কোবিন্দ কমিটি চায়

Written by SNS March 18, 2024 1:35 pm

প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের নেতৃত্বে গঠিত কমিটি সম্প্রতি ‘এক দেশ এক নির্বাচন’ করার পথেই রায় দিল৷ কমিটি গঠন করেছিল মোদি সরকার৷ যদিও যখন এই ইসু্যটির ওপর এই কমিটি নিয়োগ করে তখন দেশের বিরোধী দলগুলি আপত্তি জানিয়েছিল৷ তারা বলেছিল এটা অসাংবিধানিক৷ তবুও কমিটি তাদের প্রতিবাদ অগ্রাহ্য করে এই কমিটি নিয়োগ করেছিল৷ বিরোধী দলগুলির আপত্তি ছিল লোকসভা নির্বাচনের সঙ্গে সমস্ত রাজ্যগুলির নির্বাচন একসঙ্গে করা যায় না, পরিকাঠামোগত অসুবিধা রয়েছে৷ এটি যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর বিরোধী৷ সংবিধান বিরোধী৷

রিপোর্টের মূল বিষয়গুলি প্রকাশ করে প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি বলেছেন, দেশের ৩২টি রাজনৈতিক দল লোকসভা ভোটের সঙ্গে রাজ্য বিধানসভাগুলির ভোট একসঙ্গে করার জন্য সায় দিয়েছে৷ এর মধ্যে ২৬টি দল ভারতীয় জনতা পার্টির নেতৃত্বাধীন এনডিএ-র শরিক৷ তাদের মত ‘এক দেশ এক নির্বাচন’-এর পক্ষে৷ মোট ১৫টি রাজনৈতিক দল ‘এক দেশ এক নির্বাচন’-এর বিপক্ষে মতপ্রকাশ করেছে৷ তারা বলেছে, লোকসভা ভোটের সঙ্গে অন্য রাজ্যগুলির ভোট একসঙ্গে করা যায় না৷ তার জন্য কোনও পরিকাঠামো তো নেইই, বিস্তর অসুবিধার সম্ুখীন হতে হবে৷ কেন্দ্রের বিজেপি সরকার যে ‘এক দেশ এক নির্বাচন’-এর প্রবক্তা, সেই সরকারও বিষয়টি যে বিধিসম্মত নয় তা জানে৷ তবু কমিটি নিয়োগ করেছিল৷ যে ১৫ দল ‘এক দেশ এক নির্বাচন’-এর বিপক্ষে মতপ্রকাশ করেছে, তার মধ্যে দশটি দলই বর্তমানে বিজেপি-বিরোধী জোটের শরিক যদিও জোটের কোনও কার্যকলাপ এখন আর চোখে পড়ে না৷

এই রিপোর্ট প্রকাশের পর যে সব বিরোধী দলগুলি ‘এক দেশ এক নির্বাচন’-এর বিপক্ষে মত দিয়েছিল, তারা ক্ষোভে ফেটে পড়ে৷ তাদের বলতে শোনা যায়, আসলে প্রধানমন্ত্রী চান ‘এক দেশ শূন্য নির্বাচন’, যা কখনও হতে পারে না৷ নরেন্দ্র মোদি চান যে কোনও উপায়ে সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে ক্ষমতায় টিকে থাকতে৷ কিন্ত্ত ‘এক দেশ এক নির্বাচন’ ব্যবস্থা চালু হলে সংবিধান ধ্বংস হয়ে যাবে, বাবাসাহেব আম্বেদকরের স্মৃতি মুছে যাবে৷ বিজেপি সরকারের লক্ষ্য দেশে একটিই নির্বাচন হবে— আর কোনও নির্বাচন হবে না৷

