• facebook
  • twitter
Tuesday, 29 April, 2025

অমানবিক, নিকৃষ্টতম

বিরোধীরা আরও বলেন, ভারতে এখন চোর-ডাকাতদের ধরে তাদের হাতকড়া পরানো হয় না। পুলিশ কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে তাদের নিয়ে যায়।

প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র

এ নীতি কেমন নীতি। এই প্রশ্ন সবার। হাতকড়া ও শেকল দিয়ে বেঁধে অবৈধ অভিবাসীদের নিজ দেশে ফেরত পাঠাচ্ছে আমেরিকার ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন। হোয়াইট হাউস বলেছে, যতই এই বিষয়টি নিয়ে হইচই, সমালোচনা হোক না কেন, এইভাবেই ফেরত পাঠানো হবে অনুপ্রবেশকারীদের। হাতকড়া ও পায়ে শেকল পরানো হবে অভিবাসীদের বিমানে চড়ার সময়। হোয়াইট হাউসের এই সময়ের একটি ভিডিও পোস্ট করে দেখানো হল, যাঁরা বিমানে উঠছেন, তাঁদের সবারই হাতকড়া ও পায়ে শেকল। এ নিয়ে বিস্তর সমালোচনা হয়েছে দেশে। এইভাবে অভিবাসীদের আমেরিকা থেকে বিদায় করা অমানবিক— কিন্তু তাতে কিছু যায় আসে না ট্রাম্প প্রশাসনের। যদিও এই অভিবাসীদের কারও মুখ দেখানো হয়নি বা পরিচয়ও গোপন রাখা হয়েছে। তবে এঁরা সকলেই যে অনুপ্রবেশকারী, তা নিয়ে কোনও সন্দেহের অবকাশ নেই। পোস্টে লেখা হয়েছে ‘অবৈধ অভিবাসীদের ফেরত পাঠানোর বিশেষ বিমান।’

হোয়াইট হাউস এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, এ মাসের ৫ তারিখে প্রথম দফায় ১৩৪ জন, পরে আরও দু’টি বিমানে ১১৭ ও ১১২ জন ভারতীয় অবৈধ অভিবাসীদের নিয়ে আমেরিকার সেনাবাহিনীর একটি বিমান অমৃতসর আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। এই অভিবাসীদের হাতকড়া ও পায়ে শেকল দিয়ে বেঁধে নিয়ে আসার ছবি সমাজমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে দেশজুড়ে ক্ষোভ তৈরি হয়। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা এই ভাবে অনুপ্রবেশকারীদের ফেরত পাঠানোর জন্য আমেরিকার সদ্য নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমালোচনা করেন। তাঁরা বলেন, এটা একটি অতি অমানবিক প্রশ্ন— যাকে কোনওভাবেই সমর্থন করা যায় না। হাতকড়া ও পায়ে শেকল দিয়ে না বেঁধেও, তাঁদের বিমানে ফেরত পাঠানো যেত, কেউ পালিয়ে যেত না। তবুও কেন এই অমানবিক প্রথা গ্রহণ করল ট্রাম্প প্রশাসন তার কোনও যুক্তি খুঁজে পাওয়া যায় না।

সম্প্রতি আমেরিকায় সফর ছেড়ে ফিরে এলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তিনি আমেরিকার প্রেসিডেন্টের সঙ্গে দুই দেশের নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন। তাঁর সফরের পর ভাবা হয়েছিল আমেরিকায় অবৈধ বসবাসকারীদের এভাবে ফেরত পাঠানো হবে না। বা ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী এই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেছেন। কিন্তু দেখা গেল সংশ্লিষ্ট বিষয়টি নিয়ে কোনও আলোচনাই হয়নি। আশা করা গিয়েছিল, ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর সফরের পর, আমেরিকার প্রশাসন বিষয়টি নিয়ে কিছুটা নরম হবে। কিন্তু কার্যত কিছুই হয়নি। এবং অভিবাসীদের ফেরত পাঠানোর প্রথা নিয়ে আদতে কোনও পরিবর্তনই হয়নি। বিরোধীরা বলছেন দুই দেশের এবং আন্তর্জাতিক বিষয়টি নিয়ে দুই নেতার মধ্যে অনেক আলোচনা হয়েছে, কিন্তু হাতকড়া ও পায়ে শেকল পরিয়ে অভিবাসীদের ফেরত পাঠানোর বিষয় আলোচনায় স্থান পায়নি— যা আশ্চর্য। তাঁরা বলেন, প্রধানমন্ত্রী নিশ্চয়ই দেখে থাকবেন, এই অমানবিক প্রথা মেনে অনুপ্রবেশকারীদের ফেরত পাঠানো হচ্ছে।

