচার্য। এতদিন তিনি দলের প্রধান মুখপাত্র হিসেবে কাজ চালাচ্ছিলেন। সভাপতি হিসেবে তাঁর নির্বাচন সর্বসম্মত। কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী সুকান্ত মজুমদার দলের অস্থায়ী সভাপতি হিসেবে এতদিন দলের কাজ চালাচ্ছিলেন— শাসক দলের দুর্নীতি এবং নানা অনৈতিক কাজের বিরুদ্ধে আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশ নিচ্ছিলেন।

এখন দেখার নতুন সভাপতি রাজ্য নেতাদের মধ্যে যে সংহতির সমন্বয়ের অভাব, তা তিনি কী করে মেটান এবং বিজেপিকে একটি ঐক্যবদ্ধ দল হিসেবে তৈরি করেন। সভাপতি নির্বাচিত হয়ে নতুন সভাপতি তাঁর ভাষণে যা বললেন, তা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বললেন, বিজেপি মুসলমানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেনি। কারণ তাঁরাও রাজ্যের নাগরিক এবং সব অধিকার প্রাপ্ত। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী হিন্দুত্বের প্রচার যেভাবে চালাচ্ছিলেন, তাকে তেমন গুরুত্ব না দিয়ে শমীক ভট্টাচার্য একটি মধ্যপন্থা অবলম্বন করার পক্ষপাতি। অর্থাৎ তাঁর বক্তব্য থেকে এটাই প্রতীয়মান হয়, শুধু হিন্দু হিন্দু বলে চিৎকার করে কোনও লাভ হবে না। ‘আমরা সবাইকে নিয়েই চলব।’ বললেন যে ছেলেটি পাথর ছুড়ল তার হাতে বই ধরিয়ে দেওয়া তাদের প্রধান লক্ষ্য। তিনি বলেন, বিজেপি চায় দুর্গাপুজোর বিসর্জন এবং মহরমের তাজিয়া একসঙ্গে বের হবে। যে তলোয়ার হাতে ধরে আছে, তা তার হাত থেকে সরিয়ে কলম ধিরিয়ে দিতে হবে। সুবক্তা শমীক ভট্টাচার্য দলকে এখন কীভাবে চালান, তা দেখার জন্য দলের নেতা-কর্মীরা উৎসাহী।

রাজনৈতিক মহলের বক্তব্য, বিজেপির হিন্দুত্বের প্রচারের ফলে বাংলার সংখ্যালঘুরা আরও বেশি একত্রিত হয়ে তৃণমূলের পক্ষে ভোট দিচ্ছে। সুতরাং বিজেপি শুধু হিন্দুত্বের দোহাই দিয়ে রাজ্যের মানুষের ভোট চায় না। পশ্চিমবঙ্গে পরবর্তী বিধানসভার নির্বাচন ২০২৬-এ। সুতরাং তার আগে বিজেপি পূর্ণ সময়ের জন্য সভাপতি পেল তা একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা। এখন দেখার নতুন সভাপতি কীভাবে দলকে সংগঠিত ও শক্তিশখালী করে তোলেন শাসক দল তৃণমূলের বিরুদ্ধে লড়াই করতে। বিজেপি ধর্মের দোহাই দিয়ে মানুষের সমর্থন চাইছে যা দলের বিরুদ্ধে গেছে। দলে যেমন শৃঙ্খলার অভাব, তেমনই সাংগঠনিক শক্তিও জটিল। যার জন্য শক্তিশালী শাসক দলের বিরুদ্ধে পেরে উঠছে না। নতুন সভাপতি দলকে কীভাবে শক্তিশালী করে তোলেন নির্বাচনের আগে তাই এখন দেখার।

গত বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে ভোটের ময়দানে নেমেছিল। এই দলের লক্ষ্য ছিল শাসক তৃণমূল কংগ্রেসকে উৎখাত করে ক্ষমতা দখল করা। ব্যাপক প্রচারও চালিয়েছিল শাসক দলের বিরুদ্ধে। কিন্তু ভোটের ফলাফল বের হলে দেখা গেল বিজেপির ঝুলিতে মাত্র ৭৭ আসন। সুতরাং ক্ষমতা দখল করার স্বপ্ন অধরাই থেকে গেল। কিন্তু আশ্চর্যের ব্যাপার এখন বিধানসভায় বিজেপির বিধায়ক সেই ৭৭ জন বিধায়ক নেই। বেশ কয়েকজন বিধায়ক শাসক দলে যোগ দিয়েছেন— তাঁদের বক্তব্য, শাসক দলে যোগ দিলে মানুষের ‘সেবা’ করা যায়। কারণ এই দলের হাল ধরে আছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, যিনি অনেক জনহিতকর প্রকল্প বাস্তবায়িত করে রাজ্যের মানুষের মঙ্গল করেছেন। সম্প্রতি জলপাইগুড়ির বিজেপি নেতা ও কেন্দ্রীয় রাষ্ট্রমন্ত্রী জল বার্লা তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন, যা বিজেপির কাছে অপ্রত্যাশিত বলে মনে হয়েছে। দলে গোষ্ঠীকোন্দল এবং দলাদলির জন্য তিনি দল ছেড়েছেন বলে বলা হয়েছে। সুতরাং বিজেপি এখন একটি ছন্নছাড়া দল, যে দলে শৃঙ্খলা ও নেতাদের মধ্যে সমন্বয়ের বড় অভাব। তার পরিপ্রেক্ষিতে দলের নতুন সভাপতি দলকে এখন কতটা সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী এবং রাজ্য বিজেপি নেতাদের একতাবদ্ধ করতে পারেন, তাই এখন দেখার।

ইতিমধ্যে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ রাজ্যে এসে আগামী বিধানসভা নির্বাচনের জন্য রাজ্য বিজেপি নেতাদের এখন থেকেই ঝাঁপিয়ে পড়ার নির্দেশ দিয়ে গেছেন। তারা তৃণমূলের দুর্নীতির কথা মানুষের কাছে তুলে ধরার উপদেশ দিয়ে গেছেন। কিন্তু দল তার জন্য কতটা প্রস্তুত, তা তাঁরা জানেন না। ছাব্বিশের নির্বাচনে বিজেপি ক্ষমতায় আসবে তৃণমূলকে সরিয়ে সেই আশা তাঁরা জাগিয়ে দিয়ে গেছেন। কিন্তু বিজেপির রাজ্য নেতারা এখনও একতাবদ্ধ হয়ে উঠতে পারেননি। দলের অপর এক নেতা সদ্য বিবাহিত দিলীপ ঘোষও দলে থেকেও দলে নেই। দলের নতুন সভাপতি সেই সমন্বয়ের কাজটা করতে পারেন কিনা, তাই এখন দেখার।