ভারতের চন্দ্রাভিযান

চন্দ্রযান-২ চাঁদে পৌঁছনাের আগে তার পৃথিবীর কক্ষপথে ১৭ দিন পরিক্রমার যে কর্মসূচি ছিল ইসরাে তা হয়ত কমিয়ে আনার কথা ভাবতে পারে।

Written by SNS Kolkata | July 22, 2019 5:36 pm

চন্দ্রযান-২ (Photo: IANS/ISRO)

সোভিয়েত মহাকাশচারী ইউরি গ্যাগারিন প্রথম মানুষ হিসেবে পৃথিবীর কক্ষপথ পরিক্রমা করার ৫৮ বছর পর এবং মার্কিন মহাকাশচারী নীল আর্মস্ট্রং চাঁদের মাটিতে পা রাখার ৫০ বছর পর ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্র (ইসরাে) খুব হইচই করে রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ ও পাঁচ হাজারেরও বেশি আমন্ত্রিত দর্শকের উপস্থিতিতে গত ১৫ জুলাই ভাের ২টো ৫০ মিনিটে ভারতের দ্বিতীয় চন্দ্রাভিযান হিসাবে চন্দ্রযান-২ উৎক্ষেপনের আয়ােজন করেছিল। কিন্তু নির্ধারিত উৎক্ষেপনের ঠিক ৫৬ মিনিট আগে ক্রায়ােজনিক ইঞ্জিনে ত্রুটি ধরা পড়ায় এটা বাতিল হয়।

যেসব দেশ মহাকাশ অভিযান নিয়ে কাজ করছে তাদের কাছে সাফল্য ও ব্যর্থতা খুবই সাধারণ ব্যাপার, কিন্তু চন্দ্রযান-২ এর উৎক্ষেপনে ব্যর্থতা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মােদির ঘােষণাকে লঘু করে দিয়েছে। দিল্লির লালকেল্লার প্রাকার থেকে সর্বশেষ স্বাধীনতা দিবসের ভাষণে প্রধানমন্ত্রী ঘােষণা করেছিলেন যে ২০২২ সালে স্বাধীনতার ৭৫তম বার্ষিকীতে ভারত মহাকাশে মানুষ পাঠানাের অভিযান করবে। তিন মহাকাশচারীকে ৭ দিনের অভিযানে মহাকাশে পাঠানাের জন্য ইসরাে ১০ হাজার কোটি টাকার এক পরিকল্পনা গ্রহণ করছে।

এখন ঠিক হয়েছে ২২ জুলাই বেলা ২টো ৪৩ মিনিটে চন্দ্রযান-২ উৎক্ষেপন করা হবে। চন্দ্রযান-২ চাঁদে পৌঁছনাের আগে তার পৃথিবীর কক্ষপথে ১৭ দিন পরিক্রমার যে কর্মসূচি ছিল ইসরাে তা হয়ত কমিয়ে আনার কথা ভাবতে পারে। তারপর কক্ষপথ ছেড়ে সে চন্দ্রের কক্ষপথে প্রবেশ করবে। চন্দ্রপৃষ্ঠে অবতরণ ও তার স্থান একই থাকছে।

মনুষ্য অভিযানের জন্য জিএসএলভি মার্ক-৩ কে উৎক্ষেপণ যান হিসাবে বেছে নেওয়া হয়েছে, যাকে চন্দ্রযান-২ এর জন্যও ব্যবহার করা হচ্ছে। চন্দ্রযান-২ চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে নামবে বলে স্থির আছে, যেখানে কোনও দেশ আগে নামেনি। পােলার স্যাটেলাইট লঞ্চ ভেহিকেল (পিএসএলভি) অন্তত ৪৫টি অভিযানে সফল লঞ্চারের ভূমিকা নিয়েছে। কিন্তু জিএসএলভি মার্ক-৩ এর পরীক্ষা এখনও বাকি।

সর্বশেষ স্বাধীনতা দিবসের ভাষণে প্রধানমন্ত্রীর ঘােষণা শুনে ইসরাের প্রাক্তন চেয়ারম্যান জি মাধবন বলেছিলেন, ‘মহাকাশে মানুষ পাঠানাের আগে ভারতকে বহু মাইল হাঁটতে হবে’। মনে হচ্ছে যতটা হজম করা সম্ভব প্রধানমন্ত্রী তার চেয়ে বেশি খেয়ে ফেলেছেন। ইসরাের বিজ্ঞানীরা যতটা বলছেন তিনি শুধু সেই সম্ভাবনাটুকুই তুলে ধরতে পারতেন। জিএসএলভি মার্ক-৩ কে এখন তার দক্ষতার পরিচয় দিতে হবে। মহাকাশযানের উৎক্ষেপণ যান হিসাবে একটা নিরাপত্তা ও বিশ্বাসযােগ্যতার দিকটা তাকে সুনিশ্চিত করতে হবে। এ ব্যাপারে বিশ্বজনীন মান যথেষ্ট কঠোর।

বিগত তিন দশকে ভারতীয় মহাকাশ কর্মসূচিতে উৎক্ষেপণযান প্রযুক্তিকে নিখুঁত করার ব্যাপারে অভূতপূর্ব অগ্রগতি অর্জিত হয়েছে। এ ব্যাপারে আন্তর্জাতিক সহযােগিতা পাওয়ার ব্যাপারে আমেরিকাসহ কিছু কিছু দেশের পক্ষ থেকে সরকারি এবং বেসরকারি বিধিনিষেধ থাকা সত্ত্বেও ভারত এই অগ্রগতি লাভ করেছে। ইসরাের এখনও দুটি সাফল্য অধরা রয়েছে- (১) মহাকাশে মানুষ পাঠানাের অভিযান এবং (২) মহাকাশে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনের মতাে একটি স্থায়ী কেন্দ্র স্থাপন।

বর্তমান আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনটির মালিক হিসাবে পরিচালনা করে থাকে আমেরিকা, রাশিয়া, জাপান, কানাডা ও ইউরােপীয় মহকাশ সংস্থার একটি মিলিত কনসাের্টিয়াম। ইসরাে নিশ্চয় একদিন এই সাফল্য অর্জন করবে, কিন্তু সেটা হবে তার নিজস্ব সময় অনুসারে, কোনও চাপে বা কোনও দলীয় ফায়দার বিচারে নয়।