রাজ্য থেকে কেন্দ্র শাসিত অঞ্চল করে কার্যত আমাদের বোকা বানিয়ে রেখেছে কেন্দ্র। তাই নিরাপত্তার দায়দায়িত্ব বলতে আমাদের হাতে নেই— এ কথা বলে কেন্দ্রের সমালোচনার সুর চড়িয়ে দিলেন জম্মু ও কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লা। এ ব্যাপারে কেন্দ্রের কাছে দাবি জানিয়েও কোনও ফল মেলেনি। জম্মু-কাশ্মীর পর্যটন বিভাগ আয়োজিত সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে ওমর আবদুল্লা একথা বলেন। যদি রাজ্যের মর্যাদা পাওয়া যেত তাহলে আমরা আরও ভালোভাবে কাজ করার সুযোগসুবিধা পেতাম। জম্মু ও কাশ্মীরকে রাজ্যের তকমা দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে মতান্তর থাকতে পারে, কিন্তু সাধারণ মানুষের নামে নিরাপরাধ মানুষকে হত্যা করা সমর্থনযোগ্য নয়।
সম্প্রতি কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী নবান্নে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন। মমতাও বলেন জম্মু ও কাশ্মীরের নিরাপত্তা পুরোপুরি ওমরের হাতে নেই। অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা এবং সীমান্ত সুরক্ষিত রাখার দায়িত্ব কেন্দ্রের হাতে, যা আরও কঠোর করা উচিত। পহেলগামে পর্যটক হত্যা নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী এর আগেও সমালোচনা করেছিলেন। কেন এই হত্যাকাণ্ডে যারা জড়িত তাদের এখনও ধরা হল না— তা নিয়েও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সমালোচনায় মুখর। এ ব্যাপারে কেন্দ্রকেই দায়ী করেন তিনি। কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী বলেন, জঙ্গিদের ধরার কোনও নির্দিষ্ট সময়সীমা নেই। নিরাপত্তা বাহিনী অভিযান চালাচ্ছে—একদিন তারা হয়তো ধরা পড়বেই। তবে তিনি স্বীকার করেন পহেলগামের হত্যাকাণ্ড অত্যন্ত মর্মান্তিক এবং হৃদয়বিদারক।
Advertisement
এটা সুবিদিত পহেলগামে যেদিন বেছে বেছে পর্যটকদের গুলি করে হত্যা করা হল তাঁদের স্ত্রীদের সামনে, সেদিন সুন্দর এই পর্যটক কেন্দ্রে পুলিশ ও নিরাপত্তা রক্ষীরা ছিল না। থাকলে এই হত্যালীলা সংগঠিত হতে পারত না। চার-পাঁচজন জঙ্গি বিনা বাধায় ২৬ জন পর্যটকদের নির্বিচারে গুলি চালিয়ে হত্যা করে। তাদের মধ্যে বাঙালি পর্যটকরাও ছিল। পহেলগাম পর্যটকদের কাছে একটি আকর্ষণীয় স্থান বলে, দেশ-বিদেশের পর্যটকরা এই কেন্দ্র ঘুরে না দেখে যান না। যেদিন জঙ্গিরা এই হত্যাকাণ্ড চালাল, সেদিন এক হাজারেরও বেশি পর্যটক পহেলগামে ঘুরতে এসেছিল। যেহেতু তাবেদার নিরাপত্তার কোনও ব্যবস্থা ছিল না— সেই সুযোগ জঙ্গিরা নেয়। এর জন্য কেন্দ্র পুরোপুরি দায়ী। তবে জম্মু ও কাশ্মীরের পুলিশ এই দিন পহেলগামে ছিল না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। যে কয়েকজন জঙ্গি এই হত্যালীলা চালিয়েছিল, তাদের এখনও কোনও হদিশ পাওয়া গেল না— তা বিস্ময়ের। তবে ওমর আবদুল্লা বলেছেন তিনি নিশ্চিত একদিন তারা ধরা পড়বে। এখন মূল লক্ষ্য, জঙ্গিরা যেন ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় কোনওভাবেই প্রবেশ না করতে পারে। নিরাপত্তা রক্ষীরা এ ব্যাপরে সজাগ।
Advertisement
মমতা ও ওমরের সাক্ষাৎকার কালে বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’র কথাও ওঠে। উভয়েই একমত এই জোটকে শক্তিশালী করে তুলতে। কারণ বিজেপির সঙ্গে লড়াই করতে গেলে জোটের নেতাদের মধ্যে আরও নিবিড় সম্পর্ক ও সমন্বয়ের প্রয়োজন। জোট প্রসঙ্গে ওমর বলেন, কংগ্রেসকে বাদ রেখে তৃণমূল, এসপি এবং আরও কয়েকটি দল নিয়ে যে গ্রুপ তৈরি হয়েছে, তাতে তিনিও আছেন। এ কথা বলে তিনি কংগ্রেসকে খোঁচা দিয়েছেন। তিনি বলেন, বিরোধী জোটকে আরও ঐক্যবদ্ধ করা শুধু আমার ও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাজ নয়— সব বিরোধী দলের নেতাদের একসঙ্গে এসে লড়াই চালিয়ে যেতে হবে। কাজ কঠিন হলেও, তা কার্যকরী করা সম্ভব। বিজেপির একাধিপত্য খর্ব করার জন্য জোটকে এগিয়ে আসতে হবে।
বিজেপির সমালোচনা করে ওমর বলেন, অনেক সময় পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে তারা কাশ্মীরের তুলনা টানেন। এটা কোনওভাবেই সমর্থন করা যায় না। তিনি বলেন, ২০১৯ সালে তাঁর যখন সময় খারাপ যাচ্ছল, তখন দিদি’ আমার হয়ে বলেছিলেন, যা হচ্ছে তা ঠিক হচ্ছে না।’ সেই দুঃসময়ে তিনি আমার পাশে থেকে সহানুভূতি জানিয়েছিলেন, যা তিনি ভুলবেন না। তিনি চান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জোটকে শক্তিশালী করে তুলুন।
কাশ্মীর এখন শান্ত। পর্যটকদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা কঠোর করা হয়েছে। উভয় মুখ্যমন্ত্রীই বলেন, দেশ-বিদেশের পর্যটকরা এখন নির্ভয়ে কাশ্মীরে গিয়ে বেড়িয়ে আসতে পারেন। তিনি বলেন, পুজোর পর তিনিও একবার কাশ্মীর ঘুরে আসতে পারেন। ওমর বঙ্গবাসীদের উদ্দেশে বলেন, আপনারা নিশ্চিন্তে কাশ্মীরে আসুন। আপনাদের নিরাপত্তার জন্য ভাবতে হবে না। ভয়ের কোনও কারণ নেই। কাশ্মীরের জনজীবন এখন স্বাভাবিক। ব্যবসাবাণিজ্যও ঠিক মতো চলছে।
এই দুই মুখ্যমন্ত্রীর সাক্ষাৎকার নিয়ে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী বলেন, এঁরা একসঙ্গে মিলিত হয়ে কথাবার্তা চালিয়েছেন, সেটা ভাল। তবে কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রীকে বলেন, তিনি ফিরে যাওয়ার আগে পহেলগামে নিহত বাংলার দুই পর্যটক বিতান অধিকারী ও সমীর গুহর বাড়িতে যান। দেখে যান নিহত পরিবারদ্বয়ের সদস্যদের দুরবস্থা।
Advertisement