এই অভিবাসীদের মধ্যে একজন সাংবাদিকদের বলেন, বিমানে যাত্রীদের মনে কী প্রতিক্রিয়া হয়েছিল, তা জানার উপায় ছিল না। তবে বিষয়টি যে অমানবিক, তা তাঁরা সবাই মনে করেন। কারণ এই অভিবাসীরা কেউ চোর-ডাকাত নন, যে তাঁদের হাতে কড়া এবং পায়ে শেকল পরতে হবে। কিন্তু প্রতিবাদ করে কোনও লাভ হবে না তা নিশ্চিত জেনে কেউ মুখ খোলেননি। আরও কত ভারতীয় অভিবাসী আমেরিকায় আছেন, তা তিনি জানেন না— তবে সবাইকে ঠিক একইভাবে ফেরত পাঠানো হবে, সে ব্যাপারে তাঁরা নিশ্চিত।

আমেরিকার একজন অফিসার অভিবাসীদের বুঝিয়ে বলেন, তাদের নিরাপত্তার জন্যই এই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। তিনি জানিয়ে দেন, যতই সমালোচনার ঝড় উঠুক, এটাই সঠিক প্রথা, যা মেনে অনুপ্রবেশকারীদের ফেরত পাঠানো হবে।

এইভাবে অভিবাসীদের দেশে ফেরত পাঠানো নিয়ে বিভিন্ন মহলে তীব্র ক্ষোভের সঞ্চার হলেও, কিছু করার নেই। স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীই যখন বিষয়টি নিয়ে আমেরিকার প্রেসিডেন্টের সঙ্গে আলোচনা করেননি, তখন এই অমানবিক প্রথাই হোয়াইট হাউস মেনে চলবে। তার কোনও পরিবর্তন হবে না। দেশের বিরোধী নেতারা বলেছেন, ভারত আমেরিকাকে চাপ দিক এই প্রথার পরিবর্তনের। তাঁরা বলেছেন, এটা আশ্চর্য যে, প্রধানমন্ত্রী উষ্ণ অভ্যর্থনা পেলেন এবং ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে দীর্ঘ আলোচনায় নানা বিষয় উঠে এলো, কিন্তু এই বিষয়টি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ট্রাম্পের সঙ্গে কোনও কথা বললেন না। প্রধানমন্ত্রীও অভিবাসীদের হাতকড়া ও পায়ে শেকল বাঁধার ছবি পত্রপত্রিকায় দেখেন— কিন্তু এখনও তিনি বিষয়টি নিয়ে মুখ খোলেননি। বিরোধীরা তাঁর এই নীরবতাকে মেনে নিতে পারছেন না। আমেরিকা অনুপ্রবেশকারীদের ফেরত পাঠাক, তাতে তাঁদের আপত্তি নেই, কিন্তু তাই বলে হাতকড়া ও পায়ে শেকল বাঁধা অবস্থায়? তাঁদের প্রশ্ন।

বিরোধীরা আরও বলেন, ভারতে এখন চোর-ডাকাতদের ধরে তাদের হাতকড়া পরানো হয় না। পুলিশ কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে তাদের নিয়ে যায়। আমেরিকা অতি প্রভাবশালী দেশ, প্রবল তার ক্ষমতা, তাই ওই দেশ যা করে, যা বলে, তা মেনে নিতে হয়। এই প্রথা অতি নিকৃষ্টতর, অমানবিক।