• facebook
  • twitter
Monday, 19 May, 2025

তপন সিনহা

তপন সিনহার ছবিগুলি শুধু নান্দনিকতার কারণেই নয়, বাণিজ্য-সফল ছবি হিসেবেও সমাদৃত। ‘গল্প হলেও সত্যি’ ছিল এবারের উদ্বোধনী ছবি।

তপন সিনহার ছবিগুলি শুধু নান্দনিকতার কারণেই নয়, বাণিজ্য-সফল ছবি হিসেবেও সমাদৃত। ‘গল্প হলেও সত্যি’ ছিল এবারের উদ্বোধনী ছবি। এছাড়াও KIFF-এ প্রদর্শিত হচ্ছে ‘কাবুলিওয়ালা’, ‘হারমোনিয়াম’ এবং ‘নির্জন সৈকতে’।

বেশ কিছুদিন ধরেই একটি কমেডি বানানোর কথা ভাবছিলেন তপন। স্ল্যাপস্টিক কমেডিতে বিশ্বাস করতেন না তিনি। ফলে একটি মধ্যবিত্ত পারিবারিক জীবনের দৈনন্দিন কষ্টের উপর ভিত্তি করে, তৈরি হল হাস্যরসাত্মক ছবি ‘গল্প হলেও সত্যি’।

রবি ঘোষ এই ছবিতে একটি অদ্ভূত চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন। সেই চরিত্র একটি অধরা কুয়াশা থেকে বেরিয়ে আসে এবং সেভাবেই একদিন অদৃশ্যও হয়ে যায়। আবির্ভাব এবং অন্তর্ধানের এই ঘটনার মধ্যে সে পরিবারের সদস্যদের মন থেকে ঘৃণা, স্বার্থপরতা এবং হিংসার মনোভাব মুছে ফেলে। এইভাবেই একটি আদর্শ পরিবার গঠনের ভাবনা প্রকাশ পায় ছবিটিতে, যা আজকের দিনেও প্রাসঙ্গিক।

আবার ‘হারমোনিয়াম’ ছবিতে আমরা দেখি আমাদের সমাজ ব্যবস্থা, ধর্ম, বর্ণ এবং ধনী ও দরিদ্রের পার্থক্য দ্বারা বিভক্ত। তবু সঙ্গীত এই সমস্ত বিভেদকে অতিক্রম করে। ছবিটি সেইসময়ে সিওল চলচ্চিত্র উৎসবে সেরা সঙ্গীতের পুরস্কার পেয়েছিল।

তপনবাবুর সঙ্গে একসময় কাজ করেছিলেন দীপঙ্কর দে, তাঁর ছবি ‘বাঞ্ছারামের বাগান’-এ। দীপঙ্কর যে-চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন তাতে প্রথমে উত্তম কুমারকে ভাবা হয়েছিল। কিন্তু শুটিংয়ের সময় তিনি নির্দেশককে ডেট দিতে পারেননি। উত্তম কুমার চেয়েছিলেন তপনবাবু যেন তারিখগুলো পুনর্নির্ধারণ করেন কিন্তু সেটা প্রায় অসম্ভব ছিল। বারাসাতে একটি বাগান নির্মাণে প্রচুর অর্থ ব্যয় করা হয়েছিল। যদি শুটিং পিছিয়ে দেওয়া হতো, তবে সমস্ত মরশুমি ফুল এবং গাছপালা শুকিয়ে যেত। উত্তম কুমারের পরিবর্তে তখন দীপঙ্করকে কাস্ট করা হয়। এই ছবিটি এবারের উৎসবে না থাকলেও এটি নিঃসন্দেহে তপন সিনহার একটি মনে রাখার মতো ছবি।

নির্দেশকের সঙ্গে কাজের অভিজ্ঞতা নিয়ে বলতে গিয়ে অভিনেতা দীপঙ্কর দে বললেন, ‘তপনবাবু শুটিংয়ের আগে পুরোদস্তুর রিহার্সাল করাতেন। এখন যেমন অনেকেই ওয়ার্কশপ করান আর কী। তা সেই রিহার্সালেই তিনি নিজে দেখিয়ে দিতেন চরিত্রটির ভাব ভঙ্গিমা কেমন হবে। বিশেষ কোনও ম্যানারিজম থাকলে সেটাও শিখিয়ে দিতেন। আমরা ওঁকে পুরোপুরি ফলো করে কাজ করতাম। তপনবাবুকে দেখে যতটা কড়া ধরনের মানুষ মনে হয়, ফ্লোরে কিন্তু মোটেই তেমন ছিলেন না। ঠাট্টার ছলে, মজার ছলে কাজ বুঝিয়ে দিতেন। গল্পগাছাও করতেন সকলের সঙ্গে।’

একবার একটি সাক্ষাৎকারে তপন সিনহা বলেছিলেন, ‘আমার কাছে, সিনেমা হল মানুষের সংবেদনশীলতাকে আঘাত না করা নিখাদ বিনোদন। আমি চলচ্চিত্রের শিক্ষায় বিশ্বাস করি না। বরং আমার মনের সমস্ত জানালা উন্মুক্ত রাখাতে বিশ্বাস করি। ‘বিনোদন’ শব্দটি একটি আপেক্ষিক শব্দ। ভারতে বা পৃথিবীর কোথাওই সিনেমা মরতে পারে না। যতক্ষণ পর্যন্ত জনসাধারণের মধ্যে শতভাগ শিক্ষা না হয়, ততক্ষণ পর্যন্ত সিনেমা তাদের তথ্য, শিক্ষা এবং বিনোদনের একমাত্র উৎস হয়ে থাকবে।’ এই ভাবনা থেকেই কলকাতার মানুষ আজও ছবি দেখেন কিনা জানা নেই- তবে আমাদের ছবির শহর, কবিতার শহরের বার্ষিক এই বিশ্ব সিনেমার উদযাপনে মাতবেন না মানুষ, তা কি হয়!