শোভনলাল চক্রবর্তী
গোল্ডম্যান স্যাকস-এর রিপোর্ট অনুযায়ী, ৩০০ মিলিয়ন কাজ গিলে নেবে এআই, আগামী কয়েক বছরের মধ্যে। সংখ্যাটা সহজ করি। ৩০ কোটি। প্রতিদিনের বেঁচে থাকাকে আরও সহজ করে দেওয়ার জন্য কোমর বেঁধে নেমে গিয়েছে বিভিন্ন এআই পরিষেবা। যার নবতম সংযোজন চিনা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কোম্পানি ডিপসিক।আজ যে কোনও নেট ব্যাঙ্কিংয়ের ওয়েবসাইট খুললেই পর্দার কোণ থেকে ঝটিতি উদয় হয় চ্যাটবট। জিজ্ঞেস করে, “বলো, কী চাই তোমার? আমি অফুরান কান পেতে বসে আছি।” ব্যাঙ্কের আধিকারিক ফোন করে বলেন, “অনেক দিন তো ব্রাঞ্চে আসেন না স্যর। সব যদি এআই করে দেয়, আমাদের চাকরির কী হবে?” অনলাইন কোচিংয়ের অ্যাপে কোনও বিষয় নিয়ে বুঝতে অসুবিধে থাকলে, ডাউট ক্লিয়ারিং সেশন করে দিচ্ছেন এআই মাস্টারমশাই। নার্সারির স্কুল বলছে, আমাদের এখানে লার্নিং হবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তামাখা। শীতাতপ-নিয়ন্ত্রিত এআই ক্লাসরুম। মফস্সলে গজিয়ে ওঠা নার্সিং হোম বলছে, “শুধু ডাক্তারের উপরে ভরসা করার দিন শেষ, তাঁর সঙ্গে হাত মিলিয়ে এসে গিয়েছে রোবোটিক সার্জারি।” অনলাইন খুচরো বিপণির কলার তোলা দাবি, “এ বার ছাড়িয়ে দিন মালতী, জবা, মঞ্জুকে। পেশ করা হচ্ছে এআই-এনএবল্ড হাউসক্লিনার। আপনার শিডিউল করা সময়ে ঘর ঝাঁট দিয়ে, ভ্যাকুয়াম করে দেবে ঝটপট। কামাই নেই। শরীর খারাপের ছুটি নেই। পুজোয় বোনাস নেই। আর অপেক্ষা কিসের। এখনই আবেদন করুন।” বিশ্বের বহু তাবড় সংস্থায় উচ্চপদে নাকি আজকাল নিয়মিত নিয়োগ করা হচ্ছে রোবট। ডেটা অ্যানালিসিস, ডেটা ইন্টারপ্রিটেশনে এরা খুলে দিচ্ছে অচেনা, অদেখা পথ। বলে দিচ্ছে, “তোমার সংস্থার এত লোক বাড়তি। আমি এসে গিয়েছি। সুতরাং, ফুটিয়ে দাও ওদের, জলদি।” রোবটের পেশ করা সংস্থার সম্ভাব্য লাভ-ক্ষতির হিসাবে খেলা করছে সবুজ, আরও গাঢ় সবুজ। হান্ড্রেড পার্সেন্ট লাভ, লাভ, লাভ! কোটি টাকার খেলনার রায়ে কর্মহারা হচ্ছেন অগুনতি মানুষ, পৃথিবী জুড়ে, প্রতিদিন। হার্ভার্ড বিজ়নেস রিভিউ-এর একটি সমীক্ষা জানান দিচ্ছে, “টিকটক এবং ইনস্টাগ্রামকে পিছনে ফেলে দিয়ে চ্যাটজিপিটি আজকের দুনিয়ার সবচেয়ে দ্রুতগতিতে বেড়ে চলা অ্যাপ্লিকেশন, ফাস্টেস্ট গ্রোয়িং। তাদের বক্তব্য, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার এই প্রয়োগগুলো মানুষের বুদ্ধির তুলনায় আরও ভাল কিংবা স্মার্ট, তা নিয়ে বিতর্ক করার আর কোনও মানে নেই।”
