• facebook
  • twitter
Saturday, 6 December, 2025

চা শিল্পে সামগ্রিক উৎপাদন কমেছে, ২০২৪ সালে রপ্তানি বেড়েছে

আইসিআরএ জানিয়েছে, সরবরাহ- চাহিদার ব্যবধানের কারণে চলতি বছরের এপ্রিল-নভেম্বর সময়কালে সিটিসি চায়ের গড় নিলাম মূল্য, কেজি প্রতি ৪৮ টাকা বেড়েছে, সিটিসি উৎপাদন হ্রাস এবং উচ্চতর রফতানির কারণে।

নিজস্ব গ্রাফিক্স

২০২৪-এর শেষ পর্যন্ত চা শিল্পে মোট উৎপাদনে ১০০ মিলিয়ন কিলোগ্রামেরও বেশি হ্রাস হওয়ার সম্ভাবনার কথা অনুমান করা হয়েছে। এর কারণ হল অনিয়মিত আবহাওয়া এবং বাগানের প্রাথমিক বার্ষিক বন্ধের ফলে, চাষিদের জন্য প্রতি কেজি ব্যয় বৃদ্ধি পাওয়া। সোমবার একথা জানিয়েছেন চা শিল্পের স্টেকহোল্ডাররা। যাইহোক, এই বছরের লক্ষ্য ছিল ভালো মূল্য আদায় এবং ক্রমবর্ধমান রফতানি। ২০২৩ সালের প্রথম ১০ মাসে প্রায় ১,১৭৮ মিলিয়ন কেজি উৎপাদনের তুলনায়, চলতি বছরের জানুয়ারি-অক্টোবর সময়কালে ভারত, প্রায় ১১১২ মিলিয়ন কেজি চা উৎপাদন করেছে এবং ২০২৪ সালে চা রফতানির পরিমাণ ২৪০-২৫০ মিলিয়ন কেজি স্পর্শ করবে বলে আশা করা হচ্ছে। আগের বছরে এটি ছিল প্রায় ২৩১ মিলিয়ন কেজি বলে জানা গেছে। ইন্ডিয়ান টি অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান হেমন্ত বাঙ্গুর বলেছেন, ২০২৪ সালের জানুয়ারি-অক্টোবরের সময়কালে, উৎপাদন প্রায় ৬৬ মিলিয়ন কেজি কমেছে। নভেম্বরের পরে পাতা তোলা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আরও ৪৫-৫০ মিলিয়ন কেজি কমে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে। ইন্ডিয়ান টি এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান অংশুমান কানোরিয়া বলেন, ‘ভূ-রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ এবং মুদ্রার সমস্যা সত্ত্বেও ভারতের চা রফতানি ভালো অবস্থায় ছিল এবং চাহিদার কাণে চালানের বৃদ্ধি হয়।’

হেমন্ত বাঙ্গুর বলেন,‘এ বছর চা শিল্পের পারফরম্যান্স খুব একটা ভালো ছিল না কারণ ফসলের উৎপাদন কম ছিল এবং প্রতি কেজি উৎপাদন খরচ বেশি পড়েছিল। খরচ বাড়নোর পর, চায়ের দামে কোনও অনুরূপ বৃদ্ধি হয়নি। ২০২৩ সালে শিল্পটি বেশ খারাপ অবস্থায় ছিল। পরিস্থিতি এখন গত বছরের তুলনায় ভালো তবে শিল্পটি মন্দার আওতার বাইরে নয়।’ তিনি আরও বলেন, ২০২৩ সালে চা বাগানগুলি এর ভৌগলিক অবস্থানের নিরিখে বিশাল লোকসানের সম্মুখীন হয়েছিল।

