পূর্ব প্রকাশিতর পর
এই কেশৈলে তথাকার বিচারকর্তা কাঙ্গালি ব্রাহ্মণের হারানিয়া মুদ্রা দেওয়াইলে ব্রাহ্মণ বড়ই সন্তুষ্ট হইয়া তাঁহাকে আশীর্বাদ করিয়া প্রস্থান করিলেন।
সংগ্রাহক— (পাদরী) উইলিয়ম কেরী
ঘ. এক অবীরা স্ত্রীলোকের ভদ্রাসনে বৃক্ষ ছিল। তাহার এক ফল চোরে অপহরণ করিয়াছিল। তাহাতে ঐ স্ত্রীলোক অতি দুঃখিতা হইয়া রাজার নিকটে অভিযোগ করিলেক। রাজা অতি দুঃখিনী দেখিয়া ঐ গ্রামস্থ সকল লোককে আনয়ন করিয়া প্রত্যেককে জিজ্ঞাসা করিলেন। কেহ স্বীকার করিলেক না। পরে রাজা তর্কের পংক্তির ন্যায় সকল লোককে দন্ডায়মান করাইয়া ঐ স্ত্রীলোককে কহিলেন, ‘তোমার পনস ফল যে চুরি করিয়াছে তাহার মস্তকে পনসের অঙ্কুর হইয়াছে।’’ এই কহিবামাত্র চোর মস্তকে হস্ত প্রদান করিল। রাজা ইহা দেখিয়া চোর নিশ্চয় করিলেন। পরে ঐ চোর হইতে শাস্তিপূর্ব্বক মূল্য লইয়া ঐ স্ত্রী-লোককে তুষ্ট করিয়া গৃহে প্রস্থান করাইলেন।
অতএব পন্ডিতেরা কহিয়াছেন বুদ্ধি যাহার বল তাহার ইতি।
সংগ্রাহক— (পাদরী) উইলিয়াম কেরী
বাংলার শব্দভান্ডার
ভাষার শক্তিবৃদ্ধি ও প্রসার হয় তাহার ব্যবহারকারীর সংখ্যাধিক্যের উপর। ভাষার ব্যবহার দু’রকমের। এক, মুখে বলা ও দুই, কাগজে লেখা ও লেখায় প্রকাশ করা। আধুনিক ভারতীয় আর্য ভাষাগুলির মধ্যে বাংলা সর্বাধিক অগ্রসর। সুতরাং এ ভাষার শব্দ সমৃদ্ধ। যে কোনও ভাষায় শব্দসংখ্যা বৃদ্ধি পায় দু উপায়ে। এক উপায় হল বিদেশী ভাষার শব্দ আত্মসাৎ করা। অন্য উপায় হল নিজস্ব একাধিক শব্দ গেঁথে গেঁথে নূতন শব্দ নির্মাণ করা। বাংলা ভাষার শব্দ ভান্ডারের বৃদ্ধি দু উপায়েই হয়েছে। তবে প্রথম উপায়ে কম, দ্বিতীয় উপায়ে খুব বেশি হয়েছে।
বাংলায় বিদেশী ভাষা শব্দের আমদানি শুরু হয়েছিল এদেশে মুসলমান অভিযানের সময় থেকে অর্থাৎ দ্বাদশ শতাব্দীর শেষ থেকে। এদেশে প্রথম অভিযান করেছিল তুর্কীরা। (এরা সকলে মুসলমান ছিল না)। এদের প্রভাবে কিছু তুর্কী শব্দ বাংলায় ঢুকে যায়।যেমন, ‘তুরুক’ বা ‘তুড়ুক’ (মানে মুসলমান সেনা), তকমা, বোঁচকা, বাগ, ক্রোক, কাঁচি।
ফারসী এবং ফারসীর মারফৎ আরবী শব্দ প্রচুর প্রবেশ করেছে। এই প্রবেশ পথ খোলা ছিল ঊনবিংশ শতাব্দীর তৃতীয় দশক পর্যন্ত। তারপর চতুর্থ দশকে ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি দেশের রাজস্ব আদায়ে ও শাসনকার্যে ফারসী ভাষার একচেটে ব্যবহার একেবারে বন্ধ করে দেওয়ার পর থেকে যথাসম্ভব দ্রুতবেগে ফারসী শব্দের ব্যবহার কমে যেতে থাকে এবং ফারসীর স্থান নেয় ইংরেজী শব্দ। এখন পর্যন্ত যেসব ফারসী শব্দ বাংলায় সুপ্রচলিত তার কিছু নমুনা দিই—
আ: আইন, আদায়, আয়না, আমল আসল। ই: ইজারা, ইজের, ইস্তাহার।
উ: উসুল, উকিল, উজির। এ: এন্তার। ও: ওস্তাদ। ক: কসুর, কিল্লা, কিতাব, কিস্তি। খ: খনি, খাস্তা, খুসি, খেসারৎ, খোরপোষ, খোরাক। গ: গুনাগার। চ: চরকা, চশমা। জ: জমা, জমি। ত: তালুক, তালাক, তক্তা, তোপ, তোষাখানা। দ: দম, দরকার, দরদালান, দরখাস্ত। ন: নকল, নমাজ, নাচার, নাবালক, নিকাশ। প: পীর, পয়জার, পয়সা, পেশা, পেশকার।
(ক্রমশ)