সম্প্রতি জার্মানিতে এক গবেষক দল রসায়নশাস্ত্র এবং কৃত্রিম বুদ্ধির সমাহারে একটি পরীক্ষা চালিয়েছেন। হুইস্কির স্বাদগন্ধের পরীক্ষা। রসিকজনে বিলক্ষণ জানেন, সেই পরীক্ষা কত কঠিন। বিজ্ঞানের কাছে তার সূত্র আছে— চল্লিশটির বেশি ‘কম্পাউন্ড’ বা যৌগের মিশেলে তৈরি পানীয়ের মধ্যে সেই উপকরণগুলির অন্তর্নিহিত অণু-বিন্যাসের উপর নির্ভর করে তার নিজস্ব চরিত্র। কিন্তু ঘ্রাণ এবং আস্বাদনের ভিত্তিতে সেই চরিত্র অনুধাবন করা এবং বিভিন্ন গোত্রের পানীয়কে চিনে নেওয়ার বিদ্যাটি বিশ্ব জুড়ে এক উচ্চাঙ্গের শিল্প হিসাবেই সম্মানিত হয়ে থাকে। সেই শিল্পে পারঙ্গমতা অর্জনের জন্য কেবল কঠোর প্রশিক্ষণই জরুরি নয়, সংশ্লিষ্ট ইন্দ্রিয়গুলিকে সযত্নে সুস্থ ও সতেজ রাখাও অত্যাবশ্যক— তার জন্য যথেষ্ট কৃচ্ছ্রসাধনও করতে হয়। বস্তুত, অন্য সমস্ত শিল্পচর্চার মতোই এই রসাস্বাদনের ক্ষেত্রেও যাঁরা যথার্থ কৃতী বলে গণ্য হন, তাঁদের দক্ষতাকে পুরোপুরি অনুশীলনের মাত্রা দিয়ে ব্যাখ্যা করা কঠিন। ধরেই নেওয়া হয় যে প্রশিক্ষণের সঙ্গে সঙ্গে তাঁদের কোনও বিশেষ নিজস্ব বোধ বা অনুভূতি এ ক্ষেত্রে কাজ করে এবং এই ‘ব্যাখ্যাতীত’ সামর্থ্যের উৎসকেই বলা হয় ষষ্ঠ ইন্দ্রিয়। এই কারণেই চা হোক বা সুরা হোক, বিভিন্ন পানীয়ের চরিত্র ও উৎকর্ষ বিচারের কাজটিতে যাঁরা পারদর্শী, তাঁদের সংখ্যা সচরাচর সীমিত এবং তাঁদের কদরও সেই অনুপাতেই বেশি। এখানেই জার্মানিতে আয়োজিত পরীক্ষাটির তাৎপর্য। এই পরীক্ষায় দেখা গিয়েছে, যন্ত্রমেধার ভিত্তিতে তৈরি অ্যালগরিদম বা গণনাসূত্র কাজে লাগিয়ে বিভিন্ন ধরনের হুইস্কির চরিত্র বিচারের কাজটি চমৎকার সম্পন্ন করা গিয়েছে এবং কোনও কোনও বিষয়ে, বিশেষত গন্ধ বিচারের ক্ষেত্রে, সেই প্রযুক্তি মানুষের থেকেও বেশি পারঙ্গম। কৃত্রিম বুদ্ধির দৌড় যেভাবে ক্রমশই দ্রুততর হয়ে চলেছে, তাতে অনুমান করা যেতে পারে যে অদূর ভবিষ্যতে অন্যান্য দিক থেকেও পানীয়ের সূক্ষ্মবিচারে মানুষ উত্তরোত্তর পিছিয়ে পড়বে। বিশেষজ্ঞদের মতে, তার পরেও এই কাজে মানুষের প্রয়োজন ফুরোবে না, কারণ মানব ইন্দ্রিয়ের অনুভূতিগুলিকে পর্যালোচনা করেই যন্ত্রমেধা তার কাজ করতে পারে, তাই মানুষ ছাড়া সে মানুষী অনুভূতি শিখতে পারবে না। কিন্তু তার পরেও প্রশ্ন থেকে যায়। প্রযুক্তি যদি এমন একটি স্তরে পৌঁছয়, যার পরে মানব-অনুভূতির মতোই ‘যন্ত্র-অনুভূতি’র নিজস্ব পরিসর তৈরি হয়ে যাবে? এবং— ভাবতেও ভয় হতে পারে— সেই যান্ত্রিক অনুভূতিই মানুষকে আদ্যোপান্ত চালনা করবে? তখন, সেই কৃত্রিম বুদ্ধি শাসিত দুষ্কল্পলোকে, মানবিক ইন্দ্রিয়গুলির প্রয়োজনই হয়তো বা ফুরিয়ে যাবে। অসম্ভব? অবিশ্বাস্য? এই দুর্ভাবনা এক বছর আগে যতটা অসম্ভব এবং অবিশ্বাস্য ছিল, আজও কি ততটাই আছে?
ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তায় মজে যাওয়া বহু মানুষ হাল আমলে ভয়ঙ্কর সুন্দর ই-মেল লিখছেন, বহু শব্দের বিন্দুবিসর্গও না জেনে। কোনও রকমে ভুল ইংরিজিতে কয়েক লাইন লিখে এআই প্ল্যাটফর্মে আদেশ করছেন, “এটাকে আরও বেশি কমপ্যাক্ট করো, অর্নামেন্টাল করো। রাইট এ বিট স্টাইলিশ।” যা ফুটে আসছে পর্দায়, কপি পেস্ট করে দিচ্ছেন পত্রপাঠ। কাঁচা ডেটা সম্বলিত এক্সেল ফাইল কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার চরণে দিয়ে অনেকে বানিয়ে নিচ্ছেন দুর্দান্ত পাওয়ারপয়েন্ট প্রেজ়েন্টেশন। উপরমহলে তাক লাগিয়ে দিচ্ছেন, পদোন্নতি পাচ্ছেন বিদ্যুৎগতিতে। এআই-এর ব্যবহার শিখতে না পারা সহকর্মীরা আঙুল কামড়াচ্ছেন। অকর্মণ্য প্রমাণিত হয়ে চাকরি ছাড়ার নোটিস পাচ্ছেন। কলকাতার নামজাদা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক পরিচিত অধ্যাপক দিনকয়েক আগে বলছিলেন, “পিএইচ ডি থিসিসও লিখে দিচ্ছে এআই। কোথা থেকে কতটুকু কপি করা, তা বুঝে উঠতে আমরা হিমসিম খাচ্ছি। নকল ধরা, অর্থাৎ প্লেজিয়ারিজ়ম আটকাতে কয়েকটা সফ্টওয়্যার ব্যবহার করি। কিন্তু এগুলো দীর্ঘ দিন অপুষ্টিতে ভোগা, মুমূর্ষু রোগীর মতো। কিছুই করতে পারে না। আশ্চর্যের বিষয় হল, এদের উন্নতির জন্য এক গ্লাস সিরাপ খাওয়ালে আধুনিক এআই প্ল্যাটফর্ম পান করে নেয় এক সমুদ্দুর। ফলে আমরা যে তিমিরে ছিলাম, এখনও আছি সেই তিমিরেই। যাদের নামের আগে ডক্টরেট চিহ্ন বসছে, আমিই দিচ্ছি, ছাই ঘেঁটে দেখে নিতে ইচ্ছে করে পাপ ছিল কি না। কিন্তু আমাদের হাতে-পায়ে শেকল।”
শুধু যন্ত্রের মতো বুদ্ধিমান না হতে পারার জন্য, ভাত-রুটি হারানো মানুষের বেদনা কোনও দিন বুঝবে না এআই। তবে এখনও টিকে আছেন যাঁরা, তাঁদের মঙ্গলকামনায় নানা টোটকা দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা— যাঁরা এখনও আমাদের, হতভাগা রক্তমাংসের মস্তিষ্কের উপরে ভরসা রাখেন। তাঁরা বলছেন, “ইন্টেলেকচুয়াল কোশেন্ট, অর্থাৎ আই কিউ বাড়ানোর জন্য আর সময় নষ্ট করা বৃথা। আপনি যা শিখবেন, তার থেকে হাজার গুণ বেশি শিখে যাবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা পুরে দেওয়া রোবট। কত টেরাবাইট ডেটা হজম করা সম্ভব এক জন মানুষের পক্ষে?” মেশিনের ফাঁকফোকরগুলো বুঝে নিয়ে, কবীর সুমনের গানের সূত্র ধরে বলি, আগামী দিনগুলোকে সামনে রেখে সমঝে চলতে হবে আমাদের। হতে হবে মেশিনের থেকেও দামি, সীমিত সাধ্যে যেখানে যতটুকু সম্ভব। চাকরি