ব্রাত্য ‘সুস্থিতি’

রাষ্ট্রসংঘের সেক্রেটারি জেনারেল অ্যান্টনিও গুতেরেস এবার মায়ানমার, আফগানিস্তান ও ইথিওপিয়াকে একই স্তরে নামালেন।তিন দেশে ‘সুস্থিতি’ ও ‘শান্তি’ ব্রাত্য।

Written by SNS Kolkata | October 3, 2021 11:05 pm

রাষ্ট্রসঙ্ঘের সদর দপ্তর (File Photo: iStock)

রাষ্ট্রসংঘের সেক্রেটারি জেনারেল অ্যান্টনিও গুতেরেস এবার মায়ানমার, আফগানিস্তান ও ইথিওপিয়াকে একই স্তরে নামিয়ে আনলেন। এই তিন দেশে ‘সুস্থিতি’ ও ‘শান্তি’ শব্দটি ব্রাত্য। লিবিয়া এবং সিরিয়ার অশান্ত পথ অনুসরণ করে কাবুলেও তালিবানরা বন্দুকের গুলির সাহায্যে ক্ষমতা দখল করেছে, আর একই অবস্থা মায়ানমারেও।

গুতেরেস দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার অশান্ত ও সমারিক শাসনাধীন এই দেশের মানুষের গণতন্ত্র, শাস্তি, মানবাধিকার ও আইনের শাসন ফিরিয়ে আনার জন্য আন্দোলনকে সম্পূর্ণভাবে সমর্থন করেন বলে মন্তব্য করেছেন।

তিনি এমন মতও প্রকাশ করেছেন যে রাষ্ট্র সংঘ মায়নামারের নতুন শাসকের বিরুদ্ধে এক দৃষ্টান্তমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করতে চলেছে, কারণ আগস্টে সামরিক অভ্যুত্থান ঘটিয়ে ক্ষমতা দখলের পিছনে রাশিয়া ও চিনের হাত রয়েছে বলেও তিনি ইঙ্গিত দিয়েছেন।

মায়নমারের সামরিক শাসক রাশিয়া ও চিন থেকে যাবতীয় অস্ত্রশস্ত্র সরবরাহ গ্রহণ করছেন। এছাড়া দুই দেশই আদর্শগতভাবে জুন্টা শাসনের প্রবল সমর্থকও। ফলে রাষ্ট্র সংঘের নিরাপত্তা পর্ষদের সদস্য হিসেবে দুই দেশই জুন্টা সরকারের বিরুদ্ধে রাষ্ট্র সংঘের যেকোনও পদক্ষেপের বিপক্ষে ভেটো প্রদানে উদ্যোগী হবে তা নিশ্চিত।

উল্লেখ্য ১৯৯০ সালের পর থেকে মায়নামার থেকে ‘সুস্থিতি’ ও ‘শান্তি’ শব্দটি উধাও। সু চি’র নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসি নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় এলেও জুন্টা নেতৃত্বাধীন সামরিক বাহিনী সম্পূর্ণ কর্তৃত্ব ও ক্ষমতা হস্তান্তরে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। ফলে গণতন্ত্রের নামে সামরিক বিভাগেরই শাসন কায়েম থাকে ও আরও উন্নত সামরিক শাসন চালু রাখা সম্ভব হয়। সামরিক কর্মীদের ক্ষমতা সেখানে অবিংসবাদী।

সামরিক বাহিনী নির্বাচিত সু চি’র সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করে তখন নির্বাচনকে এক ভাওতা বলে আখ্যা দেয়। ফলে নির্বাচনের কোনও প্রমাণই আর রাখা হয়নি। তবে সামরিক বাহিনীর ক্ষমতা দখলের পরবর্তী সময়ে মানুষ রাস্তায় নেমে বন্দুকের সামনে দাঁড়িয়ে প্রতিবাদ জানাতে থাকে।

এতে এরই মধ্যে সামরিকবাহিনীর গুলিতে এগারো শত মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন বলে রাষ্ট্র সংঘের মানবাধিকার কমিশনের পক্ষে মিচেল বাসলেট জানিয়েছেন। সামরিকবাহিনীর দ্বারা মায়ানমারে এমন অশান্ত পরিবেশ সৃষ্টির ফলে গৃহযুদ্ধ শুরু হয়ে গিয়েছে।

কিন্তু রাষ্ট্র সংঘ মায়ানমারে সুস্থিত ও শান্ত স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনতে তেমন কোনও সদর্থক পদক্ষেপ এখনও গ্রহণ করতে ব্যর্থ হয়েছে। এত মানুষের সামরিক বাহিনীর গুলিতে প্রাণ হারানোর পরও রাষ্ট্র সংঘ অসহায় দর্শকের ভূমিকা পালন করছে বলে মানবাধিকার কমিশনের পক্ষে বাসেলেট মন্তব্য করেছেন।

সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত বিক্ষোভ দমনে সমারিক বাহিনীর মারণ পদক্ষেপের নিন্দা করেছে বিশ্বের সকল শান্তিকামী ও গণতন্ত্রকামী দেশ। রাষ্ট্র সংঘের সেক্রেটারি জেনারেলের জুন্টা সরকারের প্রতি আবেদনও যে অত্যন্ত নিরীহ এক আবেদন হিসেবে বাতিল হয়েছে তা বলাই বাহুল্য।