• facebook
  • twitter
Thursday, 20 March, 2025

উদযাপিত হতে যাচ্ছে রাঢ়বঙ্গের সর্ববৃহৎ বাহা পরব

শান্তিনিকেতন সংলগ্ন আদিবাসী অধ্যুষিত তাতারপুরে স্বাধীন ক্যাম্পাসে ১৪ মার্চ আয়োজন করা হয়েছে রাঢ়বঙ্গের সর্ববৃহৎ বাহা পরব বা বাহা উৎসবের।

কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জীবনজোড়া সৃজনকর্মের মধ্যে সাঁওতালদের যাপিত জীবনের যে অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ক স্থাপিত হয়েছিল, তা বর্তমানে তাঁর সাধনভূমি বিশ্বভারতী-শান্তিনিকেতনে বহুলাংশে অপ্রাসঙ্গিক হয়ে গিয়েছে। অথচ তাঁর শান্তিনিকেতনের মাটির বাসগৃহগুলি যখন নন্দলাল বসু থেকে শুরু করে রামকিঙ্করের হাত দিয়ে আকার পেয়েছে তখন, সাঁওতালদের বাসগৃহগুলির সঙ্গে সাযুজ্য রেখে সেগুলিতে মাটির দেওয়ালে আলকাতরা, আখের খোওয়া, ঘাস, খড় মিশ্রণের প্রলেপে সাঁওতাল জীবনের চিত্রগুলি বিমূর্ত হয়ে ফুটে উঠেছে।

শান্তিনিকেতন জুড়ে রামকিঙ্কর বেইজ যখন হাতুড়ি-ছেনিতে সাঁওতাল জীবনচিত্র কলের ডাক, সাঁওতাল পরিবারকে শিল্পের অনন্যতায় গড়ে তুলছেন, তখন শান্তিনিকেতনের অনেকেই ‘গেল গেল’ রব তুললেও, রবীন্দ্রনাথ রামকিঙ্করের সেইসব সৃজনকর্ম চাক্ষুষ করে রামকিঙ্করকে স্নেহ আর প্রশ্রয়ের সুরে বলেছেন, ‘তুই তোর ভাবনার শিল্পকর্ম দিয়ে শান্তিনিকেতনের চারদিক ভরিয়ে দে।’ কবিগুরুর এই স্নেহ ও প্রশ্রয় না পেলে কী রামকিঙ্করের এইসব সৃজনকর্ম প্রস্ফুটিত হয়ে সারা বিশ্বে সমাদৃত হতে পারতো! কিন্তু বর্তমান সময়কালে শান্তিনিকেতনের সঙ্গে সাঁওতাল জীবন, তাঁদের পরব, উৎসব-অনুষ্ঠানের সম্পর্ক কতটুকু? সময়ের নিরীক্ষণে রয়েছে সে প্রশ্ন।

শান্তিনিকেতনের উৎসব-অনুষ্ঠানে বর্তমান সময়কালে সাঁওতালদের উপস্থিতি বহুলাংশে খর্ব হয়ে গেলেও, এবার শান্তিনিকেতন সংলগ্ন আদিবাসী অধ্যুষিত তাতারপুরে স্বাধীন ক্যাম্পাসে ১৪ মার্চ আয়োজন করা হয়েছে রাঢ়বঙ্গের সর্ববৃহৎ বাহা পরব বা বাহা উৎসবের। আদিবাসী সমাজে বাহা পরব বা বাহা উৎসবের নির্ধারিত কোনও দিন থাকে না। এটি ফাগুন অমাবস্যা এবং ফাগুন পূর্ণিমার মধ্যবর্তী একটি পরব বা উৎসব। বাহা সাঁওতালদের ফুল ও নবায়নের পরব। এরাজ্য ছাড়াও পার্শ্ববর্তী ঝাড়খণ্ড রাজ্যে এই পরব সাঁওতাল, হুল ও অন্যান্য আদিবাসী জনগোষ্ঠীর দ্বারা পালিত হয়ে থাকে। কনকা তোলা বাহা পরব সাঁওতালদের একটা বড় পরব। দোল পূর্ণিমার পর চৈত্র মাস পর্যন্ত প্রতিটি সাঁওতাল গ্রাম-মহল্লায় শাল-পলাশ ফুল ফোটার সঙ্গে সঙ্গে বাহা পরব বা উৎসব পালিত হয়। গাছের পুরনো পাতা ঝরে যাওয়ার পর নতুন পাতা ও ফুলে প্রকৃতি যখন ভরে ওঠে তখন মহুল ফুলের কুঁড়ি উদ্ভাসের সঙ্গে সঙ্গে সাঁওতাল যুবক-যুবতীদের বুকে এই উৎসব পালনের দ্রিমি দ্রিমি বোল উঠতে শুরু করে।

সেই বোলকে মানুষের মনে ও মননে গেঁথে দিতেই এবার স্বাধীন ট্রাস্ট তাতারপুরে আদিবাসীদের নিয়েই এই অনুষ্ঠানের আয়োজনে প্রয়াসী হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বাধীন ট্রাস্টের কর্ণধার ড. মলয় পীট। রবীন্দ্রনাথ থেকে রামকিঙ্করের যাপিত জীবন আর সাহিত্য-শিল্পকর্মের সঙ্গে সাযুজ্য রেখে গাছের পাতায় সাঁওতালি রীতিতে

নৃত্য-গীতের মধ্যে দিয়ে ভোরের সূর্যকিরণের রক্তিম আভায় এই দিনটির সূচনা করে, তাঁরা সাঁওতাল সমাজের আলগা হওয়া শিকড়কে মাটির গভীরে প্রোথিত করারই প্রচেষ্টার গোঁড়ায় জল-সিঞ্চন করার সূত্রধরের কাজটি করতে প্রয়াসী হয়েছেন বলে ড. মলয় পীট দাবি করছেন।