• facebook
  • twitter
Thursday, 13 February, 2025

প্রজাতন্ত্র নয়, সাধারণতন্ত্র

অফ দ্য পিপল আর বাই দ্য পিপল

প্রতীকী চিত্র

২৬ শেষ জানুয়ারি ভারতবর্ষের প্রজাতন্ত্র দিবস। তাহলে ভারত কি আজও কোনো রাজার প্রজা মাত্র? ওদিকে তো শুনতে পাই পৃথিবীর বৃহত্তম গণতন্ত্র হলো ভারতবর্ষ। তাহলে দেশটি আসলে কী? প্রজাতন্ত্রিক না গণতান্ত্রিক? গণতন্ত্রে পড়েছি সরকার হয়— Of the people, by the people, for the people. আমাদের দেশে তো দেখি সরকার পিপলের কোনো কাজেই লাগে না। অন্যায় হলে বিচার পায় না। বিচারকের ঘরে কিছু ভেট পৌঁছে দিয়ে অপরাধী বেকসুর খালাস পেয়ে যায়। রোগী গরিব হলে ভালো চিকিৎসা পায় না। বেকার চাকরি পায় না। ভোট সামনে এলেই কাগজে বের হয় অমুক সেন্টারে এতো হাজার পদ খালি। তমুক শিল্পের শিলান্যাস করলেন মন্ত্রীমশাই। তাতে এত হাজার বেকারের কর্মসংস্থান হবে। সর্বোপরি এত লক্ষ শিক্ষক পদ খালি। এবার পোস্টাল অর্ডার বাবদ ভোট খরচের একটা অংশ উঠে এলো।

তারপর একদিন হলো পরীক্ষা পরীক্ষা খেলা। প্যানেল তৈরি হলো। যাঁরা ভোটে খাটাখাটনি করবেন, তাঁদের জন্য পদগুলো (বড় জোর শ’খানেক থেকে শ’পাঁচেক) তোলা রইলো। বাকিদের খাতা চপের দোকানে। যাঁরা নির্বাচিত হলেন তাঁরা সরকারি রথে চড়ে নগর শুধু নয় দেশ বিদেশ পরিক্রমা করে বেড়াবেন। বিদেশ থেকে হার্ট, লাংস, হাঁটু, নড়া দাঁত, পড়া চুল, বসা চোয়াল ইত্যাদি সব বদলে আসবেন। ভাত রুটি মুড়ি চিঁড়ের বদলে আপেল আঙুর পেস্তা কাজু কিসমিস খাবেন। আট দশটা ফ্ল্যাট, পনেরো কুড়িটা গাড়ি ও চার পাঁচটি বৈধ অবৈধ বিবাহ করবেন। তাতেও তাঁর মনে হবে ‘অতি অল্প হইলো।’ তিনি বিদেশের ব্যাঙ্ক উপছে পড়বার পর খাটের গদি, ছাদের ট্যাঙ্ক, বালিশের খোল, বাথরুমের চৌবাচ্চা ইত্যাদি জায়গায় ‘কষ্টের’ সঞ্চয় সুরক্ষিত করে রাখবেন। তাই ফর দ্য পিপল কথাটি পুরোপুরি লাল কালি দিয়ে কেটে বরং লেখা যেতে পারে ফর দ্য মিনিস্টারস।

বাকি রইল অফ দ্য পিপল আর বাই দ্য পিপল। বিধানসভা আর রাজ্য সভায় যাঁরা চেয়ার আলো করে বসে থাকেন তাঁদের মধ্যে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের বিশেষ দেখা যায় না। তাঁরা তখন শো বা স্যুটিংয়ে ব্যস্ত থাকেন। যাঁরা উপস্থিত থাকেন, তাঁদের অর্ধেক ঘুমান। বাকিরা থাকেন হট্টগোল করবার আর রাগ দেখিয়ে কক্ষ ত্যাগ করবার জন্য। তাছাড়া আর বাকি নির্বাচিত প্রতিনিধিরা, পিপলের আশার প্রদীপরা, ইতিমধ্যে ভালো অফার পেয়ে দলত্যাগ করে অন্য কোনো নিরাপদ ডালে বাসা বেঁধেছেন।

কাজেই কি দাঁড়ালো? গভর্নমেন্ট অফ দ্য পিপল মোটেই নয়। তাই বরং অফ দ্য সিস্টেম কথাটাই বলা ভালো।

এবার বাকি রইল বায় দ্য পিপল। বিগত বিধানসভা ও লোকসভা ভোটে ভোট দিতে এসে অনেকেই দেখেছেন তাঁদের ভোট পড়ে গেছে। আরো মজার কথা প্রেতলোকবাসী অনেক ভোটদাতাও ভোট দিয়ে গেছেন সশরীরে। অনেক বোকা ভোটার ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকার পর বোমা বা গোলাগুলির শব্দে চৈতন্যপ্রাপ্ত হয়েছেন ও পুলিশ এসে গুঁতো মেরে তাঁদের জ্ঞাত করেছেন যে বুথটি এখন দখলিকৃত। এখানে তাঁদের মতো ফালতু লোকেদের গণতান্ত্রিক অধিকার ফলাতে যাওয়াটা ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ।

অগত্যা গেল। অফ দ্য পিপল, ফর দ্য পিপল, বাই দ্য পিপল সব ঝুরঝুর করে ঝরে পড়ে গেল। রয়ে গেল সরকার। তিনি হীরে মোড়া হিরকের রাজা। তিনি ভগবান। তাঁর হাতে সিস্টেম নামের মোক্ষম ত্রিশূল। ট্যাঁফোঁ করলেই গেঁথে দেবেন। তারপর শোনা যাবে আকাশ কাঁপানো বন্দে মাতরম। কান ফাটানো মাইকে সারে জাঁহা সে আচ্ছা। রাতে পঞ্চ ম-কারের মোচ্ছব।

গাধার গাধা তস্য গাধা পাবলিক তবুও বলবে, বলতেই থাকবে— ‘মেরা ভারত মহান হ্যায়।’