করােনা সংক্রমণ এড়াতে সরকার হঠাই লকডাউন ঘােষণা করে দেয়। মার্চ মাসে লকডাউন ঘােষণার ফলে ট্রেন ও অন্যান্য পরিবহণ ব্যবস্থা অচল হয়ে যায়। এর ফলে সবথেকে ক্ষতিগ্রস্ত হয় সংবাদপত্র-পত্রিকার বন্টন ব্যবস্থা। যদিও ডিজিটাল মাধ্যমে মানুষ তার প্রিয় সংবাদপত্রের নেটের মাধ্যমে দেখতে বা পড়তে পেরেছেন।
কিন্তু সাময়িকপত্র- পত্রিকার প্রাত্যহিক চেহারা দেখার অভ্যেস এতে পূরণ হয় না। বিজ্ঞানীরা সংবাদপত্র পত্রিকা সংক্রমণ ছড়ায় না বলে অভিমত দিলেও তা এলাকাভিত্তিক অতি উৎসাহী বিশেষজ্ঞরা ছুঁৎমার্গ জারি করায় মানুষ সংবাদপত্র-পত্রিকা বয়কট করতে বাধ্য হন।
Advertisement
এমনকী দেশের বেশ কয়েকটি রাজ্যে সরকারিভাবে বন্টন বন্ধ রাখার নির্দেশ জারি করে। আবাসনগুলিতে হকারদের ঢুকতে বাঁধা দেওয়া হতে থাকে। কারণ তাদের মাধ্যমে যদি ভাইরাস সংক্রমিত হয় এই ভয়ে। রেল ও বিমান চলাচল বন্ধের ফলে দূরবর্তী অঞ্চলে সংবাদপত্র-পত্রিকা বন্টন বন্ধ হয়ে যায়। হােয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে সংবাদপত্রের প্রচার কপিরাইট আইন ও তথ্য প্রচার আইনে বেআইনি হলেও তা অব্যাহত রাখতে হয়েছে।
Advertisement
এছাড়া, ই পেপার চালুর মাধ্যমে রাজস্ব আদায়ের বিষয়টিও এক কঠিন সমস্যার মােকাবিলার মধ্যে পড়ে যায়। কারণ প্রাত্যহিক গ্রাহকদের কাছ থেকে এবং বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে যে রাজস্ব আদায় হওয়ার কথা তা ন্যূনতম পর্যায়ে এসে পৌঁছেছে। ফেসবুকের অধীন হােয়টসঅ্যাপের মাধ্যমে সংবাদমাধ্যমের খবর প্রচারের বিষয়টি বিশ্বের অধিকাংশ দেশেই নজরদারির মধ্যে আনা হয়নি।
কিন্তু আস্ট্রেলিয়া সরকার সােশ্যাল মিডিয়া ও সংবাদপত্র প্রতিষ্ঠানগুলির মধ্যে সম্পর্কের বিষয়টি নিয়ে ভারত সরকার কোনও নিয়মনীতি তৈরি করা নিয়ে উদ্যোগই নেয়নি। করােনা আবহে সংবাদমাধ্যমের ক্ষতি হয়েছে সব থেকে বেশি। কিন্তু না কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রক বা না তথ্যসম্প্রচারমন্ত্রক কেউই সংবাদপত্র প্রকাশক সংস্থাগুলির বিষয়ে কোনও সুরাহামূলক ব্যবস্থা গ্রহণে আগ্রহ দেখায়নি। এর ওপর কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার বিশেষত পশ্চিমবঙ্গ সরকারের পক্ষে বিজ্ঞাপনের টাকা দিতে অযথা বিলম্বের ফলে আঞ্চলিক ভাষায় প্রকাশিত সংবাদপত্র পত্রিকাগুলি ঘাের বিপদের মধ্যে পড়েছে।
রাজ্য প্রশাসনের সদর দফতরের পক্ষথেকে বিজ্ঞাপনের টাকা দেওয়ার বিষয়ে স্বেচ্ছাচার চালানাে হচ্ছে বলে বিভিন্ন সংবাদপত্র সংস্থার পক্ষে অভিযােগ। এমত অবস্থায় সংবাদপত্র সংস্থার পক্ষে তাদের উদ্যোগে সংগৃহীত ও প্রকাশিত খবরগুলি কিভাবে সােশ্যাল মিডিয়ার দ্বারা যথেচ্ছ ভাবে ব্যবহার থেকে রক্ষা করা যায় সে বিষয়ে কোনও দিশা নেই।
কেন্দ্রীয় তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রকও এবিষয়ে কোনও বিধিনিষেধ আরােপের উদ্যোগ নেওয়া দুরে থাক, হােয়াটসঅ্যাপ কর্তৃপক্ষের কাছে কৈফিয়ত চাওয়ারও কোনও প্রয়ােজন মনে করছে না। ভারতে সংবাদপত্র সংবিধানের চতুর্থ স্তম্ভ হিসেভে স্বীকৃত। তার মর্যাদা রক্ষার দায়িত্ব জনপ্রিয় সরকারের।
কিন্তু সরকার অতিমারির দোহাই দিয়ে সংবাদপত্রের বা চতুর্থ স্তম্ভের মান রক্ষার বিষয়টিকে গৌণ মনে করে তা নিয়ে ভাববার সময়ই করে উঠতে পারছে না। এব্যাপারে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রকের দায়িত্ব গ্রহণের সময় যে ব্যক্তিরা শপথ গ্রহণ করেছিলেন সেটা অন্তত তাঁদের স্মরণ রাখা উচিত।
Advertisement