Advertisement

এই শিল্প সম্ভবত এই বছরও আশানুরূপ ফল করবে না। আসামে, উৎপাদনকারীরা খুব সামান্য লাভ করতে পারে বা লোকসানের মুখেও পড়তে পারে। কিন্তু উত্তর বাংলায়, তারা এখনও বিপদের মুখে। গত বছরের তুলনায় এ বছর উৎপাদনে ১১০-১২০ মিলিগ্রাম হ্রাস ঘটবে। জলবায়ু পরিবর্তন এবং অনিয়মিত আবহাওয়া ফসল উৎপাদনে প্রভাব ফেলছে বলে দাবি করে, চা গবেষণা সংস্থা (টিআরএ)। এই শিল্পকে বাঁচাতে মাটির স্বাস্থ্য বৃদ্ধি, বৃষ্টির জল সংগ্রহের মাধ্যমে জলাশয় তৈরির পরামর্শ দিয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব ভারতীয় চা-ব্যবসাকে ক্রমবর্ধমানভাবে প্রতিযোগিতাহীন করে তুলছে। এই বছর, অনেক চা উৎপাদনকারী অঞ্চলে তাপমাত্রা ৩৫ থেকে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত পৌঁছতে দেখা গেছে। অনেক জায়গায় বৃষ্টিপাত হ্রাস পেয়েছে, যা ফসলের মাসগুলিতে গড়ে ২০ শতাংশ চা উৎপাদনকে প্রভাবিত করেছে। টিআরএ সচিব জয়দীপ ফুকান বলেছেন, বর্তমানে রপ্তানি পণ্যের ক্রমবর্ধমান প্রবণতা নিয়ে রপ্তানিকারীরা আশাবাদী। তিনি বলেন, ইরাকে চালানের পরিমাণ দ্রুত বৃদ্ধি পেয়েছে, যা মোট চা রপ্তানির ২০ শতাংশ। ব্যবসায়ীরা এই অর্থবর্ষে পশ্চিম এশীয় দেশে ৪০-৫০ মিলিয়ন কেজি চা পাঠানোর আশা করছেন। তিনি বলেন, শ্রীলঙ্কার ফসল কম হওয়ার সময়, পশ্চিম এশিয়ার বেশ কয়েকটি বাজারে প্রবেশ করা ভারতীয় রপ্তানিকারীরা সেখানে চালানের পরিমাণ ধরে রাখতে পেরেছিলেন।

Advertisement

সক্রিয় পদক্ষেপের জন্য টি বোর্ডের প্রশংসা করে তিনি বলেন, ‘টি বোর্ডের গৃহীত পদক্ষেপ যেমন আরও পরীক্ষা, ১০০ শতাংশ ডাস্ট গ্রেড চায়ের নিলাম করার সিদ্ধান্তকে স্বাগত।’ তিনি আরও বলেন, ভারতীয় চায়ের আরও প্রচার, খাদ্য সুরক্ষা নিয়মের কঠোর পালন এবং পর্যাপ্ত উত্পাদন প্রয়োজন- যাতে রফতানি ভবিষ্যতে ৩০০ এমজিতে পৌঁছতে পারে। কানোরিয়া বলেন, পশ্চিম ইউরোপ, রাশিয়া এবং অন্যান্য সিআইএস দেশ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও জাপানের মতো ভারতীয় চায়ের ঐতিহ্যবাহী বাজারে বৃদ্ধির সুযোগ রয়েছে।

আইসিআরএ-র অ্যাসিস্ট্যান্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট ও সেক্টর হেড সুমিত ঝুনঝুনওয়ালা বলেন, ‘এই বছর অর্থোডক্স চা রপ্তানির ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম হয়নি, কারণ ভারত এই ধরনের জাতের ১০০ মিলিগ্রামেরও বেশি চা চালান বজায় রাখবে বলে আশা করা হচ্ছে। অন্যদিকে সিটিসি-র চা রপ্তানিও বেড়েছে।’

২০২৪-র প্রথম আট মাসে ভারত ৬৪ মিলিয়ন কেজি অর্থোডক্স চা রপ্তানি করেছে, যা গত বছরের একই সময়ে ৬৩ মিলিয়ন কেজি ছিল। ২০২২ এবং ২০২৩ সালে অর্থোডক্স জাতের রপ্তানি ছিল যথাক্রমে ১০৯ মিলিয়ন কেজি এবং ১০১ মিলিয়ন কেজি। এই প্রবণতা এ বছরও অব্যাহত থাকবে,’ বলেন ঝুনঝুনওয়ালা। তিনি বলেন, ভারত থেকে ১০ কোটি কেজিরও বেশি অর্থোডক্স জাতের রপ্তানি, শ্রীলঙ্কার ফসলের ৫ কোটি কেজিরও বেশি হ্রাসের জন্য দায়ী। এই বছরের আট মাসের তথ্যে আরও বলা হয়েছে যে ভারত ৮৭ মিলিয়ন কেজি সিটিসি রপ্তানি করেছে, যা ২০২৩ সালের একই সময়ের মধ্যে ৬২ মিলিয়ন কেজি ছিল।

আইসিআরএ জানিয়েছে, সরবরাহ- চাহিদার ব্যবধানের কারণে চলতি বছরের এপ্রিল-নভেম্বর সময়কালে সিটিসি চায়ের গড় নিলাম মূল্য, কেজি প্রতি ৪৮ টাকা বেড়েছে, সিটিসি উৎপাদন হ্রাস এবং উচ্চতর রফতানির কারণে। তবে সাম্প্রতিক নিলামে দাম কমেছে। রেটিং সংস্থাটি জানিয়েছে, এই হ্রাসকৃত উৎপাদন এবং কম ক্যারিওভার ইনভেন্টরি ২০২৫ সালের প্রথম ভাগ অর্থাৎ আগামী বছরের মে-জুন পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে।

Advertisement