বিরোধীদের আপত্তি ছিল ‘এক দেশ এক নির্বাচন’ শুধু অসাংবিধানিক নয়, সরকারের একসঙ্গে লোকসভা ও বিধানসভা নির্বাচন করার মতো যে ব্যাপক ব্যবস্থার প্রয়োজন হবে, তা নেই৷ হয়ত একসঙ্গে ভোট হলে অর্থের কিছু সাশ্রয় হবে৷ লোকসভার ভোটের সঙ্গে বিধানসভা ভোট করতে গেলে যে বিধানসভার ভোট সম্প্রতি হয়েছে তার মেয়াদ ফুরনো আগে ভেঙে দেওয়া হবে৷ যা জনগণের বিরুদ্ধাচরণ বলে গণ্য হবে৷ তাছাড়া বিধানসভার ভোটের আগে তা ভেঙে দেওয়া শুধু অসাংবিধানিক নয়, মানুষের সঙ্গে বিশ্বাসভঙ্গের সামিল৷ রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, দেশ স্বাধীন হওয়ার পর লোকসভা নির্বাচনের সঙ্গে বিধানসভারগুলি নির্বাচন হয়নি৷ কারণ এটা হওয়া সম্ভবপর নয়৷ বিরোধীদের ঘোরতর আপত্তি সত্ত্বেও মোদি সরকার এই ‘এক দেশ এক নির্বাচন’-এর ব্যাপারে মতামত জানতে কমিটি গঠন করল প্রাক্তন রাষ্ট্রপতির নেতৃত্বে৷

কমিটি যুক্তি দিয়েছে, সংখ্যাগরিষ্ঠতার অভাব এবং রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণেই মেয়াদ থাকতেই বিধানসভা ভেঙে দেওয়া হবে একসঙ্গে ভোট করার জন্য, এই যুক্তি খাটে না৷ কারণ একটি বিধানসভার নির্বাচন করতে অনেক কাঠখড় পোড়.াতে হয়৷ নানা ব্যবস্থা অবলম্বন করতে হয়৷ প্রশ্ন, এখন যে লোকসভা ভোট হতে যাচ্ছে তার সঙ্গে সম্প্রতি যে চারটি রাজ্যের বিধানসভার নির্বাচন সম্পন্ন হল এবং সংখ্যাগরিষ্ঠতার নিরিখে সরকার গঠিত হল, তা ভেঙে দেওয়া যায়? সেটা তো সম্পূর্ণ অসাংবিধানিক, যদি আমাদের সংবিধান মানতে হয়৷ সুতরাং রামনাথ কোবিন্দের রিপোর্টের সুপারিশ কার্যকর করা যায় না, বিধিসম্মতও নয়৷ দেশের মানুষ তা মেনে নেবে না৷ কারণ তারা অনেক চিন্তাভাবনা করে তাদের পছন্দের প্রার্থীদের নির্বাচন করে বিধানসভায় পাঠান তাদের সমস্যার কথা সরকারের কাছে তুলে ধরতে৷

সংবিধানে বলা হয়েছে, লোকসভা ও বিধানসভাগুলির মেয়াদ পাঁচ বছরের জন্য হবে৷ সেটাই মানা উচিত৷ যদিও পাঁচ বছরের কম হবে না এমন কথা বলা নেই৷ লোকসভার ভোটের সঙ্গে বিধানসভাগুলির মেয়াদ থাকতেও তা ভেঙে দেওয়া শুধু অগণতান্ত্রিক নয়, রীতিবিরুদ্ধ৷ যা কখনও মানা যায় না৷ কমিটি সুপারিশ করেছে ২০১৯ সাল থেকে ‘এক দেশ এক নির্বাচন’ চালু করতে৷ সেই সঙ্গে লোকসভা ও বিধানসভাগুলির ভোট চালু করতে প্রয়োজনীয় আইন প্রণয়ন করা এবং পরিকাঠামোর উন্নতি করণ৷

লোকসভা ভোটের সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই ভেঙে দিতে হবে৷ এ রাজ্যের বিধানসভার ভোট ২০২৬ সালে৷ কিন্ত্ত পরবর্তী লোকসভা ভোট ২০২৯ সালে হলে দু’বছর মেয়াদ থাকতেই বিধানসভা ভাঙতে হবে৷ অনেক রাজ্যেই অকাল বিধানসভা নির্বাচন হবে৷ ওই কমিটির সুপারিশ কার্যকরী হলে ২০২৯ সালে লোকসভা ভোটের সঙ্গে আবার বিধানসভাগুলির ভোট করতে হবে৷ কতটা বাস্তবসম্মত তা?