পার্থ প্রতীম চট্টোপাধ্যায়
অবশেষে ‘এক পশলা বৃষ্টি’র মতোই কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক রেট কাট করেছে ০.২৫% এবং ভারতীয় অর্থনীতি নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের আশাবাদী হওয়া সপ্তাহ শেষে বাজারে বুলদের শক্তি যুগিয়েছে। সেই সঙ্গে বিখ্যাত জাপানি ব্রোকারেজ সংস্থা Nomura-র সাম্প্রতিক রিপোর্ট অনুযায়ী তারা Nifty-র ওপর যথেষ্ট আশাবাদী। ২০২৬ এ তারা Nifty-কে দেখছে ২৯ হাজারের আশে পাশে। উপরি পাওনা হিসেবে Nifty-র অন্তর্ভুক্ত কোম্পানিগুলির ভালো অর্থনৈতিক ফলাফলের সম্ভাবনাও বিনিয়োগকারীদের উজ্জীবিত করেছে। ফলে সপ্তাহের শেষে Nifty-র কাম- ব্যাক বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস জুগিয়েছে অনেকটাই। গত সপ্তাহের শেষে রেট কাট হওয়ার জন্য নির্মাণ শিল্প থেকে গাড়ি শিল্প, আবাসন শিল্প থেকে ব্যাঙ্কিং-সমস্ত ক্ষেত্রেই বিনিয়োগকারীরা পেয়েছে আত্মবিশ্বাস। গত সপ্তাহের শেষে সূচকের ঠিকানা ২৬১৮৬৷ বাজারের অ্যাডভ্যান্স-ডিক্লাইন রেশিও যদিও খুব একটা ভালো নয়, ফলে মিড ক্যাপ এবং স্মল ক্যাপের অবস্থা সঙ্গীন। অনেক নামি-দামি কোম্পানির শেয়ারের দাম বন্ধ হয়েছে অনেকটা নীচে।
Advertisement
বর্তমানে বিনিয়োগকারীদের চিন্তার প্রধান কারণ ডলারের সাপেক্ষে রুপির দামের ক্রমাগত পতন। যদিও এ ব্যাপারে ততটা চিন্তিত নয় ভারতের কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক। যেহেতু অর্থনৈতিক বৃদ্ধির হার রয়েছে গতির মহাসড়কে এবং মুদ্রাস্ফীতি ও যথেষ্ট নিয়ন্ত্রণে এসেছে ফলে ভয় পাইয়ে দেওয়ার মত পরিস্থিতি এখনও তৈরি হয়নি। আগামী ১০ ডিসেম্বর শুরু হচ্ছে আমেরিকার সঙ্গে ভারতের বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে নতুন করে আলোচনা। বাণিজ্য চুক্তির জট খুললেই রূপীর দামের ক্ষেত্রে সহায়ক হবে বলে মনে করছেন অনেক বিশেষজ্ঞ। তাছাড়াও গত কয়েক মাসে FPI (ফরেন পোর্টফোলিও ইনভেস্টমেন্ট)-দের দিক থেকে ক্রমাগত বিক্রি রুপীর পতনকে ইন্ধন জুগিয়েছে। ফলে কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক তথা বিভিন্ন ব্রোকারেজ কোম্পানিগুলি রুপির দামের পতনকে ঘিরে খুব বেশি ভয় পাওয়ার মত কিছু বলছেন না। আশা একটাই, এই পতন হবে সাময়িক।
Advertisement
ভারতের কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক আমাদের দেশের অর্থনৈতিক বৃদ্ধি নিয়ে অনেক আশার বাণী শুনিয়েছে গত সপ্তাহে। কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের মতে ২০২৬-এ অর্থনৈতিক বৃদ্ধির হার বেড়ে হতে পারে প্রায় ৭.৩ শতাংশ, যা আগে ছিল ৬.৮% এর মত। এর ফলে অর্থনৈতিক উন্নয়ন হবে অনেক ত্বরান্বিত। মূলধনের Flow থাকবে আরও বেশি। আবার মুদ্রাস্ফীতির হার রিজার্ভ ব্যাঙ্কের মতে অনেকটা কন্ট্রোলে থাকবে। আগামী দিনে মুদ্রাস্ফীতির বৃদ্ধির হার ২% আশে পাশে থাকবে বলে কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের পূর্বানুমান। এই দুইয়ের মেলবন্ধনে বাজার আগামীদিনে উপরের দিকে দৌড়াবে বলে মনে করছে বিশেষজ্ঞ মহল।
আর্থিক বৃদ্ধির জোরালো তথ্য এবং নিয়ন্ত্রণাধীন মুদ্রাস্ফীতির ফলে লাভবান হতে পারে গাড়ি, আবাসন, কনজিউমার, ব্যাঙ্কিং প্রভৃতি সেক্টর। বিনিয়োগকারী হিসেবে আপনিও আপনার বিশেষজ্ঞের সাহায্য নিয়ে উপরিউক্ত সেক্টরে সরাসরি অথবা মিউচুয়াল ফান্ডের মাধ্যমে বিনিয়োগ করতে পারেন।
রিপো রেট কমার জন্য আগামী দিনে সুদের হার আরও কমবে। এক্ষেত্রে অসুবিধায় পড়তে পারেন সুদের ওপর নির্ভরশীল বিশেষত প্রবীণ নাগরিকরা। অল্প ঝুঁকি নিয়ে ভালো রিটার্নের আশায় তাঁরা বেছে নিতে পারেন ব্যালান্সড অ্যাডভান্টেজ ফান্ড কিম্বা কনজারভেটিভ হাইব্রিড ফান্ডের মতো ফান্ডকে তাদের বিনিয়োগের মাধ্যম হিসেবে। বিনিয়োগ করার সময় আপনার রিস্ক প্রোফাইল অনুযায়ী বিনিয়োগের জন্য অবশ্যই বিশেষজ্ঞের সাহায্য নেবেন। অবশ্যই মাথায় রাখবেন, রিক্স প্রোফাইল অনুযায়ী বিনিয়োগ, নিয়মানুবর্তিতা, বিশেষজ্ঞের মূল্যবান পরামর্শ এবং দীর্ঘকালীন বিনিয়োগে থাকা— আপনার বিনিয়োগের সাফল্যের প্রধান শর্ত।
Advertisement



