ছত্রপতি শিবাজি মহারাজের পুত্র মারাঠা রাজা সম্ভাজি। এবার তাঁর ভূমিকাতেই ভিকি কৌশল। স্বাভাবিকভাবেই কাড়া নাকাড়া বাজিয়ে বেশ রাজকীয় বৈভব নিয়েই ভিকি এলেন কলকাতার প্রিয়া সিনেমা হলে। দর্শক আর অনুরাগীদের উচ্ছাসের শব্দে তাঁর কণ্ঠস্বর প্রায় চাপা পড়ে যায় আর কী ! এই উত্তেজনা স্বাভাবিক। নানা বিতর্কের জেরে ক্রমশ পিছোচ্ছিল সম্ভাজির জীবন অবলম্বনে নির্মিত এই ছবির রিলিজ। এবার সব জট কাটিয়ে প্রেম দিবসে মুক্তি পাচ্ছে ‘ছাভা’। এটি শিবাজি সাওয়ান্তের মারাঠি উপন্যাস ‘ছাভা’ অবলম্বনে নির্মিত।
‘১৪ ফেব্রুয়ারি এবার আর প্রেম দিবস নয়, উদযাপন করুন ছাভা দিবস’, মঞ্চে উঠে এমনই বার্তা দিলেন ভিকি। দর্শক ততক্ষণে উত্তজনায় টগবগে কারণ পর্দা জুড়ে চলছে এই বহুল প্রতিক্ষিত ছবির ট্রেলার। ভারতের মারাঠা সাম্রাজ্যের ইতিহাসের রাজকীয় অধ্যায়ের ঝলক দেখা গেল ট্রেলারে। ছত্রপতি সম্ভাজির ভূমিকায় ভিকির যথাযথ অভিনয়। এক রাজকীয় ভঙ্গি আর অদম্য সাহসিকতার আইকন, যিনি তাঁর ভূমি রক্ষার জন্য বীরত্বের সঙ্গে লড়াই করেন। ছবিতে একদিকে যেমন নিষ্ঠুরতা, রক্তপাত কিন্তু তীব্রভাবে আকর্ষণীয় কিছু দৃশ্য রয়েছে- পাশাপাশি ভারসাম্য রেখেছে, মহারানি যেশুবাইয়ের চরিত্রে রশ্মিকা মান্দানার স্নিগ্ধ উপস্থিতি।
Advertisement
ছবির আখ্যানে দেখা যায় ঔরঙ্গজেব, যে-কোনও মূল্যে সম্ভাজিকে নির্মূল করার অঙ্গীকার করছেন। মারাঠা ও মুঘলদের মধ্যে ক্রমবর্ধমান যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে নির্মিত এই ছবিটি, অ্যাড্রিনালিন রাশ বাড়িয়ে দেওয়ার মতো অ্যাকশনে পরিপূর্ণ। ‘ছাভা’ অর্থাৎ ব্যাঘ্র শাবক। তাই ভিকির চরিত্রটি নির্ভীক যোদ্ধার। তিনি শুধু যুদ্ধের দৃশ্যে শত শত সৈন্যের মুখোমুখি হন না, সিংহের সাথে প্রচণ্ড লড়াইয়েও লিপ্ত হন।
Advertisement
প্রশ্নটা করেই ফেললাম ভিকিকে, কারণ এখন তিনি আর ‘মসান’ ছবির সেই নবাগত তরুণ নন, বরং অভিনেতা হিসেবে অনেক পরিণত হয়েছেন। ‘আপনি যখন এমন একটি চরিত্রে অভিনয় করছেন, যেটি বিপুল আবেগের প্রতিমূর্তি, ঐতিহাসিক এক ব্যক্তিত্ব। তাঁর সঙ্গে দেশের একটি বিশেষ অংশের সংস্কৃতি, সেই সময়ের আর্থ সামাজিক প্রেক্ষাপট জড়িত- তখন কি বাড়তি কোনও চাপ মনের মধ্যে কাজ করে?‘
ভিকির স্পষ্ট জবাব, ‘যে-কোনও বায়োপিকে অভিনয় করলে একটা বাড়তি মানসিক চাপ এবং দায়িত্ববোধ জড়িয়ে যায়। এর কারণ সেখানে খুব বেশি সৃষ্টিশীলতা দেখানোর মতো স্বাধীনতা নেওয়া যায় না। এই চরিত্রটার ক্ষেত্রে বিষয়টা আরও কঠিন ছিল, কারণ সাম্ভাজিকে শুধু রাজা বা যোদ্ধা হিসেবে নয়- মানুষ ঈশ্বরের মতো ভয় ভক্তি করতেন। ফলে এর সঙ্গে মানুষের আস্থা এবং আবেগ জড়িয়ে আছে। কোনও ভাবেই আমি তাঁদের ভাবাবেগকে আঘাত করার মতো দায়িত্বজ্ঞানহীন হতে পারি না। তাই প্রায় ৭ মাস ধরে ৫ ঘণ্টা করে বসেছি চিত্রনাট্যকার ও নির্দেশকের সঙ্গে, চরিত্রটাকে বোঝার জন্য- যাতে মানুষ দেখে বলেন, সাম্ভাজিকে সঠিকভাবে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করতে পেরেছি আমরা। মহারাজের আশীর্বাদে সবটা সম্ভব হয়েছে। যে-পরিস্থিতিতে আমরা কাজ করেছি সেটা ওঁর আশীর্বাদ না থাকলে সম্ভব হত না।‘
যাওয়ার আগে প্রেক্ষাগৃহের ছাদ থেকে উপস্থিত ভক্তদের উদ্দেশে হাত নাড়েন অভিনেতা। স্পষ্ট বাংলায় জানান, এই শহরকে তাঁর ভালোবাসার কথা। লক্ষণ উতেকর নির্দিশিত ছবিটিকে এই শহর বক্স অফিসে কতটা ভালোবাসা দেয়, সেটাই এখন দেখার।
Advertisement



