ব্যর্থতা থেকে চ্যালেঞ্জ

ইসরাের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ‘যােগাযােগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার আগে পর্যন্ত ল্যান্ডারের সমস্ত সিস্টেম ও সেন্সর চমৎকারভাবে কাজ করেছে।

Written by SNS Kolkata | September 16, 2019 3:50 pm

ল্যান্ডার বিক্রম (File Photo: IANS/ISSRO)

চন্দ্রযান-২ অভিযান কেন ‘স্পেশাল’ ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্র ইসরাের ওয়েবসাইটে তার ব্যাখ্যা দেওয়া আছে। এর চারটি কারণ হল। এটাই প্রথম মহাকাশ অভিযান যেখানে চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে ‘সফট ল্যান্ডিং’-এর পরীক্ষা ছিল, দেশীয় প্রযুক্তি ব্যবহার করে চন্দ্রপৃষ্ঠে অবতরণের এটাই প্রথম ভারতীয় প্রচেষ্টা; দেশীয় প্রযুক্তির সাহায্যে চন্দ্রপৃষ্ঠে অনুসন্ধান চালানাের এটাই প্রথম ভারতীয় অভিযান এবং চন্দ্রপৃষ্ঠে সফট ল্যান্ডিং করে বিশ্বের চতুর্থ দেশ হিসাবে কৃতিত্ব অর্জন করা।

ইসরাের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ‘যােগাযােগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার আগে পর্যন্ত ল্যান্ডারের সমস্ত সিস্টেম ও সেন্সর চমৎকারভাবে কাজ করেছে। ল্যান্ডারে ব্যবহৃত ভ্যারিয়েবল থ্রাস্ট প্রপালসন টেকনােলজির মতাে অনেক নতুন প্রযুক্তির সার্থকতা প্রমাণিত হয়েছে।’

চন্দ্রযান-২ অভিযানের ৪টি বিশেষ লক্ষ্য এখনও অর্জিত হয়নি। এই অভিযানে অবিটার ল্যান্ডার (বিক্রম) ও রােভার (প্রজ্ঞান) যুক্ত। ৭ সেপ্টেম্বর ভােররাত ১.৫৫ মিনিটে চাঁদের দক্ষিণ মেরুর কাছে বিক্রমের সফট ল্যান্ডিং অর্থাৎ খুব হালকাভাবে অবতরণ করার কথা ছিল। কিন্তু ২.১ কিলােমিটার পথ বাকি থাকতে পৃথিবীর সঙ্গে তার যােগাযােগ ছিন্ন হয়ে যায়। চন্দ্রপৃষ্ঠে অবতরণ করতে তার আর মাত্র মিনিট তিনেক বাকি ছিল।

৮ সেপ্টেম্বর অর্বিটর চন্দ্রপৃষ্ঠে ল্যান্ডারকে আবিষ্কার করে। অর্বিটার তার নির্ধারিত কক্ষপথে ১০০ কিলােমিটার দূর দিয়ে চন্দ্রকে প্রদক্ষিণ করে চলেছে এবং সে নিরাপদে রয়েছে। ইসরাে ল্যান্ডারের সঙ্গে যােগাযােগ পুনঃপ্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছে, কিন্তু ৭ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু করে ১৪ দিন ল্যান্ডার ও রােভারের সৌর বিদ্যুৎ শেষ হয়ে যাবে, কারণ ১৪ দিনের শেষে চাঁদে রাত শুরু হয়ে যাবে। তাই ইসরাের হাতে সময় খুব কম।

চন্দ্রযান-২ চন্দ্রপৃষ্ঠে সফট ল্যান্ডিং করতে সক্ষম না হলেও (এটাই ছিল অভিযানের গুরুত্বপূর্ণ অংশ) মূল মিডিয়ার দর্শক-পাঠকদের কাছে অভিযান সফল হয়েছে বলেই প্রতিভাত হচ্ছে। দেশবাসী হিসাবে আমরা আমাদের বিজ্ঞানীদের জন্য গর্বিত। তারা তাদের সেরাটা দিয়েছেন এবং ভারতকে গর্বিত করেছেন। অজানার উদ্দেশ্যে কোনও অভিযানে সাফল্য অথবা ব্যর্থতা স্বাভাবিক। আমেরিকার মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা-র চন্দ্রাভিযানের ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যায় ১৯৫৮ সাল থেকে তারা ১০৯টি চন্দ্রাভিযান করেছে, যার মধ্যে সফল হয়েছে মাত্র ৬১টি।

চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে বিক্রম মডিউলের সফট ল্যান্ডিয়ের জন্য ইসরাের বলিষ্ঠ প্রচেষ্টায় নাসা ‘অনুপ্রাণিত’ হয়েছিল, কারণ এর আগে কেউ ওই অঞ্চলে অবতরণ করেনি। চাঁদে অভিযান ও তার পরিকল্পনা তৈরির জন্য আমেরিকা ও পূর্বর্তন সােভিয়েত ইউনিয়নের কয়েক দশক সময় লেগেছে।

৭ সেপ্টেম্বর বেঙ্গালুরুতে ইসরাের কন্ট্রোল রুমে বিজ্ঞানীদের মাঝে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মােদি উপস্থিত ছিলেন। সকলের আশাকে নস্যাৎ করে বিক্রম চন্দ্রপৃষ্ঠে আছড়ে পড়লে ইসরাের চেয়ারম্যান কে শিবন ভেঙে পড়েন। টেলিভিশনের পর্দায় তাঁকে প্রধানমন্ত্রীর বুকে মাথা রেখে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে দেখা যায়। মােদিকেও দেখা যায় তাঁর পিঠ চাপড়ে সান্ত্বনা দিতে। এই নাটকীয় দৃশ্যের প্রতি সকলেরই দৃষ্টি নিবদ্ধ হয়। এই ব্যর্থতা ভারতের বিজ্ঞানী সমাজের কাছে একটা চ্যালেঞ্জ। এটা ভেঙে পড়া বা আবেগ প্রকাশের সময় নয়। কিন্তু এই গােটা ঘটনায় আসল জয়ী কারা? তারা হলেন বিজেপি নেতারা, যাঁরা দেশবাসীকে বােঝাতে পেরেছেন যে চন্দ্রযান-২ অভিযান বিরাটভাবে সফল।