• facebook
  • twitter
Friday, 5 December, 2025

হাতের মুঠোয় কমিশন

আর এই কাজে যুক্ত হয়ে পড়েছেন আরএসএস কর্মীরা। সরকারিভাবে এসআইআর কাজে যুক্ত হয়ে আরএসএস ভোটার তালিকা থেকে বেছে বেছে বাদ দিচ্ছে দলিত মুসলমানদের।

ছবি: এএনআই

সরকারের নিয়ন্ত্রণ ও প্রভাব থেকে শত যোজন দূরে থেকে পুরোপুরি নিরপেক্ষভাবে নির্বাচন ব্যবস্থা গড়ে তোলার দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের জন্য যে নিয়োগকর্তা গঠিত হতো তাতে প্রধানমন্ত্রী, বিরোধী দলনেতা এবং দেশের প্রধান বিচারপতি থাকতেন। লক্ষ্য ছিল দলমত, শাসক-বিরোধীর ঊর্ধ্বে নিরপেক্ষ ব্যক্তিকে কমিশনার নিয়োগ করা। মোদী ক্ষমতায় এসে নিয়োগকর্তার জায়গা থেকে প্রধান বিচারপতিকে সরিয়ে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীকে যুক্ত করে আইন বদলে দিয়েছেন। এখন তিনি সদস্যের কমিটিতে দু’জনই সরকার তথা শাসক দলের লোক। ফলে তাঁরা তাঁদের পছন্দের এবং অনুগতদেরই কমিশনার নিয়োগ করছেন কমিশনকে সরকার তথা শাসক দলের নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য। বর্তমান তিন কমিশনারই মোদী-শাহের অতি ঘনিষ্ঠ ও অনুগত। অতএব তাঁরা কাঠের পুতুলের মতো মোদী-শাহরা যেমন নাচাচ্ছেন তেমন নাচছেন।

সাংবিধানিক সংস্থা নির্বাচন কমিশন নিরপেক্ষতার ধ্বজা উড়িয়ে ভোটার তালিকা তৈরি করে তাকেই নির্ভুল বলে দাবি করছে। মোদীর নেতৃত্বে আরএসএস-বিজেপি সরকার দেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার এমন এক পরিবর্তন দক্ষতার সঙ্গে করে চলেছে যেখানে সুদূর ব্রাজিল দেশের কোনও তরুণী মডেলও দিব্যি ভারতের ভোটার হয়ে যেতে পারেন নিজের অজান্তেই। তাও আবার একটি দুটি নয়, অন্তত ১০টি বুথে ২২টি নামে তাঁর ছবি জ্বল জ্বল করছে। কোথাও তিনি সীমা, কোথাও সুইটি, কোথাও বা সরস্বতী। গত বছর হরিয়ানার বিধানসভা নির্বাচনে তাঁর ছবি লাগানো ভোটার কার্ড নিয়ে ২২ জন দিব্যি ভোটও দিয়েছেন। জালি ভোটার তালিকায় ব্রাজিলের তরুণীর ২২ টা নামে ২২টি ভোটারের নমুনা দেখিয়ে কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী দাবি করেছেন, মোদী সরকার এবং নির্বাচন কমিশন একেবারে পরিকল্পনা করে ভোট চুরির ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলেছে। আর ভোট চুরি করেই হরিয়ানায় বিজেপি ‘ভোট চোর সরকার’ গঠন করেছে। প্রকৃত বাস্তবে সেখানে কংগ্রেসের সরকার হওয়ার কথা ছিল।

Advertisement

গোটা হরিয়ানা রাজ্যে অনুসন্ধান চালিয়ে কংগ্রেস ২৫ লক্ষ্যের বেশি ভুয়া ভোটারের সন্ধান পেয়েছে। অথচ হরিয়ানায় কংগ্রেস হেরেছে মাত্র ২ হাজার ভোটে। অর্থাৎ ২৫ লক্ষ ভোট চুরি করে কংগ্রেসকে হারানো হয়েছে। কোনও অবস্থাতেই বিজেপি-র জেতার কথা ছিল না। একই ধরনের অনুসন্ধানের মাধ্যমে দেখা গিয়েছে এর আগে মধ্যপ্রদেশ, চত্তিশগড়, কর্ণাটক ও মহারাষ্ট্রেও বিজেপি দেদার ভোটচুরি করেছে। এসবই ছিল রাহুল গান্ধীর অভিযোগ। যার বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশন দৃঢ়তার সঙ্গে সত্যটা তুলে ধরতে পারেনি।

Advertisement

এইভাবে ভোট চুরি করে জেতা ও ভোট চোর সরকার গঠন করার জন্য আগে দরকার নির্বাচন কমিশনটাকেই চুরি করে বগলদাবা করে ফেলা। মোদী-শাহরা সেকাজটা আগেই সেরে ফেলেছিলেন। নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ সংক্রান্ত আইন সংশোধন করে কমিশনকে নিজেদের হাতে নিয়েছিলেন প্রকারান্তরে। যে কোনও গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার মূল ভিত্তি তার প্রতিষ্ঠানগুলির নিরপেক্ষতা। বিশেষ করে যাঁদের ভোটে সরকার তৈরি হবে সেই তালিকার স্বচ্ছতা এবং যে সংস্থা ভোটার তালিকা তৈরি করবে ও নির্বাচন সংগঠিত করবে সেই নির্বাচন কমিশনের সততা, স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতা। দুর্ভাগ্যের বিষয় হলো, বর্তমান নির্বাচন কমিশনের কাছে এর কোনওটাই আশা করা যায় না। আর এই নির্বাচন কমিশনকে অসৎ, অস্বচ্ছ ও পক্ষপাত করার মূল কারিগর মোদী-শাহ সরকার।

এখন নির্বাচন কমিশনের উদ্যোগে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে চলছে ভোটার তালিকায় বিশেষ নিবিড় সংশোধন (এসআইআর)। আর এই কাজে যুক্ত হয়ে পড়েছেন আরএসএস কর্মীরা। সরকারিভাবে এসআইআর কাজে যুক্ত হয়ে আরএসএস ভোটার তালিকা থেকে বেছে বেছে বাদ দিচ্ছে দলিত মুসলমানদের। আরএসএস কর্মীদের আদর্শগত পক্ষপাত সংখ্যালঘুও সামাজিকভাবে বঞ্চিত গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে। আরএসএস ঘনিষ্ঠ সরকারি কর্মীদের বুথ লেভেল স্তর থেকে বাদ দেওয়ার জন্য বিরোধী দলগুলি দাবি জানিয়েছে।

উল্লেখ্য, গত ২৭ অক্টোবর নির্বাচন কমিশন ঘোষণা করেছে যে নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারির মধ্যে ১২টি রাজ্য কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে হবে। এগুলি হলো: আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ, লাক্ষাদ্বীপ, ছত্তিশগড়, গোয়া, গুজরাত, কেরালা, মধ্যপ্রদেশ, পুদুচেরি, রাজস্থান, তামিলনাড়ু, উত্তরপ্রদেশ এবং পশ্চিমবঙ্গ।

Advertisement