টিকিয়ে রাখতে হলে হতে হবে আরও বেশি সামাজিক। কারণ, সামাজিক আদবকায়দায় যন্ত্র এখনও মানুষের থেকে পিছিয়ে রয়েছে যোজনখানেক। টিমের সঙ্গে মিশতে হবে আরও। ঘোড়সওয়ার যেমন ঠিকঠাক চাবুক মেরে ঘোড়াকে সঠিক পথে দৌড়তে বাধ্য করেন, ঠিক তেমন ভাবে ঠিকঠাক নির্দেশের মাধ্যমে এআই-কে আরও বেশি যুক্তিযুক্ত উত্তর দিতে বাধ্য করার চাবিকাঠি যেন আপনার হাতেই থাকে। দুনিয়া জুড়ে ব্যবহৃত হওয়া শুরু করেছে একটি লব্জ— প্রম্প্ট ইঞ্জিনিয়ারিং। এই কারিগরিবিদ্যা শিখিয়ে দেয় সঠিক চাবুক মারার কৌশল। প্রশ্নগুলো কতটা পাল্টালে, এআই-এর মাধ্যমে প্রাপ্ত উত্তরের উপরে কতটা পাল্টা প্রশ্ন করলে আরও নির্ভুল জবাব আসবে, তা নিয়ে গবেষণা হচ্ছে বিস্তর। চালু হয়ে গিয়েছে এ নিয়ে পড়াশোনা করার একটি নতুন স্ট্রিম। লোকেরা নাম লেখাচ্ছেন হ্যালোজেনের আলোয় আকৃষ্ট শ্যামাপোকার মতো। বিশেষজ্ঞরা আরও বলছেন যে বৌদ্ধিক বুদ্ধিমত্তার বদলে জোর দিতে হবে আবেগনির্ভর বুদ্ধিমত্তার উপরে। উদ্বায়ী যে টিম পড়ে রয়েছে এখনও বিভিন্ন সংস্থায়, তাদের সঙ্গে তৈরি করে নিতে হবে মানবিক সম্পর্ক। ‘আয় আরও বেঁধে বেঁধে থাকি’ না বলতে পারলে কর্মযজ্ঞে টিকে থাকার আর কোনও উপায় নেই আগামী দিনে।
কে বলতে পারে, নতুন বছরে দুনিয়ার নানা প্রান্তে যন্ত্রমেধার নতুন নতুন দিগ্বিজয়ের মধ্য দিয়ে এমন সব পরিণতিই দেখতে দেখতে সম্ভব, বিশ্বাস্য এবং বাস্তব হয়ে উঠবে না? প্রযুক্তি কেন বাধ্যতে। একে একে নিবিছে দেউটি। প্রযুক্তির ক্ষমতা মানুষের নিজস্ব সামর্থ্যের পরিসরগুলিকে ক্রমশই গ্রাস করে নিচ্ছে। শারীরিক ক্ষমতায় যন্ত্রের সঙ্গে প্রতিযোগিতার গল্প তো বহু কাল আগেই শেষ হয়ে গিয়েছে। মেশিনের প্রতিদ্বন্দ্বী হতে চেয়ে জন হেনরির পরিণতিতে যে বেদনার্ত মহিমা, তার কোনও অবকাশই আজ আর অবশিষ্ট নেই। মস্তিষ্ক তথা বুদ্ধির দৌড়েও যন্ত্র এবং প্রযুক্তির অকল্পনীয় উন্নতির সামনে মানুষী শক্তির সীমান্তগুলি নিরন্তর বিলীয়মান। অঙ্ক কষা থেকে দাবা খেলা, সর্বত্র রচিত হচ্ছে যন্ত্রমেধার নতুন নতুন দিগ্বিজয়ের কাহিনি। চ্যাটজিপিটি ও তার সমগোত্রীয় প্রকরণগুলি সেই কাহিনিতে এক নতুন মাত্রা যোগ করেছে, যার ফলে দৈনন্দিন জীবনের বহু ‘মাথার কাজ’-এও মানুষের প্রয়োজন দ্রুত, অতি দ্রুত কমে আসছে। গত এক বছরে তেমন নানা ‘আবিষ্কার’ দুনিয়ার মানুষকে বারংবার যুগপৎ চমৎকৃত এবং আতঙ্কিত করেছে। বহু ধরনের কাজে আর কোনও কর্মীর প্রয়োজন থাকবে কি না, থাকলেও সেই প্রয়োজন মুষ্টিমেয় মানুষ দিয়েই