কাজ পাওয়ার উপযুক্ত প্রথাগত শিক্ষা এবং প্রশিক্ষণই নেই দেশের যুব সমাজের একটা বড় অংশের। ১৫ থেকে ২৪ বছর বয়সী যাঁদের শিক্ষা, কর্মসংস্থান এবং প্রশিক্ষণ নেই, তাঁদের ‘নিট’ অর্থাৎ ‘নট ইন এডুকেশন, এমপ্লয়মেন্ট অ্যান্ড ট্রেনিং’ আখ্যা দিয়ে থাকে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও)। প্রতি বছরই এই সংক্রান্ত পরিসংখ্যান প্রকাশ করে থাকে আইএলও। সাম্প্রতিক রিপোর্টে আইএলও জানিয়েছে, ভারতে নিটের সংখ্যা উদ্বেগজনকভাবে বেশি। সংখ্যাটা প্রায় ২৫ শতাংশ। উদ্বেগজনক, কারণ ২০১৮সালে এই সংখ্যা ছিল অনেকটাই কম। ২০ শতাংশ। কিন্তু তারপর থেকে বাড়তে থাকে। কোভিডের কারণে যে এই প্রবণতা বাড়বে, সেটা ছিল প্রত্যাশিত। কিন্তু কোভিডকাল কেটে যাওয়ার পরও দু’বছর অতিক্রান্ত। এই সময়ের মধ্যে পরিস্থিতির উন্নতি তো হয়ইনি, উল্টে কর্মসংস্থানহীন, শিক্ষাহীন এবং প্রশিক্ষণহীন এই যুবসমাজের সংখ্যা আরও বেড়ে আগামী ৫ বছরের মধ্যে প্রায় ২৮ থেকে ৩০ শতাংশও হয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
ইন্টারন্যাশনাল লেবার অর্গানাইজেশনের এই রিপোর্টকে উল্লেখ করে অর্থ, বাণিজ্য, স্কিল বা দক্ষতা উন্নয়ন মন্ত্রককে দ্রুত একটি দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা করতে বলেছে নীতি আয়োগ। জানা গিয়েছে, এই প্রবণতায় রাশ টানার লক্ষ্যে এখন চাকরির ক্ষেত্রেও প্রশিক্ষণে বেশি জোর দেওয়া হচ্ছে। ইন্টার্নশিপ কর্মসূচি সেই লক্ষ্যেরই অঙ্গ। সেক্ষেত্রে একবার ইন্টার্নশিপে প্রবেশ করলে, চাকরি না পেলেও কাউকে প্রশিক্ষণহীন তকমা দেওয়া যাবে না। আর এইভাবেই আইএলও রিপোর্টে ভারতের অবস্থানের উন্নতি হবে। ২০২৩ সালের রিপোর্টে বলা হয়েছিল, ভারতে যুব সমাজের সামগ্রিক বেকারত্বের হার প্রায় ১৪ শতাংশ। আখা করা হয়েছিল ২০২৫ সালে কমবে। কিন্তু সম্প্রতি আইএলও রিপোর্টে বলা হয়েছে, বেকারত্বের সবথেকে বড় কারণ কাজ করার মতো যোগ্যতা অর্জন করতে পারেন দেশের যুব সমাজের বিপুল অংশ। অর্থাৎ হয় শিক্ষা অথবা স্কিল। দু’টির কোনওটাই নেই। আর সেই কারণে নেই কর্মসংস্থান। স্কিল ডেভলপমেন্ট মন্ত্রককে বলা হয়েছে, শ্রম মন্ত্রকের সঙ্গে সমন্বয় করতে। কর্মোদ্যোগী কর্মসূচিতে আরও বেশি সংখ্যক যুবক-যুবতীকে যুক্ত করতে বলা হচ্ছে রাজ্যগুলিকে।
দেশের কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে বড় ধরনের অবদান রয়েছে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের। এই ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের দৈন্যদশার জন্যই চরম বেকারত্ব। আর এই ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প মোদী ঘনিষ্ঠ ১০টি বৃহৎ একচেটিয়া কারবারির আক্রমণে বিপর্যস্ত। এই একচেটিয়া কারবারিরা দেশের রাজনৈতিক ব্যবস্থাকেও নিয়ন্ত্রণ করছে। ফলে এরা সংগঠিতভাবে আঘাত হানছে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের ওপর। জিএসটি এবং নোট বন্দির ধাক্কায় ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা দেশের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের।
দশ বছর আগে বছরে দু’কোটি চাকরির প্রতিশ্রুতি দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর চেয়ারে বসেকছিলেন নরেন্দ্র মোদী। তারপর দু’দফায় মোট দশ বছরের শাসনকালে তাঁর সরকারের অবদান হল, কেন্দ্রীয়সরকারি চাকরিতে দশ লক্ষ শূন্যপদ তৈরি করা। পাশাপাশি, বেকারত্বের হারে গত ৪৫ বছরের রেকর্ড করে ফেলা। প্রধানমন্ত্রী মোদীই একমাত্র বুক ঠুকে বলতে পারেন, দেশে এখন বেকারদের ৮০ শতাংশই যুবক-যুবতী। এঁদের মধ্যে শিক্ষত বেকারের হার ২০০০ সালে ছিল ৩৫.২ শতাংশ, যা তাঁর সরকারের কৃতিত্বে ২০২২ সালে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬৫.৭ শতাংশে। ঘটনা হল, ভারতে এখন নিরক্ষর মানুষের কাজের সুযোগ বেশি। অসংগঠিত ঠিকা কজের রমরমা। পরিসংখ্যানই বলছে, ২০১২ সালের তুলনায় বেকারের সংখ্যা বেড়েছে তিনগুণ। এটাই মোদীর গ্যারান্টি।