• facebook
  • twitter
Tuesday, 5 August, 2025

পাঁচ প্রশ্নের উত্তর মেলেনি

অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের তোলা পঞ্চম প্রশ্নটিও খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। সর্বদলীয় প্রতিনিধি দল বিশ্বের ৩৩টি দেশ সফর করে আসার পর ক’টি দেশ ভারতকে খোলাখুলি সমর্থন জানাল?

প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র

জম্মু-কাশ্মীরের পহেলগামের বৈসরণে পর্যটকদের ওপর জঙ্গি হানার পর কেটে গিয়েছে প্রায় দু’মাস। এরই মধ্যে জঙ্গি হানার প্রত্যাঘাতে পকিস্তানে ভারতের ‘অপারেশন সিঁদুর’, দু’দেশের মধ্যে গোলা, গুলি বিনিময় এবং সংঘর্ষ বিরতি ঘটে। এরপরই ভারতের পক্ষে এই প্রত্যাঘাতের স্বপক্ষে বিশ্বকে বার্তা দিতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সর্বদলীয় প্রতিনিধি দল পাঠানো। হয়েছিল। সেই প্রতিনিধি দলে ছিলেন তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক তথা সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ৫টি দেশে সফর করা প্রতিনিধি দলে ছিলেন। তাইল্যান্ড থেকে সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া প্রভৃতি দেশে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বুঝিয়ে দিয়েছেন, আগে দেশ, তারপর রাজনীতি। তিনি দেশের হয়ে বিদেশের কাছে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ভারত কীভাবে ঐক্যবদ্ধ তা বুঝিয়ে দিয়েছেন। পাকিস্তান মানেই জঙ্গিদের মদতদাতা— এমন কথাও তুলে ধরেছেন।

সেই অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় দেশে ফিরে কেন্দ্রীয় সরকারের উদ্দেশ্যে এমন পাঁচটি প্রশ্ন তুলে ধরেছেন, যা দেশের প্রতিটি মানুষেরই জানার অধিকার রয়েছে। প্রশ্নগুলি একেবারেই যথার্থ। কীভাবে ওই চার জঙ্গি ভারতে অনুপ্রবেশJ করে পর্যটকদের উপর হামলা চালাতে পারল? এই প্রশ্ন দেশের সকলেরই। এর উত্তর জানতে দেশবাসী উদগ্রিব। ওই চার জঙ্গি এখনও কেন ধরা পড়ল না? কী করে তারা পালিয়ে যেতে সক্ষম হলো, যেখানে গোটা কাশ্মীর উপত্যকা ছেয়ে আছে নিরাপত্তা রক্ষীদের দ্বারা।

এক্ষেত্রে গোয়েন্দা ব্যর্থতার বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে যাওয়ার পরও ইনটেলিজেন্স ব্যুরোর প্রধানের চাকরির মেয়াদ কেন বাড়ানো হল? সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নটি হলো, ভারত-পাকিস্তান সংঘর্ষ নিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প কথিত মধ্যস্থতা নিয়ে। ট্রাম্প বার বার মন্তব্য করেছেন, ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে সম্ভাব্য যুদ্ধ তিনিই বন্ধ করেছেন। এই নিয়ে মোদী সরকার দীর্ঘ নীরবতার পর অবশ্য সরাসরি মন্তব্য না করে বলেছে, পাক আবেদনের পরই সংঘর্ষ বিরতিতে সম্মত হয় ভারত। এর নেপথ্যে অন্য কোনও দেশের ভূমিকা নেই। ভারত-পাক সম্পর্ক কিংবা কাশ্মীর ইস্যুতে কোনও তৃতীয় পক্ষের নাক গলানো মেনে নেওয়া হবে না— স্বাধীনতার পর থেকে এটাই ভারতের অবস্থান। অথচ মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প কী করে দুই দেশের সংঘর্ষ থামিয়ে দিয়েছেন বলে দাবি করেন?

অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের তোলা পঞ্চম প্রশ্নটিও খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। সর্বদলীয় প্রতিনিধি দল বিশ্বের ৩৩টি দেশ সফর করে আসার পর ক’টি দেশ ভারতকে খোলাখুলি সমর্থন জানাল? বাস্তব হলো, স্ব-আরোপিত ‘বিশ্বগুরু’ এখন ঘরে-বাইরে সঙ্গছাড়া। ভারত বর্তমানে সত্যিকার অর্থেই বিশ্বের দরবারে সঙ্গিহীন শুধুমাত্র আমেরিকার তাঁবেদারি করার জন্য। এক সময় ভারত জোট নিরপেক্ষ দেশসমূহের নেতৃত্ব দিয়েছিল। সব ক্ষেত্রেই ভারতের ছিল প্রশংসনীয় উদ্যোগ, যা গোটা বিশ্বে সমাদৃত হয়েছিল। এখন জোট নিরপেক্ষ থেকে পিছিয়ে এসে ভারত মার্কিন তাঁবেদারিতে নেমেছে। গণহত্যাকারী ইজরায়েলের সঙ্গে সখ্যতা বাড়ানোয় আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রেও বিশ্বাসযোগ্যতা হারিয়েছে।

এই প্রেক্ষাপটে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এক্স হ্যান্ডেলে যে পাঁচটি প্রশ্ন তুলেছেন, তা সত্যিকার অর্থেই যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ। পহেলগামে হামলাকারী চার জঙ্গি কী করে পালিয়ে যেতে সক্ষম হলো? এখন তারা কোথায়, পাকিস্তানে না ভারতেই? বৈসরণ উপত্যকায় চিরুণী তল্লাসি চালিয়ে কেন তাদের ধরা সম্ভব হলো না? ‘অপারেশন সিঁদুরের’ সুযোগে পাক অধিকৃত কাশ্মীর দখলের সুযোগ কেন হাতছাড়া করা হলো? এর নেপথ্যে কি আমেরিকার শুল্ক অস্ত্র এবং বাণিজ্য বন্ধ করার হুমকি? উত্তর মিলছে না পাঁচ প্রশ্নবাণের।