মিটিয়ে ফেলা যাবে কি না, এই প্রশ্ন এখন আর ভবিষ্যৎচিন্তার অঙ্গ নয়, ঘটমান বর্তমানের পদে পদে তা অনিবার্য হয়ে উঠছে। পাঁচটি ইন্দ্রিয়ের প্রত্যেকটির কাজ উত্তরোত্তর আয়ত্ত করে ফেলছে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা ‘এআই’, তাকে যন্ত্রমেধা বা কৃত্রিম বুদ্ধি যে নামেই ডাকা হোক না কেন। ৩৫ হাজার লোককে নিয়ে করা একটি সাম্প্রতিক আন্তর্জাতিক সমীক্ষা বলছে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার দৈনিক এক ঘণ্টা করে সময় বাঁচিয়ে দিচ্ছে আমাদের। তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্রে যাঁরা কাজ করছেন, তাঁদের সময় বাঁচছে দিনে ৭৫ মিনিট।
এরোস্পেস কিংবা প্রতিরক্ষা দফতরের কর্মীদের ক্ষেত্রে তা বাঁচছে কিছুটা কম। দৈনিক ৫২ মিনিট। এই বেঁচে যাওয়া সময় কিছু কর্মী ব্যয় করছেন কাজ নিয়েই আরও জটিল চিন্তা করার কাজে, ম্যানেজমেন্টের গুরুগম্ভীর ভাষায় যাকে বলা হয় ‘স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ক্রিটিকাল থিংকিং’। কেউ আবার বলছেন, এই বাড়তি সময়ে আরও আঁকড়ে ধরতে পারছেন পরিবারকে। উন্নত হচ্ছে কর্ম ও জীবনের ভারসাম্য। ২১ শতাংশ লোক অবশ্য বলেছেন, এই অতিরিক্ত সময়ে নিজেদের ব্যক্তিগত কাজ করছেন। হাল আমলের সামাজিক ব্যাকরণবিধি মেনে বলা যায়, আমাদের মধ্যেই ওই ২১ শতাংশ মানুষ নিজেকে আরও বেশি উজাড় করে দিচ্ছেন সামাজিক মাধ্যমে, ফেসবুক-ইনস্টাগ্রাম-টুইটারে। অথবা, চাকরি পাওয়ার অ্যাপে সিভি আপডেট করে চলেছেন প্রতিনিয়ত। বুঝে যাচ্ছেন, সংস্থায় তাঁদের প্রয়োজন ক্রমশ ফুরিয়ে এল বলে। সব কাজই রোবট করে দিলে মানুষ খাবে কী। আইএমএফ, অর্থাৎ ইন্টারন্যাশনাল মনিটরি ফান্ডের ম্যানেজিং ডিরেক্টর ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা নইলে কেন বলবেন, “সংস্থাগুলোর কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার আত্তীকরণ খেটে খাওয়া মানুষের উপরে সুনামির মতো আছড়ে পড়বে। আগামী দু’বছরের মধ্যে ৪০ শতাংশ চাকরিরত মানুষ এর ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। যে দেশগুলোর অর্থনৈতিক অবস্থা উন্নত, সেখানে এর প্রকোপ পড়বে ৬০ শতাংশ কর্মরত মানুষের উপরে।” এ সব পড়ে মনে হয়, কয়েক কোটি গুপি-বাঘা কাঁপতে কাঁপতে, ‘মুন্ডু গেলে খাবটা কী’ বলে শিহরন-মেশানো কোরাস গাইবেন, বিশ্ব জুড়ে। আঙুল উঁচিয়ে তুলবেন এমন যন্ত্রের দিকে, যে যন্ত্রের মস্তিষ্ক ক্রমশ হয়ে উঠবে মানুষের থেকেও বুদ্ধিমান।