কংগ্রেস বনাম কংগ্রেস

সম্প্রতি প্রদেশ কংগ্রেস আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে বাম ও ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্টের সঙ্গে জোট বাঁধার কথা ঘােষণা করায় দলের মধ্যেই অসন্তোষ সৃষ্টি হয়েছে।

Written by SNS Kolkata | March 6, 2021 5:31 pm

কংগ্রেস (Photo: IANS)

সম্প্রতি প্রদেশ কংগ্রেস আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে বাম ও ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্টের সঙ্গে জোট বাঁধার কথা ঘােষণা করায় দলের মধ্যেই অসন্তোষ সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষত আব্বাস সিদ্দিকী নেতৃত্বাধীন ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্ট যেভাবে কংগ্রেসের কাছে আসন সমঝােতার কথা বলেছে তা মােটেই সম্মানজনক নয় বলে দলের একাংশের মত।

এমনকী দলের অধিকাংশ সদস্য ও শুভানুধ্যায়ীরা আব্বাস সিদ্দিকীর মতাে একজন মুসলিম কট্টরবাদীর সঙ্গে কোনওরকম ভােট বৈতরণী পার হওয়ার জন্য জোট করার পক্ষপাতী নন। এতে যে কংগ্রেসের কোনও সুবিধা হবে না এবং মুখ পুড়বে সেটাই তারা বলতে চাইছেন।

কারণ বামেরা সুরাবর্দির দলের সঙ্গে জোটে গিয়ে কলকাতায় নাশকতা চালিয়েছিল, বহু মানুষ এখনও সেই ঘটনা মনে করে শিউড়ে ওঠেন। দলের প্রবীণ নেতা আনন্দ শর্মা রাজ্যের ফুরফুরা শরিফের ধর্মীয় নেতা আব্বাস সিদ্দিকীর দল আইএসএফ এর সঙ্গে ভােটে জোট বাঁধার বিষয়ে তেমন কোনও সন্তোষজনক মত প্রকাশ করেননি।

তিনি গান্ধী-নেহরু আদর্শবাদ মেনে দেশের সকল জনগােষ্ঠীর সঙ্গে সমঝােতা করার কথা বলেছেন। তবে এতে সংশ্লিষ্ট গােষ্ঠীকে তােষণ করা হবে কিনা এবং করা হলে তার মাত্রা কতটা সেবিষয়ে তিনি নীরবতা পালন করেছেন।

এমনকী প্রদেশ কংগ্রেস নেতা অধীর চৌধুরী যেভাবে অপমান সহ্য করেও ফুরফুর শরিফের ধর্মীয় নেতা আব্বাস সিদ্দিকীর সঙ্গে সমঝােতা করতে নিমরাজি হয়েছেন সেটা বিরােধী বিজেপিকেই প্রকারান্তরে সাহায্য করবে বলে তিনি মত প্রকাশ করেছেন। এমনকী তিনি এও বলেছেন অধীর চৌধুরীও ভবিষ্যতে বিজেপিতে যাওয়ার জন্যই এমন অনৈতিক জোটে শামিল হওয়ায় সম্মতি দিয়েছেন।

এব্যাপারে কংগ্রেসের বিরুদ্ধে গােষ্ঠী খুবই ক্ষুব্ধ। তারা প্রকাশ্যেই দলের অবনমনের কথা বলছেন। মােট কথা দলের অস্তিত্ব বজায় রাখতে যার সঙ্গে খুশি ভােট জোট করা যেতেই পারে বলে কংগ্রেস হাইকমান্ডের মত।

তবে গান্ধী-নেহরুর ধর্মনিরপেক্ষতা নিয়ে তেমন কোনও পর্যালােচনা বা ভােট বৈতরণী পার হওয়ার জন্য যার তার সঙ্গে জোট গঠনের বিষয়ে রাজনৈতিক কৌশলগত বিষয়টি বিবেচনা না করেই দল যে ভুল করছে তা যদি এখনও না বুঝতে চায় হাইকমান্ড তবে দল আর বাঁচবে না বলে অভিজ্ঞ মানুষের মত।

কারণ বিগত দুই দশক ধরে কংগ্রেস মানুষের মনের কথাটাই বুঝতে চাইছে না। এজন্য কেন্দ্রে পর পর দুইটি নির্বাচনে বিরােধীপক্ষ হওয়ার জন্য প্রয়ােজনীয় মােট আসন সংখ্যার দশ শতাংশ আসনেও প্রার্থী জিতিয়ে আনতে সক্ষম হয়নি। কংগ্রেসকে এখন গান্ধী আদর্শ পরিত্যাগ করে নেহরুর আধুনিক সমঝােতা নীতিতে দেশের সকল গােষ্ঠী, সংখ্যাগুরু, সংখ্যলঘু সকলকে একসাথে আনতে পারলে বিক্ষুব্ধ গােষ্ঠীরও আর কিছু বলার থাকবে না।

জাতীয় দল হিসেবে কংগ্রেসের গ্রহণযােগ্যতা কেন এমন তলানিতে এসে পড়ল তার একটা বিশ্লেষণ তাে জরুরি। তবে বিক্ষুব্ধদের বিরুদ্ধে স্বার্থসিদ্ধির একটা গল্প চালু হয়েছে সংবাদমাধ্যমে। দলের বিক্ষুব্ধ প্রবীণ সদস্যদের বিরুদ্ধেই এমন তকমা লাগিয়ে দেওয়া হচ্ছে। উচ্চাকাঙ্ক্ষা এবং ঘুরে দাঁড়ানাের কোনও কৌশলই ব্যর্থ হতে পারে না রাজনীতিতে। আনন্দ শর্মা কেন যে প্রদেশ কংগ্রেস নেতা অধীর চৌধুরীকেই বলির পাঁঠা বানাচ্ছেন সেটা বােঝা মুস্কিল নয়।

কারণ এখানে কংগ্রেস হাইকমান্ডের সম্মতি ব্যতীত যে প্রদেশ নেতৃত্ব এগােতে পারে না তা কি তবে আনন্দ শর্মার মতাে নেতার জানা নেই-এ প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক। কংগ্রেসের ক্ষতি যতটা না হবে, তার চেয়ে বেশি লাভ নাকি হবে বিজেপিরই।

আনন্দ শর্মার মতে প্রদেশ নেতা অধীর চৌধুরী কংগ্রেস দলের ঐতিহ্যকে জলাঞ্জলি দিয়ে একটা গুরুত্বহীন দলের পর্যায়ে নামিয়ে এনেছেন আব্বাস সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন আইএসএফ দলের সঙ্গে জোট ঘােষণা করে। ফলে দলের নীতি আদর্শ এসন্দ্রে কোনও বালাই আর রইল না।

এমন একটা জোট ঘােষণার মধ্যে দিয়ে কংগ্রেস নাম কংগ্রেস লড়াই জমে উঠেছে। আর বিরােধী বিজেপি কেন্দ্র ও অধিকাংশ রাজ্যের ক্ষমতা দখল করে তা তাড়িয়ে তাড়িয়ে উপভােগ করছে।