মধ্যপ্রদেশের দুই সাংবাদিক অমরকান্ত চৌহান এবং শশীকান্ত জাটভ মধ্যপ্রদেশের ভিন্দ জেলায় পুলিশ ও বালি মাফিয়া চক্রের দেদার বেআইনি বালি পাচারের সংবাদ প্রকাশ করায় তাঁদের উপর পুলিশি দমনপীড়ন শুরু হয়। বেআইনি বালি পাচারের সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পর সাংবাদিকদের পুলিশের দপ্তরে নিয়ে এসে বেধড়ক পেটানো হয়। এমনকি কয়েকজন সাংবাদিককে নগ্ন করেও পেটানো হয়েছে এবং প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হয়েছে। এর পরে ওই দুই সাংবাদিক ভয়ে দিল্লি পালিয়ে এসে দিল্লি হাইকোর্টে সুরক্ষার আবেদন জানালে আদালত তাঁদের দু’মাসের জন্য সুরক্ষার নির্দেশ দেয়। অমরকান্ত চৌহান স্বরাজ এক্সপ্রেস নিউজ চ্যানেলের ভিন্দ ব্যুরোর চিফ। মধ্যপ্রদেশ পুলিশ ও বালি মাফিয়া চক্রের বেআইনি বালি পাচারের কারবার প্রকাশ করায় পুলিশ সেই সংবাদ বন্ধ করতে ওই দুই সাংবাদিকের নামে মিথ্যা মামলা দিয়ে গ্রেপ্তার করার ষড়যন্ত্র করে।
এদিকে মধ্যপ্রদেশের দুই সাংবাদিকের উপর পুলিশের নির্যাতন নিয়ে ইতিমধ্যে মধ্যপ্রদেশের ডিজিপি-র রিপোর্ট তলব করেছে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন। এই প্রসঙ্গে ডিজিপি-কে নোটিশও পাঠিয়েছে কমিশন। কমিশন জানিয়েছে, মধ্যপ্রদেশে সাংবাদিকদের উপর পুলিশের নির্যাতন নিয়ে বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করেছে প্রেস ক্লাব অব ইন্ডিয়া। তাদের তথ্যের ভিত্তিতে স্বতঃপ্রবৃত্ত হয়ে এ নিয়ে তদন্তের উদ্যোগ নিয়েছে কমিশন। কমিশন জানাচ্ছে, প্রেস ক্লাব অব ইন্ডিয়া তাদের প্রেস বিবৃতিতে মধ্যপ্রদেশের পুলিশের সাংবাদিক নির্যাতন নিয়ে যে তথ্য প্রকাশ করেছে, তা ভয়াবহ। যদি তা সত্যি হয়, তবে তা হবে পুলিশের সাংবাদিকের মানবাধিকার লঙ্ঘনের চরম ঘটনা।
দিল্লি পালিয়ে এসে দুই সাংবাদিক পুলিশের মিথ্যা অভিযোগের গ্রেপ্তারি এড়াতে সুপ্রিম কোর্টে আগাম জামিনের আবেদন করেন। মধ্যপ্রদেশ সরকার ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কাছ থেকে এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে চেয়েছে আদালত। তবে মধ্যপ্রদেশ ও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক থেকে এখনও কোনও রিপোর্ট জমা পড়েনি।
মধ্যপ্রদেশে পুলিশ ও মাফিয়া চক্রের দুর্নীতি ফাঁস করায় দুই সাংবাদিকের উপর পুলিশি দমনপীড়ন নিয়ে রাজ্যের হাইকোর্টে আবেদন করার নির্দেশ দিয়ে সুপ্রিম কোর্ট তাঁদের দুই সপ্তাহের সাময়িক সুরক্ষা মঞ্জুর করেছে। বিচারপতি প্রশান্তকুমার মিশ্র এবং বিচারপতি মনমোহনের এজলাসে শুনানির সময় বিচারপতিরা সাংবাদিকদের আগাম জামিনের আবেদন শুনতে রাজি হননি। তাঁরা জানান, রাজ্যের পুলিশের বিরুদ্ধে দমনপীড়ন সংক্রান্ত অভিযোগ প্রাথমিকভাবে হাইকোর্টেই জানাতে হবে।
মধ্যপ্রদেশের পাশাপাশি বিজেপি শরিক তেলুগু দেশমের অন্ধ্রপ্রদেশের চন্দ্রবাবু নাইডু সরকারও সাংবাদিকদের কণ্ঠরোধ করার চেষ্টা করছে। পুলিশ হায়দরাবাদে প্রবীণ তেলুগু সাংবাদিক কোমামিনেনি শ্রীনিবাস রাওকে গ্রেপ্তার করেছে। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি রাজ্যের নতুন রাজধানী অমরাবতী নিয়ে অবমাননামূলক মন্তব্য করেছেন। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, কয়েকদিন আগে তেলুগু চ্যানেলে এক আলোচনা পরিচালনা করেছিলেন শ্রীনিবাস রাও। আলোচনায় অংশ নিয়েছিলেন তেলুগু সাংবাদিক ভিভিআর কৃষ্ণ রাজু সহ অনেকে। একটা আলোচনায় নানা মতামত আসতে পারে। কোনও মন্তব্য কারও পছন্দ নাও হতে পারে। তার জন্য পরিচালনায় থাকা সাংবাদিককে গ্রেপ্তার করা যায় না। স্বাধীনভাবে মতামত জানানোর অধিকার সকলেরই রয়েছে। এই গ্রেপ্তারি অন্যায় তো বটেই, এটা দেশের সাংবাদিক কণ্ঠরোধের এক বিপজ্জনক প্রবণতা।
আবার মণিপুরেও অস্থির পরিস্থিতিতে বারে বারে আক্রান্ত হচ্ছে সংবাদমাধ্যম। সোমবার ৯ জুন সম্পাদকীয় কলম ফাঁকা রেখে ঘটনার অভিনব প্রতিবাদ জানাল মণিপুরের প্রায় সমস্ত প্রথম সারির সংবাদপত্রগুলি। ওই ফাঁকা জায়গায় বড় বড় অক্ষরে শুধু লেখা ‘এএমডব্লুজেইউ ও ইজিএম সাংবাদিকদের লাগাতর নিগ্রহ ও হুমকির নিন্দা করছে।’ কোয়াকেইথেলে অঞ্চলে সংবাদ সংগ্রহ করতে গেলে এক টেলিভিশন চ্যানেলের দুই সাংবাদিককে কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানরা বেধড়ক মারধর করেন বলে অভিযোগ। এই ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে এডিটরস্ গিল্ড মণিপুর (ইজিএম) এবং অল মণিপুর ওয়ার্কিং জার্নালিস্টস ইউনিয়ন। সাংবাদিক সংগঠনগুলির পক্ষ থেকেসাংবাদিকদের উপর হামলায় অভিযুক্তদের উপযুক্ত শাস্তির দাবি জানানো হয় এবং সম্পাদকীয় কলম ফাঁকা রেখে প্রতিবাদের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।