• facebook
  • twitter
Saturday, 6 December, 2025

হিন্দুত্বের জুজু দেখিয়ে মমতাকে রোখা যাবে না

সব ক্ষেত্রেই জয় হয়েছে জোড়াফুলের

ফাইল চিত্র

প্রবীর ঘোষাল

বাংলার মতো রাজ্যে হিন্দুত্বের ইস্যু কি জনমনে দাগ কাটতে পারবে? কিছুদিন ধরে রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল মূলত এই ইস্যুতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তৃণমূল কংগ্রেসকে লাগাতার আক্রমণ করে চলেছে। বিজেপি বোঝাতে চাইছে যে, তারা এদেশের হিন্দুত্বের ইজারাদার। বাকিরা সংখ্যালঘুদের দালাল। এই ইস্যুতে খুব স্বাভাবিক কারণে তর্ক-তরজা চরমে উঠেছে। পদ্ম শিবির যে আগামী বছর বাংলায় বিধানসভা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে হিন্দুত্বের রাজনীতিকে অস্ত্র করতে চাইছে, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।

Advertisement

কিন্তু তাতে কি বাংলায় বিজেপির বন্ধ্যা দশা ঘুচবে? গত বছর লোকসভা নির্বাচনেও গেরুয়া শিবিরের মূল ইস্যু ছিল হিন্দুত্ব। হিন্দুদের আবেগে সুড়সুড়ি দিতে তারা মহা সাড়ম্বরে অযোধ্যায় রামমন্দিরের উদ্বোধন করেছিল। লোকসভা নির্বাচনের কয়েকমাস আগে (২২ জানুয়ারি, ২০২৪) তড়িঘড়ি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ওই মন্দিরের ফিতে কাটেন। কার্যত মন্দিরের নির্মাণের কাজ অসমাপ্ত রেখেই বিগ্রহ প্রতিষ্ঠা করা হয়। ভোটের জন্যই ছিল এই তাড়াহুড়ো। কিন্তু সেই রাজসূয় যজ্ঞের ফল কি পদ্মফুলের পক্ষে গিয়েছিল? মোটেই না। লোকসভায় বিজেপির নিরঙ্কুশ গরিষ্ঠতা মেলেনি। এনডিএ শরিকদের চড়া দাম দিয়ে দিল্লিতে তাদের সরকার গড়তে হয়েছে। যে যোগী রাজ্যে অযোধ্যার মন্দির নির্মাণ হয়েছে, সেখানেই তো গেরুয়া শিবিরের মস্ত বড় বিপর্যয় হয়েছে লোকসভা ভোটে। তাদের প্রধান প্রতিপক্ষ সমাজবাদী পার্টি পেয়েছিল ৩৭টি আসন আর সহযোগী কংগ্রেসের ছিল ৬টি আসন। বিজেপির জুটেছিল ৩৩টি আসন। অর্থাৎ বিরোধী পক্ষের চেয়ে ১০টি আসনে পিছিয়ে ছিল বিজেপি।

Advertisement

লোকসভার ভোটের পর বিজেপি এবং তাদের সহযোগীদের মুখরক্ষা হয়েছে মহারাষ্ট্র এবং হরিয়ানার বিধানসভার নির্বাচনে। দিল্লিও জয় করেছে তারা। দু’টি ফ্যাক্টর এইসব ভোটে বিজেপির পক্ষে গিয়েছে। প্রথমত, মমতার মস্তিষ্কপ্রসূত ‘লক্ষ্মীর ভাণ্ডার’কে অন্য নামে বিজেপি চালিয়ে দিয়েছে। মহিলাদের ভোট এভাবেই তারা ঘরে টেনেছে। আর দিল্লিতে স্রেফ ভোট কাটাকাটি পদ্ম শিবিরের মুখরক্ষা করেছে। কংগ্রেস এবং আপ নিজেদের মধ্যে লড়ে বিজেপির জয়ের পথ সুগম করেছে।

বাংলায় বিগত বিধানসভা এবং লোকসভা ভোটেও বিজেপি হিন্দুত্ব নিয়ে হইচই কম করেনি। কিন্তু সব ক্ষেত্রেই জয় হয়েছে জোড়াফুলের। এমনকি গত বছর যেসব বিধানসভা কেন্দ্রে উপনির্বাচন হয়েছে, সর্বত্রই বিরোধীপক্ষকে উড়িয়ে জিতেছে তৃণমূল কংগ্রেস। বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব বাংলা নিয়ে আর বিশেষ মাথা ঘামাতে চাইছে না। দলের রাজ্য ইউনিটকে তারা খরচের খাতায় ফেলে দিয়েছে। আসলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জনপ্রিয়তা এবং উন্নয়নের জোয়ারে সব ভোটে ভেসে যাচ্ছে বিরোধীরা। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা তাই বলে দিচ্ছেন, হিন্দুত্বের কার্ড দেখিয়ে মমতাকে রোখা যাবে না। বাংলার মানুষ ধর্মের রাজনীতিকে বিশ্বাস করে না।

Advertisement