• facebook
  • twitter
Friday, 5 December, 2025

বীরভূমে তৃণমূলের কোর কমিটির বৈঠকের সময় আচমকা মমতার ফোন অনুব্রতকে

দলে আর কোনও বিভাজন বা বিভ্ৰান্তি নেই, জানালেন কাজল ও আশিসরা

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও অনুব্রত মণ্ডল। ফাইল চিত্র।

জেলা সভাপতির পদ চলে গেলেও রবিবার বীরভূমের নতুন কোর কমিটির বৈঠকে হাজির হয়েছিলেন অনুব্রত মণ্ডল। আর সেই বৈঠক চলাকালীন কেষ্টকে আচমকা ফোন করলেন দলের সর্বময় কর্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ফোনে তৃণমূল সুপ্রিমো অনুব্রতকে দল চালানো নিয়ে একাধিক পরামর্শ দিয়েছেন। পাশাপাশি, ঠান্ডা মাথায় দলের সবার সঙ্গে সমন্বয় রেখে কাজ করার নির্দেশ দিয়েছেন। এমনটাই সূত্রের খবর। সেইমতো এদিন বৈঠক শেষে কোর কমিটির সদস্যরা সবাই একসঙ্গে চলার বার্তা দিয়েছেন। তবে অনুব্রত এবং মমতার মধ্যে আসলে কী কী বিষয়ে কথা হয়েছে, তা নিয়ে কোনও শিবিরই প্রকাশ্যে মন্তব্য করেননি। দলের তরফেও আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানানো হয়নি।

তবে অনুব্রতের সঙ্গে তৃণমূল সুপ্রিমোর ঠিক কী কী কথা হয়েছে, তা নিয়ে নানারকম কানাঘুঁষা শুরু হয়েছে। এ ব্যাপারে অনুব্রত অনুগামীদের দাবি, অনুব্রতকে মাথা ঠান্ডা রাখার পরামর্শ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি এ-ও বলেছেন, অনুব্রত চাইলে কোর কমিটির বৈঠক ডাকতেই পারেন। কিন্তু উত্তরে কেষ্ট ‘দিদি’কে জানান, হিসাবমতো তিনি বৈঠক আর ডাকতে পারেন না। তাই দলের চেয়ারপার্সন হিসাবে বৈঠক ডাকবেন আশিসই। এর পরেই কেষ্টকে ভাল করে সকলকে সঙ্গে নিয়ে কাজ করার পরামর্শ দিয়েছেন মমতা।

Advertisement

যদিও বীরভূম তৃণমূলের অন্য শিবিরের দাবি, বৈঠকের মাঝে দলনেত্রী মমতা অনুব্রতকে ফোন করে জানিয়ে দিয়েছেন, তিনি যাতে ভবিষ্যতে বীরভূমে নিজে থেকে কোনও মিটিং-মিছিল না ডাকেন। দলনেত্রী নির্দেশ দিয়েছেন, দলের কোনও কর্মসূচির আয়োজন করার থাকলে, তা আশিসই করবেন।

Advertisement

জানা গিয়েছে, এদিন বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে, এ বার থেকে নিয়ম করে মাসে দু’বার কোর কমিটির বৈঠক হবে। দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঠিক যেমনটা শুরুতে বলে দিয়েছিলেন। অনুব্রত, আশিস, কাজল ছাড়াও বৈঠকে ছিলেন লাভপুরের বিধায়ক অভিজিৎ সিংহ, সিউড়ির বিধায়ক বিকাশ রায়চৌধুরী, তৃণমূল নেতা সুদীপ্ত ঘোষ। ছিলেন না রাজ্যের কারামন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহ ও বীরভূমের সাংসদ শতাব্দী রায়। আশিস জানান, শতাব্দী দিল্লিতে রয়েছেন। চন্দ্রনাথ অন্য একটি বৈঠকের কারণে বাইরে থাকায় যোগ দিতে পারেননি।

