নীতি আয়োগ ভারতের অর্থনীতি অগ্রগতির দৌড়ে জাপনাকে ছাড়িয়ে যাওয়ার দাবি করলেও দেশীয় সমীক্ষায় প্রকাশ, থমকে গেছে দেশের আর্থিক অগ্রগতি। নীতি আয়োগ সম্প্রতি আন্তর্জাতিক অর্থ ভাণ্ডার (আইএমএফ) ভারতের অর্থনীতির অগ্রগতির যে পূর্বাভাস ঘোষণা করে তার উপর ভিত্তি করেই জানিয়েছিল ভারত অর্থনীতিতে জাপানকে ছাড়িয়ে যাবে। শিল্পের অগ্রগতি নিয়ে ব্যাঙ্ক অব বরোদা সম্প্রতি যে সমীক্ষা রিপোর্ট প্রকাশ করেছে তাতে জানা গেছে ভারতের অর্থনীতি এগিয়ে যাওয়া নয়, পিছিয়ে পড়ছে।
ব্যাঙ্ক সমীক্ষা রিপোর্ট জানিয়েছে, বড় শিল্পে মুনাফা এবং বিক্রি কমে যাওয়ায় অর্থনীতিতে শিল্পের অগ্রগতি ঘটেনি। উলটে থমকে গেছে অর্থনীতি। অন্যদিকে কেন্দ্রের পরিসংখ্যান দপ্তর জানাচ্ছে শেষ ত্রৈমাসিকে (জানুয়ারি-মার্চ) শিল্পে উৎপাদন বৃদ্ধি কমে এখন ২.৭ শতাংশে নেমেছে। যা গত ৮ মাসে শিল্প উৎপাদনে সর্বাধিক হারে হ্রাস বলে জানানো হয়েছে। মোদী ভারতকে বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম অর্থনীতি বলে ফেরি করলেও তার শিল্পের দৌড় যে থমকে গেছে তা অস্বীকার করা যাচ্ছে না। আসলে দেশে মানুষের আয় বিপুল হারে কমে গিয়ে অর্থনীতির সঙ্কট সর্বগ্রাসী রূপ নিয়েছে বলে জানাচ্ছেন আর্থিক বিশ্লেষকরা।
সমীক্ষা রিপোর্টে বলা হয়েছে, দেশের শেয়ার বাজারের তালিকায় থাকা বড় ১ হাজার ৭৮৭ টি কোম্পানির মুনাফা এবং তাদের পণ্য ও পরিষেবা বিক্রির হার সংগ্রহ করা হয়েছে। দেখা গেছে, শেষ ত্রৈমাসিকে (জানুয়ারি-মার্চ) তালিকার কোম্পানির মুনাফা বৃদ্ধির হার ছিল ১২.৬ শতাংশ। একই সময়ে টাকার অঙ্কে মুনাফা ৩.৪৩ লক্ষ কোটি টাকা থেকে কমে হয়েছে ৩.১৩ লক্ষ কোটি টাকা। এদিকে কোম্পানির ওই একই সময়ে পণ্য ও পরিষেবা বিক্রি বৃদ্ধি হার কমেছে। গত বছর যেখানে বিক্রি বৃদ্ধির হার ছিল ৯.২ শতাংশ, সেই হার কমে হয়েছে ৫.৭ শতাংশ। রিপোর্টে কোম্পানির বিক্রি ও মুনাফা কমে যাওয়ার পিছনে দেশের অর্থনৈতিক সঙ্কটকে দায়ী করা হয়েছে। বলা হয়েছে, দেশের চড়া মূল্যবৃদ্ধিতে পণ্যের উৎপাদন মূল্য বাড়ছে। একই সঙ্গে মানুষের আয় কমে যাওয়ায় বাজারে চাহিদা কমে গিয়েছে। স্বাভাবিকভাবে শিল্পের বিক্রি কমছে। বিক্রি কমায় তার মুনাফাও কমেছে।
সমীক্ষা রিপোর্টে দেশে শিল্পের সঙ্কট নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। বলা হয়েছে দেশের শিল্প উৎপাদন বৃদ্ধির হার শেষ ত্রৈমাসিকে কমে ২.৭ শতাংশে নেমে গেছে। এতে খনি ও বিদ্যুৎ শিল্পে উৎপাদন বৃদ্ধি হার সবচেয়ে কমে হয়েছে যথাক্রমে ০.২ শতাংশ এবং ১.১ শতাংশ। উৎপাদন শিল্পে এই বৃদ্ধির হার হলো মাত্র ৩.৪ শতাংশ।
নীতিআয়োগ ভারতের সঙ্গে জাপানের তুলনা টানতে গিয়ে জিডিপি বৃদ্ধি হারের তুলনা টেনেই দেশের অর্থনীতি জাপানকে পিছিয়ে ফেলে এগিয়ে যাওয়ার পূর্বাভাস দিয়েছে। কিন্তু তা একপেশে তুলনা হয়ে যায়। এতে আদৌ অর্থনীতির অগ্রগতি ধরা পড়ে না। যেমন, বলা হয়েছে, জাপানের অর্থনীতি ৪ হাজার ১৮৬.৪৩ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছবে। সেখানে ভারতের অর্থনীতি পৌঁছবে ৪ হাজার ১৮৭.০২ বিলিয়ন ডলারে। বর্তমানে ভারতে জিডিপি বৃদ্ধির হার হলো ৬.২ শতাংশ। সেখানে জাপানে জিডিপি বৃদ্ধির হার হলো ৬.২ শতাংশ। বৃদ্ধি হার বেশি থাকায় ভারত জাপানকে ছাড়িয়ে যাবে বলে দাবি করা হয়েছে। কিন্তু যে তথ্য সামনে আনা হয়নি তা হলো মাথা পিছু আয়ে ভারতের থেকে জাপান অনেকটাই এগিয়ে রয়েছে। জাপানের যেখানে মাথাপিছু আয় ৩৩ হাজার ৩০০ ডলার সেখানে ভারতের মাথাপিছু আয় ২ হাজার ৮৮০ ডলার। ভারতের থেকে জাপানের মাথাপিছু আয় ১৫ গুণ বেশি। মাথাপিছু আয়ে ভারত জাপানের পিছনে থেকে যাবে। অন্যদিকে যে হারে উৎপাদন বৃদ্ধির হার কমছে তাতে অর্থনীতিতে এগিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা আরও কমছে।