পূর্ব প্রকাশিতর পর
সমাধি, রাজপ্রাসাদ, বিজয়স্তম্ভ সম্বন্ধে শাস্ত্রের কোনো বাধাবন্ধক নেই। তাই সেগুলোতে এ অপরিপূণ:তা থাকা মারাত্মক। সচরাচর থাকেও না।
পূর্বেই নিবেদন করেছি সার্থক স্থাপত্য যে-কোনো জায়গাতে, যে-কোনো দৃষ্টিবিন্দু থেকে দেখা যায়। কিন্তু তবু প্রশ্ন ওঠে, সব চেয়ে ভালো কোন্ জায়গা থেকে দেখা যায়? উচ্চাঙ্গ মোগল স্থাপত্যমাত্রেই স্থপতি এর নির্দেশ নিজেই দিয়ে গিয়েছেন। স্থাপত্যে পৌঁছবার বেশ কিছুটা আগে যে প্রধান তোরণদ্বার (দেউড়ি গেট-ওয়ে) থাকে—এরই উপর নহবৎখানা তারঠিক নীচে দাঁড়ালেই স্থাপত্যের পরিপূর্ণ সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন। সাধারণত ছবি এ-জায়গা থেকেই ভালো ওঠে। আর যদি নিজের রসবোধ তার সঙ্গে সংযোজন করতে চান, তবে একটু পিছিয়ে গিয়ে দেউড়ির আর্চসুদ্ধ ছবি তুললে তাতে ‘ঈসথেটিক ইফেক্ট’ আসবে—যদিও মূল স্থাপত্যের কিছুটা হয়ত তাতে করে কাটা পড়বে।
এ সম্বন্ধে আরো অনেক কিছু বলার আছে, কিন্তু আমার মনে হয় স্থাপত্য দেখার সঙ্গে সঙ্গে প্রসঙ্গতঃ সে আলোচনা তোলাই সঙ্গত।
দিল্লীর স্থাপত্য তার রাজবংশানুযায়ী ভাগ করা যায়।
১। দাস বংশ— কুৎব্ মিনার,কুওওতুল-ইসলাম মসজিদ, ইলতুতমিশের সমাধি। (কুওওতুল-ইসলাম মসজিদের আঙ্গিনায়—সেহনে—চন্দ্ররাজা নির্মিত একটি শতকরা নিরানব্বই ভাগের লৌহস্তম্ভ আছে। এটি ও মসজিদের থামগুলো হিন্দুযুগের।)—সবকটি কুৎবের গা ঘেঁষে।
২) খিলজী-বংশ— আলাউদ্দীন খিলজী নির্মিত ‘আলা-ই-দরওয়াজা’— কুৎবের গা ঘেঁষে। আলাউদ্দীন কিংবা তাঁর ছেলের (‘দেবলা-দেবীর’ বল্লভ) তৈরী মসজিদ—দিল্লী-মথুরা ট্রাঙ্ক রোডের উপর। (নিউ দিল্লী থেকে মাইল খানেক) নিজামউদ্দীন আউলিয়ার দরগার ভিতর।
৩) তুগলুক-বংশ— গিয়াসউদ্দীন তুগলুক নির্মিত আপন সমাধি— কুৎব থেকে মাইল তিনেক দূরে তাঁর-ই নির্মিত তুগলুকাবাদের সামনে। তুগলুকাবাদ।
ফিরোজ তুগলুক নির্মিত হাউজ খাস—দিল্লী থেকে কুৎব যাবার পথে রাস্তার ডান দিকে। ফিরোজ নির্মিত ফিরোজশাহ্-কোট্লা,—দিল্লী এবং নয়াদিল্লীর প্রায় মাঝখানে (অন্যান্য দ্রষ্টব্যের ভিতর এখানে আছে একটি অশোকস্তম্ভ; পিরোজ এটাকে দিল্লীতে আনিয়ে উঁচু তমরাং বানিয়ে তার উপরে চড়ান)।
৪। সৈয়দ এবং লোদীবংশ—লোদী গার্ডেনস্—নয়াদিল্লীর লোদী এসটেটের গা ঘেঁষে—ভিতরে আছে, (ক) মুহম্মদ শাহ সৈয়দের কবর, (খ) সিকন্দর লোদীর তৈরী মসজিদ এবং মসজিদের প্রবেশগৃহ, (গ) অজানা কবর এবং (ঘ) সিকন্দর লোদীর কবর।
ইসা খানের কবর—হুমায়ুনের কবরের বাইরে। যদিও পরবর্তী যুগের, তবু লোদীশৈলীতে তৈরী।
৫) মোগল-বংশ—বাবুর কিছু তৈরী করার সময় পাননি। কেউ কেউ বলেন, পালম এ্যারপোর্টের সামনে যে দুর্গের মতো সরাই এটি তাঁর হুকুমে তৈরী। এতে দ্রষ্টব্যকিছুই নেই।
হুমায়ুনও এক ‘পুরানা কিলা’ (ন্যাশনাল স্টেডিয়ামের পিছনে) ছাড়া কিছু করে যেতে পারেননি। পুরনো কেল্লারও কতখানি তাঁর, কতখানি শের শা’র, বলা শক্ত। কেল্লার ভিতরে মসজিদটি কিন্তু শের শা’র তৈরী এবং এর শৈলী পাঠান মোগল থেকে ভিন্ন। (সাসারামের শেরের কবর সৈয়দ-লোদী শৈলীতে)।
(ক্রমশ)