এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলে রিয়েল এস্টেট সেক্টরে বিদেশি বিনিয়োগের নিরিখে, শীর্ষ দশটি শহরের মধ্যে ভারতের মুম্বই এবং নয়াদিল্লি স্থান পেয়েছে। সম্পত্তি পরামর্শদাতা সংস্থা সিবিআরই-র রিপোর্ট অনুযায়ী, টোকিও, সিডনি, সিঙ্গাপুর এবং হো চি মিন সিটির পরে মুম্বই পঞ্চম স্থানে রয়েছে। সিওল, ওসাকা এবং হ্যানয়ের সঙ্গে যৌথভাবে অষ্টম স্থানে রয়েছে নয়াদিল্লি।
তথ্য অনুযায়ী ভারতে মোট সম্পত্তি ক্রয়ের ইচ্ছা প্রকাশ করেছে ৩ শতাংশ মানুষ। ক্রয়ের ক্ষেত্রে ডেভেলপার, মালিক, অপারেটর, রিয়েল এস্টেট ফান্ড এবং প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা আগ্রাসী ভূমিকা নিচ্ছে। রিপোর্টে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, ভারতে বিনিয়োগকারীদের মনোভাব মূলত অফিস, আবাসিক, শিল্প ও ডেটা সেন্টার-সহ অন্যান্য বেশ কিছু বিষয় দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়।
২০২৪ সালে ভারত বিদেশি বিনিয়োগে রেকর্ড করেছে। এছাড়া সিঙ্গাপুর, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং কানাডার মতো দেশগুলি, বিদেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে আধিপত্য বিস্তার করেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৪ সালে দেশের রিয়েল এস্টেট ক্ষেত্রে মোট বিনিয়োগের ২৫ শতাংশেরও বেশি অবদান রেখেছে এই তিনটি দেশ। মোট বৈদেশিক বিনিয়োগের প্রায় ৩৬ শতাংশ সিঙ্গাপুরে, তার পরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র (২৯ শতাংশ) এবং কানাডা (২২ শতাংশ)।
সংযুক্ত আরব আমিরশাহিতে বিনিয়োগ ২০২৩ সালের তুলনায়, ২০২৪ সালে উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৪ সালে ভারতীয় রিয়েল এস্টেটে মোট ইক্যুইটি বিনিয়োগ সর্বকালের সর্বোচ্চ ১১.৪ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে, যা গত বছরের তুলনায় ৫৪ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
সিবিআরই-র ভারত, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকার চেয়ারম্যান ও সিইও অংশুমান ম্যাগাজিন বলেন, ২০২৪ সালে ভারতের রিয়েল এস্টেট বাজারে বিনিয়োগ রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছেছে। মূলত দেশীয় বিনিয়োগকারীরাই বিনিয়োগ করেছেন। তবে বিদেশি বিনিয়োগকারীরাও টাকা ঢেলেছেন ভারতের রিয়েল এস্টেট সেক্টরে। ভারত রিয়েল এস্টেটের বিনিয়োগকারীদের অন্যতম গন্তব্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই প্রবণতা রিয়েল এস্টেট বাজারের প্রতিষ্ঠিত। এই খাতে ধারাবাহিক মূলধন প্রবাহ অব্যাহত থাকবে বলে আশা করা হচ্ছে। এর ফলে রিয়েল এস্টেট মার্কেটের নতুন দিক উন্মোচিত হবে।
সমীক্ষায় আরও দেখা গিয়েছে, ভারতে নতুন বিনিয়োগের দিকে তাকিয়ে পরিবেশগত, সামাজিক ও প্রশাসনিক উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। এটিও বিনিয়োগকারীদের নজরে রয়েছে। ৫৬ শতাংশ বিনিয়োগকারী গ্রিন বিল্ডিং অধিগ্রহণ বা বিকাশে আগ্রহী। তাঁদের মধ্যে ৪৬ শতাংশ বিদ্যমান সম্পদকে পুনর্নির্মাণের দিকে তাকিয়ে রয়েছে।
ভারতে রিয়েল এস্টেট সেক্টরে চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ার পিছনে বেশ কয়েকটি কারণ রয়েছে। ভারতের শহরগুলিতে জনসংখ্যা দ্রুত বাড়ছে। কর্মসংস্থানের সন্ধানে শহরমুখী হচ্ছে মানুষ। সেই কারণে ফ্ল্যাট-বাড়ি কেনার চাহিদা বাড়ছে। ব্যাঙ্ক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলি হোম লোন আরও সহজলভ্য করেছে, যা আবাসিক সম্পত্তির চাহিদা বাড়াতে সাহায্য করেছে। একই সঙ্গে, অর্থনৈতিক উন্নতি দেশের মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নত করতে সহায়ক হয়েছে।
এর পাশাপাশি ভারতে ধনী মানুষের সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে। নাইট ফ্রাঙ্কের রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০২৩ সালে দেশে অতিসম্পদশালী ব্যক্তিদের সংখ্যা ৪% বেড়েছে। ২০২৭ সালের মধ্যে এটি ৫৮% বৃদ্ধি পাবে। এই প্রবণতাই প্রিমিয়াম বাণিজ্যিক ও আবাসিক সম্পত্তির চাহিদা বাড়িয়েছে। ২০২৪-২০২৫ অর্থবর্ষের তৃতীয় ত্রৈমাসিকে দিল্লি-এনসিআর, মুম্বই, পুনে, হায়দরাবাদ, বেঙ্গালুরু, চেন্নাই এবং কলকাতায় গড় হাউজিং মূল্যে বার্ষিক ১১% বৃদ্ধি পেয়েছে, যেখানে বেঙ্গালুরুতে তা ২৪% বৃদ্ধি পেয়েছে।