• facebook
  • twitter
Tuesday, 19 August, 2025

চতুরঙ্গ

‘প্রথম মাটিতে গড়া হয়ে গেছে শেষ মানুষের কায় / শেষ নবান্ন হবে যে ধান্যে তারো বীজ আছে তায়। / সৃষ্টির সেই আদিম প্রভাতে লিখে রেখে গেছে তাই, / বিচার-কর্ত্রী প্রলয় রাত্রি পাঠ যা করিবে ভাই।’

প্রতীকী চিত্র

পূর্ব প্রকাশিতর পর

ভাবতে আশ্চর্য লাগে, কবিরূপে যে ব্যক্তি বিশ্বজগতে বিখ্যাত, তিনি আসলে ছিলেন বৈজ্ঞানিক। শুধু তাই নয়, বিটস্জেরাল্ডের মাধ্যমে ইয়োরোণে প্রচারিত হবার পূর্বেই ওমরের বিজ্ঞানচর্চা ফ্রান্সে অনূদিত হয়ে সেখানে তাঁর খ্যাতি সুপ্রতিষ্ঠিত করেছিল। বর্তমান লেখক এসব লেখা দেখবার সুযোগ পায়নি, তাই এনসাইক্লোপীডিয়ার ‘কোনিক্ সেক্শন’ অনুচ্ছেদ থেকে ইয়োরোপে ওমরের বৈজ্ঞানিক যশ সম্বন্ধে উদ্ধৃতি দিচ্ছি—

“Greek mathematics culminated in Apollonius. Little further advance was possible without new methods and higher points of view. Much later, Arabs and other Muslims absorbed the classical science greedily; it was the Persian poet Omar Khayyam, one of the most prominent mediaeval mathematicians, with his remarkable classification and systematic study of equations, which he emphasized, who blazed the way to the modern union of analysis and geometry. In his “Algebra” he considered the cubic as soluble onlyu by the intersection of concis, and the biquadratic not at all.”

শেষ ছত্রটির বাঙলায় অনুবাদ মূল ইংরিজি, এমন কি আধুনিক বাঙলা কবিতার চেয়েও শক্ত হয়ে যাবে বলে গোটা টুকরোটাই অতি অনিচ্ছায় ইংরিজিতেই রেখে দিতে বাধ্য হলুম। বৈজ্ঞানিক পাঠক বিনা অনুবাদেই এটি বুঝতে পারবেন, প্রাঞ্জল অনুবাদেরও আমাদের মত অবৈজ্ঞানিকের কোনো লাভ হবে না।

ইরানোর অধিকাংশ গুণীই একমত যে, ওমর তাঁর জীবনের প্রায় সব সময়টুকুই কাটিয়েছেন বিজ্ঞানচর্চায় এবং অতি অল্প সামান্য সময় ‘নষ্ট’ করেছেন কাব্যলক্ষ্মীর আরাধনায়। তাই দীর্ঘ কবিতা লেখবার ফুরসৎ তাঁর হয়ে ওঠেনি— এমন কি রুবাঈগুলোও গীতিরস দিয়ে সরস করবার প্রয়োজন তিনি অনুভব করেননি।

গণিত এবং বিশেষ করে জ্যোতিষচর্চার ফল ওমরের কাব্যে পদে পদে পাওয়া যায়। বস্তুতঃ গ্রহ-নক্ষত্র যে অলঙ্ঘ্য প্রাকৃতিক নিয়মে চলে তার থেকেই তিনি দৃঢ় মীমাংসায় উপনীত হন যে, মানুষেরও কোনো প্রকারের স্বাধীনতা নেই, তার কর্মপদ্ধতি স্বেচ্ছায় নিয়ন্ত্রণ করার কোনো অধিকারই সে পায়নি। তাই—

‘প্রথম মাটিতে গড়া হয়ে গেছে শেষ মানুষের কায় / শেষ নবান্ন হবে যে ধান্যে তারো বীজ আছে তায়। / সৃষ্টির সেই আদিম প্রভাতে লিখে রেখে গেছে তাই, / বিচার-কর্ত্রী প্রলয় রাত্রি পাঠ যা করিবে ভাই।’ (সত্যেন দত্ত)
‘পৃথ্বী হ’তে দিলাম পাড়ি, নভঃগেহে মনটা লীন— / সপ্ত-ঋষি যেথায় বসি ঘুমিয়ে কাটান রাত্রি দিন। / বিদ্যাটা মোর উঠলো ফেঁপে কাটলো কত ধাঁধার ঘোর—/ মৃত্যুটা আর ভাগ্যলিখন—ওইখানে গোল রইল মোর।’ (কান্তি ঘোষ)

কিন্তু এস্থলে আমি ওমর-কাব্যের মল্লিনাথ হবার দুরাশা নিয়ে পাঠকের সামনে উপস্থিত হইনি। ওমরের নাম প্রচলিত প্রায় ছ’শ’টি রুবাইয়াৎ ইরানী বটতলাতেও পাওয়া যায়—পার্টিশনের পূর্বে কলকাতার ফার্সী বটতলা তালতলা অঞ্চলেও পাওয়া যেত। তার অতি অল্পই অনুবাদ করেছেন ফিটসজেরাল্ড এবং সেই ছ’শ’-র ক’টি কবিতা ওমরের নিজস্ব, তাই নিয়ে পণ্ডিতদের মধ্যে বাক্-বিতণ্ডা এখনো শেষ হয়নি—আমার বিশ্বাস কখনো হবে না। সেই ছ’শ’ চতুষ্পদীর টীকা পড়ার উৎসাহ ও ধৈর্য রসিকজনের থাকার কথা নয়— পণ্ডিতের থাকতে পারে। আমি রসিকের সেবা করি।

(ক্রমশ)