লোকসংস্কৃতি বিভাগ, কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের আয়োজনে ও শ্রীরামপুর পূর্বস্থলী সংস্কৃতি ও ইতিহাস পরিমণ্ডলের সহযোগিতায় এক-দিবসীয় রাজ্যস্তরীয় আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হল। আলোচনার শিরোনাম ছিল- ‘সাহেবধনী সম্প্রদায় : যাদুবিন্দু ও কুবীর গোসাই এবং তাঁদের পরম্পরা’।
সমন্বয়ধর্মিতাই বাংলার সমাজের মৌলিক বৈশিষ্ট্য। ধর্মীয় বিভাজনকে প্রতিহত করে এখানে প্রাধান্য পেয়েছে লোকায়ত ধর্ম, ধর্ম নির্বিশেষে সম্প্রীতির বন্ধনকে দৃঢ় করেছে বাংলার লোকসংস্কৃতি। দেশের বড় বড় ধর্ম সম্প্রদায়গুলোর প্রধান লক্ষণ ছিল শাস্ত্র নির্ভরতা। এর বাইরে বহুদিন ধরে অনেক ছোট ছোট ধর্ম সম্প্রদায় তৈরি হয়েছিল,তার অনেকটাই গড়ে উঠেছে শাস্ত্রের বদলে গুরুবাদকে প্রাধান্য দিয়ে, আবার অনেকটা এসেছে বিকল্প চিন্তা তথা দর্শন থেকে। অন্ত্যজ, ব্রাত্য, উচ্চকোটির নয়, এমন মানুষ তাদের বিপন্ন সময়ে হয়তো বা শাস্ত্রীয় কিংবা আলংকারিক ধর্মের কাছে আশ্রয় পাননি।
Advertisement
তাই নিজেদের বাঁচাতে আত্মনির্ভরতার জন্য গড়ে নিয়েছিলেন নিজেদের ধর্ম, নিজেদের আচার- বিশ্বাস, মন্ত্র ও গুরু। লোকায়ত জীবনধারা থেকে উদ্ভুত এই ধর্মের মূল কথাই হল – ‘মানুষ হয়ে মানুষ চেনো /মানুষ হয়ে মানুষ মাপো /মানুষ হয়ে মানুষ জানো /মানুষ রতন ধন /করো সেই মানুষের অন্বেষণ ‘। চারিদিকে এত যে অশান্ত পরিবেশ, ধর্মীয় উন্মাদনা, হানাহানি সেই প্রেক্ষাপটে বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত এই আলোচনাসভা এক উদারনৈতিক বাতাবরণ তৈরি করেছে নি:সন্দেহে।
Advertisement
অনুষ্ঠানের উদ্বোধক হিসাবে উপস্থিত ছিলেন পশ্চিমবঙ্গ সরকারের প্রাণিসম্পদ বিকাশ দপ্তরের ভারপ্রাপ্ত মন্ত্রী ও লোকসংস্কৃতি ও আদিবাসী সংস্কৃতি কেন্দ্রের সদস্য শ্রী স্বপন দেবনাথ, অনুষ্ঠানের সভাপতির আসন অলংকৃত করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় উপাচার্য অধ্যাপক কল্লোল পাল, বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের নিবন্ধক অধ্যাপক দেবাংশু রায়, কলা ও বাণিজ্য অনুষদের অধ্যক্ষ অধ্যাপক সাবিত্রীনন্দ চক্রবর্তী। অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত বক্তা হিসেবে ছিলেন কৃষ্ণনাথ কলেজের প্রাক্তন অধ্যাপক ও বিশিষ্ট লোকসংস্কৃতিবিদ ড. শক্তিনাথ ঝা, বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদের সভাপতি ড. রতনকুমার নন্দী, বহরমপুর গার্লস কলেজের বাংলার বিভাগীয় প্রধান ড. মধু মিত্র।
অনুষ্ঠানের স্বাগত ভাষণে বিভাগীয় অধ্যাপক ড. সুজয়কুমার মণ্ডল বর্তমান পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে সাহেবধনী সম্পদায়ের গানে প্রতিফলিত অসাম্প্রদায়িক চেতনার কথা বলেন। বিভাগীয় প্রধান ড. দেবলীনা দেবনাথের তত্ত্বাবধানে ও সঞ্চালনায় এই আলোচনাচক্র অংশগ্রহণকারীদের মনে বাংলার সর্বধর্ম সমন্বয়ের বার্তা সঞ্চারিত করে।
Advertisement