প্রসঙ্গত প্রায় দু’মাস ধরে কোর কমিটির বৈঠক না-হওয়ায় একাধিক বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছিল। জেলায় দলের অন্দরে বিভাজন তৈরি হয়েছে বলেও গুঞ্জন ছড়িয়েছিল রাজনৈতিক মহলে। কোর কমিটির অন্যতম সদস্য কাজল শেখ অনুব্রত-বিরোধী বলেই পরিচিত। যদিও কাজল সে কথা অস্বীকার করলেও প্রকাশ্যে ক্ষোভ উগরে দিয়েছিলেন। আর সেই পরিস্থিতির মধ্যে তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্ব শুক্রবার অনুব্রতকে জেলা সভাপতি পদ থেকে সরিয়ে দিয়েছে। এমনকি বীরভূম জেলা সভাপতির পদটাই বিলুপ্ত করে দেওয়া হয়েছে। তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্ব স্পষ্ট নির্দেশ দিয়েছে, কোর কমিটিই জেলা সংগঠনের কাজকর্ম দেখভাল করবে। জেলায় দলের চেয়ারপার্সন আশিস বন্দ্যোপাধ্যায় নতুন কমিটি গঠিত হওয়ার পরই রবিবার কোর কমিটির বৈঠক ডাকেন। ওই বৈঠকে কেষ্ট যোগ দেবেন কি না, তা নিয়ে জল্পনা ছড়ালেও বাকি সদস্যদের মতো রবিবার কেষ্টও নির্ধারিত সময়েই বৈঠকে যোগ দেন।

ঘণ্টাখানেকের বৈঠক শেষে রামপুরহাটের বিধায়ক তথা বিধানসভার ডেপুটি স্পিকার আশিস বলেন, ‘‘অনুব্রত মণ্ডল আগেই ঘোষণা করেছিলেন যে, আগামী ২৪ মে রামপুরহাট, ২৫ মে বোলপুর এবং ২৬ মে সিউড়িতে বড় মিছিল হবে। যা নিয়ে বিতর্ক হয়েছিল। প্রশ্ন উঠেছিল, কেন কোর কমিটির সিদ্ধান্ত ছাড়াই কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে? আজ কোর কমিটির বৈঠকে অনুব্রত মণ্ডলের ঘোষিত কর্মসূচিতে মান্যতা দেওয়া হয়েছে।’’
আশিস বন্দ্যোপাধ্যায় আরও বলেন, এ বার থেকে প্রতি মাসে দু’বার করে কোর কমিটির বৈঠক হবে। এর পরের বৈঠক হবে ১৪ জুন। সেটি হবে সিউ়ড়িতে। পরেরটি ২৮ জুন বোলপুরে হবে।

বৈঠক শেষে কাজল শেখ ও আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়রা বলেন, দলে আর কোনও বিভাজন বা বিভ্রান্তি নেই। বৈঠকে সম্মিলিত ভাবে যে সিদ্ধান্ত হবে, সেইমতোই জেলায় দল চলবে। এদিন আশিস বলেন, ‘‘বিধানসভা নির্বাচনের সময় জেলায় দল পরিচালনা করবে কোর কমিটি। সমাজমাধ্যমে কারও কোনও অনুগামী যদি বিভাজনমূলক কিছু পোস্ট করেন, সে ক্ষেত্রে আইনি পদক্ষেপ করা হবে দলগত ভাবে।’’

একইভাবে কাজল শেখও বলেন, ‘‘কোনও বিভ্রান্তি বা বিভাজন নেই৷ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশমতো কোর কমিটিই দল পরিচালনা করবে। আমাদের নেত্রী যা নির্দেশ দিয়েছেন, তার বাইরে কিছুই হবে না। আগামী দিনে কোর কমিটির নেতৃত্বেই বিধানসভা নির্বাচনে বীরভূমের সব ক’টি আসনে আমরা জিতব।’’

Advertisement