• facebook
  • twitter
Tuesday, 29 July, 2025

মহারাষ্ট্রে দানবীয় আইন

২৮৮ আসনের মহারাষ্ট্র বিধানসভায় বিজেপি মোর্চার বিধায়ক সংখ্যা ২৩৫ জন। ফলে বিল পাশে সংখ্যা নিয়ে কোনও সমস্যা হয় বিজেপি মোর্চা সরকারের।

প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র

সরকার বিরোধী যে কোনও আন্দোলনকেই ‘গুরুতর অপরাধ’ বলে দাগিয়ে নতুন আইন পাশ করল মহারাষ্ট্রের বিজেপি জোট সরকার। ‘শহুরে নকশাল’ তকমা দিয়ে রাজ্যে গণতান্ত্রিক আন্দোলনের কর্মীদের বেপরোয়া ধরপাকড়কে আইনি মান্যতা দিতে পাশ করা হয়েছে ‘মহারাষ্ট্র স্পেশাল পাবলিক সিকিউরিটি বিল’। মোদীর বিরোধিতা করেন এমন যে কোনও ব্যক্তিকেই দেশদ্রোহী ‘টুকরে টুকরে গ্যাং’-এর সদস্য এবং শহুরে নকশাল বলে দাগিয়ে দিয়ে সঙ্ঘ পরিবার দেশজুড়ে যে প্রচার চালাচ্ছে, তাকেই এবার আইনি বৈধতা দিয়েছে মহারাষ্ট্রের বিজেপি জোট সরকার। শুধু তাই নয়, এই অবাস্তব দাবিকে একটি গুরুতর সমস্যা বলে চিহ্নিত করা হয়েছে। এতটাই গুরুতর যে তার বিরুদ্ধে আইন আনতে হচ্ছে। প্রসঙ্গত, গত ১০ জুলাই বিলটি বিধানসভায় পাশ করিয়ে পরের দিনই তা রাজ্য বিধান পরিষদে পাশ করিয়ে আইনে পরিণত করা হয়।

এই আইনকে ব্যবহার করে ‘শহুরে নকশালদের’ একেবারে মুছে দেওয়ার হুমকি দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফড়নবিশ। আদতে এর মাধ্যমে বিজেপি বিরোধী যে কোনও দল বা ব্যক্তিকেই হুমকি দেওয়া হচ্ছে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা কটাক্ষ করেছেন। এই আইনের একমাত্র উদ্দেশ্য, হচ্ছে স্বৈরতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা, সরকারের বিরুদ্ধে প্রশ্ন করার অধিকার কেড়ে নেওয়া। এই ধরনের আইন পাশ করে বিজেপি সরকার দেশের যেটুকু গণতান্ত্রিক পরিসর অবশিষ্ট রয়েছে, তাও ধ্বংস করতে চাইছে। আম্বানি, আদানির মতো বিজেপির লালিত পালিত কর্পোরেট প্রভুদের স্বার্থ সিদ্ধি করতে এবং যে কোনও ধরনের বিরোধিতা নিশ্চিহ্ন করতেই এই আইন প্রণয়ন করা হয়েছে।

প্রসঙ্গত, মহারাষ্ট্রে ২০১৮ সালে এলগার পরিষদ আন্দোলনে যুক্ত থাকায় বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠনের কর্মীদের উপর পুলিশী নির্যাতন নামিয়ে আনা হয়। রাজ্যজুড়ে তাঁদের বেপরোয়া ধরপাকড় চলে। এই আন্দোলনকে অপরাধমূলক কার্যকলাপ বলে সরকার চিহ্নিত করে। আদালতে তা আইনিভাবে প্রমাণিত করতে না পেরে, ঘুরপথে নানাবিধ চেষ্টা করে যাচ্ছে বিজেপি জোট সরকার। যে কোনও ধরনের গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে কার্যত দেশ-বিরোধী তকমা দিতে বিজেপি জোট সরকার এই ধরনের আইন এনেছে। সরকার বিরোধী যে কোনও রাজনৈতিক আন্দোলনকেই এই আইনে চরম অপরাধমূলক কার্যকলাপ বলে দাগিয়ে, তা ফৌজদারি মামলার যোগ্য বলে এই আইনে উল্লেখ করা হয়েছে।

নয়া আইনের এই বিল প্রাথমিকভাবে গত বছর বিধানসভার বাদল অধিবেশনে নিয়ে আসা হয়। তবে সেই সময় বিলটি পাশ করানো যায়নি। রাজ্যজুড়ে বিভিন্ন মানবাধিকার ও নাগরিক অধিকার সংগঠন বিলের বিরোধিতা করায় তা সিলেক্ট কমিটিতে পাঠানো হয়। সিলেক্ট কমিটির রিপোর্ট পেশের পর পর ৯ জুলাই বিধানসভায় বিলটি পেশ করা হয়েছে। সিলেক্ট কমিটিতে বিলটি সংশোধনে ১২ হাজার প্রস্তাব জমা পড়লেও একটি প্রস্তাবও সরকার গ্রহণ করেনি। বিধানসভা ও বিধান পরিষদে বিলটি পাশ হওয়ার পর তা রাজ্যপালের কাছেও পাঠানো হয়েছে। রাজ্যপালের সম্মতির পর রাজ্যে এই আইন চালু হয়ে যাবে।

২৮৮ আসনের মহারাষ্ট্র বিধানসভায় বিজেপি মোর্চার বিধায়ক সংখ্যা ২৩৫ জন। ফলে বিল পাশে সংখ্যা নিয়ে কোনও সমস্যা হয় বিজেপি মোর্চা সরকারের। তবে এই বিলের বিরোধিতা করে কমিটিতে বিরোধী নোট জমা দিয়েছেন সিপিআই(এম) বিধায়ক বিনোদ নিকোলে। তিনি জানান, সরকার সন্ত্রাস দমনের নামে এই বিল আনলেও ইতিমধ্যে এনিয়ে ইউএপিএ সহ একাধিক দানবীয় আইন আছে। তাহলে আলাদা করে এই আইন আনার উদ্দেশ্য একটাই, যাবতীয় সরকার বিরোধী আন্দোলনকে চরম অপরাধমূলক কার্যকলাপ বলে দাগিয়ে তা দমনে পুলিশি রাজ কায়েম করা।

এই আইনে জেলাশাসক ও পুলিশ কমিশনারকে যে ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে তাতে তাঁরা রাজ্যের যে কোনও এলাকাকে বেআইনি সংগঠনের বেআইনি কার্যকলাপের অঞ্চল বলে ঘোষণা করতে পারে। এই ঘোষণার মাধ্যমে সরকার-বিরোধী যে কোনও আন্দোলনকে অপরাধমূলক কার্যকলাপ বলে চিহ্নিত করে তাতে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া যাবে। এই আইনে দোষীসাব্যস্ত অপরাধীদের সাত বছর জেল এবং ২ লক্ষ থেকে ৫ লক্ষ টাকা জরিমানা করা হবে বলেও জানানো হয়েছে।