দীর্ঘ টালবাহানার পর অবশেষে কিছুটা আশার আলো দেখছে ল্যান্সডাউন বাজারের পুনর্গঠন প্রকল্প। তবে সব কিছু এখনও সুগম নয়। মূলত ন’জন দোকানদারের দোকান স্থানান্তর সংক্রান্ত সমস্যা নিয়ে বারবার আটকে যাচ্ছিল কাজ।এই বিষয়েই সম্প্রতি কলকাতা পুরসভায় একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে প্রাথমিকভাবে চারজন দোকানদারের সমস্যার মীমাংসা হলেও বাকি পাঁচজনের বিষয়টি নিয়ে পুর কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নিতে পারেননি। সেই পরিস্থিতি সরেজমিনে পর্যালোচনার জন্য বুধবার সকালে ল্যান্সডাউন বাজার পরিদর্শনে যান কলকাতা পুরসভার তিন মেয়র পারিষদ— সন্দীপরঞ্জন বক্সি, আমিরুদ্দিন ববি ও বৈশ্বানর চট্টোপাধ্যায়।
এদিন সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে মেয়র পারিষদ আমিরুদ্দিন ববি জানান, মোট ন’জন দোকানদারকে নিয়ে সমস্যা তৈরি হয়েছিল। মঙ্গলবার পুরসভায় হওয়া বৈঠকে তার মধ্যে চারজনের সমস্যা মিটে যায়। তাঁদের মধ্যে তিনজন ইতিমধ্যেই নতুন দোকানের চাবিও হাতে পেয়ে গেছেন। তবে বাকি পাঁচজনের মধ্যে রয়েছে বাইকের দোকান, হোটেল, সেলুন এবং মুদিখানার মতো ব্যবসার মালিকরা। তাঁদের দাবি অনুযায়ী, দোকান হতে হবে গ্রাউন্ড ফ্লোরেই। সেইমতো এদিন ডেভেলপারদের মাধ্যমে জায়গা দেখানো হয়। পরিদর্শনে গিয়ে বেশ কয়েকটি দোকান খতিয়ে দেখেন মেয়র পারিষদরা। এর মধ্যে দু’-তিনজনের সমস্যা এদিনই মেটানো সম্ভব হয়েছে।
Advertisement
তবে দু’একজন দোকানের অবস্থান নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। তাঁদের বক্তব্য, দোকানটি একটু ভিতরের দিকে হওয়ায় ব্যবসায় অসুবিধা হতে পারে। সে বিষয়ে ফের আলোচনা করে সমাধানসূত্র খোঁজা হবে বলে জানান ববি। তাঁর কথায়, ‘আমরা ফের বসে বিষয়টি দেখব। সমস্যা মিটলেই দু’-চার দিনের মধ্যেই বাজারের নির্মাণকাজ আবার পুরোদমে শুরু হবে। পাইলিংয়ের কাজ ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গিয়েছে।’
Advertisement
পুরসভার পরিকল্পনা অনুযায়ী, আগামী ২১ মে-র মধ্যে ফের একটি বৈঠক করে সমস্যার নিষ্পত্তি করা হবে এবং মে মাসের মধ্যেই সমস্ত চুক্তিপত্র সম্পন্ন করে কাজ শুরু করা হবে।
প্রসঙ্গত, ২০ বছর ধরে নানা জটিলতার কারণে পিছিয়ে থাকা ল্যান্সডাউন বাজারের পুনর্গঠনের কাজ শেষমেশ বছর তিনেক আগে শুরু হয়েছিল। কিন্তু সেই কাজ আবার থমকে যায় ন’জন দোকানদারের আপত্তির জেরে। বাজার সমিতির অভিযোগ, মাত্র ন’জন দোকানদারের জন্য পুরো প্রকল্পটি থেমে রয়েছে।
কলকাতা পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, পুরনো ল্যান্সডাউন বাজার ভেঙে তৈরি হবে একটি ৯ তলা ভবন। যার বেসমেন্টে থাকবে গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা। একতলা ও দোতলায় বাজার বসবে এবং বাকি তলাগুলি ডেভেলপার সংস্থা নিজের মতো করে লিজ দেবে কিংবা বিক্রি করবে। এই পুরো প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হচ্ছে পিপিপি মডেলে। ভবিষ্যতে এখানে প্রায় ৩৫০ জন দোকানদারকে নতুন দোকান বরাদ্দ দেওয়া হবে।
আড়াই বিঘা জায়গা জুড়ে গড়ে উঠবে এই আধুনিক বাজার। সবজি, মাছ, মাংস, ফল, ফুলের জন্য থাকবে যথেষ্ট বড় জায়গা। পুনর্গঠনের প্রথম ধাপে প্রায় ১৫০-২০০ জন দোকানদারকে অস্থায়ীভাবে স্থানান্তরিত করা হয়েছে। দ্বিতীয় ধাপে বাকি দোকানদারদের জায়গা দেওয়া হবে। কিন্তু ন’জন দোকানদারের আপত্তির কারণে সেই কাজই বারবার থমকে যাচ্ছিল। পুরসভার তরফে জানানো হয়েছে, সব সমস্যার স্থায়ী সমাধান করে খুব শিগগিরই নতুন ল্যান্সডাউন বাজার গড়ে তোলার কাজ সম্পূর্ণ গতিতে শুরু হবে।
Advertisement



