তাঁর কথাতেই নাকি ভারত ও পাকিস্তান উভয় দেশ সংঘর্ষ বিরতিতে রাজি হয়েছে। এই দাবি করে চলেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। যদিও কিছুটা দেরীতে হলেও ভারত সরকার তো অস্বীকার করে বলেছে, পাকিস্তানের ডিজিএমও (ডাইরেক্টর জেনারেল অফ মিলিটারি অপারেশন) সংঘর্ষ বিরতির প্রস্তাব পাঠালে ভারত তাতে সম্মতি দেয়। আত্মপ্রচারে পারদর্শী ট্রাম্প কিন্তু ইজরায়েল-প্যালেস্তাইন সংঘাত বন্ধে কোনও উদ্যোগ নেননি। এমনকী ইজরায়েলের অমানবিক হামলার কোনও প্রতিবাদ তো দূরের কথা, অস্ত্র বিক্রি করে যুদ্ধে ইন্ধন জুগিয়ে চলেছে।
পাহেলগামের হত্যাকাণ্ডের পর সন্ত্রাসবাদের নিন্দা না করে ‘বন্ধু’ পকিস্তানকে বাঁচাবার চেষ্টা করে চলেচেন ট্রাম্প। ভারতের পাল্টা প্রত্যাঘাতে পাকিস্তানের যখন নাস্তানাবুদ অবস্থা, তখন সংঘর্ষ বিরতির জন্য আমেরিকা সক্রিয় হয়ে ওঠে। অন্যদিকে ইজরায়েলের হামলায় প্যালেস্তাইনের সাধারণ নাগরিক এবং ছোট ছোট শিশুরাও যকন মৃত্যুশিবিরে নাম লেখাচ্ছে তখন আমেরিকার কোনও হুঁশ নেই।
এতদিন ইজরায়েলের মুখে শোনা যাচ্ছিল, প্যালেস্তাইনের গাজা উপত্যাকার সাধারণ নাগরিক নয়, তাদের লক্ষ্য হামাস-যোদ্ধারা। হামাসের ঘাঁটি লক্ষ্য করে ক্ষেপণাস্ত্র ও বোমা ফেলা হয়েছে। এমনকী একের পর এক হাসপাতালে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপের পরও ইজরায়েল সাফাই দিয়েছে, ওই হাসাপাতালগুলির নিচে হামাসের ঘাঁটি রয়েছে। এবার শোনা যাচ্ছে অন্য কথা। হামাস নয়, প্যালেস্তাইনের শিশুরাই তাদের টার্গেট। শত্রু হামাস কিংবা অন্য সশস্ত্র গোষ্ঠী নয়, গাজার প্রতিটি শিশুই ইজরায়েলের শত্রু। এই শহর পুরোপুরি দখল করে নিজেদের কলোনি না বানানো পর্যন্ত যুদ্ধ চলবে। গাজার একটি শিশুও যাতে বেঁচে না থাকে তা নিশ্চিত করে জয় আনতে হবে। প্রকাশ্য এক সাক্ষাৎকারে ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু সরকারের ঘনিষ্ঠ জেহুত পার্টির নেতা মোশেফেইগলিন এই গণহত্যার ডাক দিয়েছেন। ভাবতে অবাক লাগে, যারা মানবাধিকারের বড়াই করে তাদের মুখে খোলাখুলি শিশু হত্যার আস্ফালন। কোনও সভ্য সমাজ এমনভাবে ভাবতে পারে, এটা কল্পনারও অতীত। গাজায় ইজরায়েলের শিশু গণহত্যার বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে মুখ খুলতে শুরু করেছে দেশের বিভিন্ন মূল স্রোতের বিরোধী রাজনৈতিক দল। গাজায় শিশুদের মৃত্যুমিছিল চলছে বলে কটাক্ষ করেছেন ইজরায়েলের নেতানিয়াহু বিরোধী মধ্য বামপন্থী ডেমোক্রাট পার্টির নেতা ইয়ার গোলান। তাঁকে কটাক্ষ করেই শিশু গণহত্যা চালানোর কথা বলেছেন ফেইগলিন। ‘ইজরায়েলের শাসকদের প্রকৃত চেহারা এটাই’ বলে মন্তব্য করেছেন আন্তর্জাতিক প্যালেস্তাইন সংহতি আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত বিশিষ্টজনেরা।
গাজা ও সন্নিহিত অঞ্চলে ইজরায়েলের ক্ষেপণাস্ত্র ও বোমা বর্ষণের মূল লক্ষ্য ছিল সাধারণ মানুষকে ভীত সন্ত্রস্ত করে এলাকা ছাড়তে বাধ্য করা। তবে স্কুলে হামলার ঘটনাতেই সব থেকে বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। অথচ যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে কানও বম্ব শেল্টার, ত্রাণশিবির, হাসপাতাল, শিক্ষাকেন্দ্রে হামলায় নিষেধাজ্ঞা জারি রয়েছে রাষ্ট্রসঙ্ঘ-সহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থার। যদিও এই সমস্ত বিধি-নিষেধ প্রথম থেকেই লঙ্ঘন করে চলেছে ইজরায়েল। গাজায় স্থায়ী দখল কায়েম করে সেখানের বাসিন্দাদের উচ্ছেদ করাই ইজরায়েলের ঘোষিত লক্ষ্য সেখানকার মানুষজনদের জন্য ত্রাণসামগ্রী, বিশেষ করে খাবার, পানীয় জল, ওষুধ ইত্যাদি রাষ্ট্রসঙ্ঘের তরফ থেকে পাঠালেও তা গাজায় ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। চাষাবাদ বন্ধ করার জন্য সমস্ত চাষযোগ্য জমি নষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। যাবতীয় ত্রাণের ট্রাকে আংশিক অবরোধ চাপিয়ে রেখেছে ইজরায়েল। ইজরায়েলের তৈরি এই কৃত্রিম আকালের সঙ্গে সাধারণ মানুষের মোকাবিলা করার যাবতীয় মাধ্যম বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ফলে সেখানে এখন খাদ্য ও পাণীয়র জন্য হাহাকার দেখা দিয়েছে। এভাবেই প্যালেস্তানীয় জনগণকে কার্যত শেষ করার কাজকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে ইজরায়েল। কেটে তাদের বাধা দিচ্ছে না। কোনও দেশ বা রাষ্ট্রসঙ্ঘ তাদের দমাতে পারছে না। ডোনাল্ড ট্রাম্পও এই বিরোধে নিশ্চুপ।