• facebook
  • twitter
Monday, 15 December, 2025

সিরিয়াল কিলিং আর চালচিত্রে আটকানো শবদেহ

একটি মানবিক দৃষ্টিকোণকে প্রাধান্য দেওয়া গল্প এবং স্মার্ট সম্পাদনা। উৎসবের মরশুমে প্রতিম ডি গুপ্ত-র হাড় হিম করা থ্রিলার, ‘চালচিত্র’ দেখে এলেন অবন্তী সিনহা।

শীতের কুয়াশা ছিঁড়ে বেরিয়ে আসে যদি ঘাতকের অস্পষ্ট চেহারা, রক্তমাখা ছুরি, নৃশংস কিছু খুন আর চালচিত্রের ফ্রেমে আটকানো একের পর এক মৃত নারী-শরীর! হ্যাঁ, প্রতিম ডি গুপ্ত-র সাম্প্রতিক ক্রাইম থ্রিলার ছবি ‘চালচিত্র’ দেখতে হলে, একটা মানসিক প্রস্তুতি রাখুন, পরতে পরতে কিছু চমক আপনার জন্য অপেক্ষা করে আছে।

থ্রিলার, অপরাধের গল্প, গোয়েন্দা কাহিনী- এসব গুলে খাওয়া বাঙালির প্রত্যাশাটা তাই বড়ো পর্দায় থ্রিলার দেখার সময় স্বভাবতই কিছুটা বেশি থাকে। আর সেটা যদি প্রতিমের মতো নির্দেশকের নির্মাণ হয়- যিনি এর আগেও থ্রিলার তৈরি করেছেন (সাহেব বিবি গোলাম, ২০১২), তাহলে তো মানুষের আগ্রহ দ্বিগুন হওয়ারই কথা। হতাশ করেননি, নির্দেশক। যাঁরা শেষ পর্যন্ত সিরিয়াল কিলিং-এর তদন্তের টানটান উত্তেজনা উপভোগ করতে চান, তাঁদের জন্য ‘চালচিত্র’ অবশ্যই একটি দারুণ অভিজ্ঞতা হবে। ফ্রেন্ডস কমিউনিকেশনের প্রযোজনার এটি ১৮ তম ছবি।

Advertisement

মহানগরীতে পরপর খুন হচ্ছেন মহিলারা। সবগুলোই কি বিচ্ছিন্ন ঘটনা, নাকি সিরিয়াল কিলিং? এই কেসের দায়িত্ব সামলাতে নামেন কলকাতা পুলিশের হোমিসাইড বিভাগের চার অফিসার- কণিষ্ক চট্টোপাধ্যায় (টোটা রায়চৌধুরী), নাসির রহমান (অনির্বাণ চক্রবর্তী), রীতেশ কুমার (শান্তনু মাহেশ্বরী) এবং বিশ্বরূপ অধিকারী (ইন্দ্রজিৎ বসু)। তদন্তে উঠে আসে, সেই সব অবিবাহিত মহিলারাই টার্গেট হচ্ছেন, যাঁদের বিয়ে কোনও না কোনও কারণে ভেঙে গিয়েছে। খুনের অদ্ভূত একটা প্যাটার্ন ফলো করছে খুনি। সে মহিলাদের খুন করে বধূবেশে সাজিয়ে, দেওয়ালে চালচিত্রর মতো করে ঝুলিয়ে রেখে যাচ্ছে।

Advertisement

এই সিরিয়াল কিলিংয়ের সঙ্গে ১২ বছর আগে ঘটে যাওয়া একটি কেসের দারুণ মিল রয়েছে। কিন্তু সত্যিই কি কেস দুটো জড়িত একে অন্যের সঙ্গে? পুরনো খুনি এই কাজ করছে না এটা নিশ্চিত, কারণ সে মানসিক হাসপাতালে বন্দি! তাহলে কে এই কপিক্যাট ক্রিমিনাল? কেনই বা সে করছে এই খুনগুলো? না, আর ছবির স্পয়লার না দিয়ে বরং পরামর্শ দিই, দেখে আসুন কপ ইউনিভার্সের এই বঙ্গ-সংযোজন।

আসলে এ শুধুই একটি অপরাধ সংঘটিত হওয়ার গল্প নয়। তদন্তকারী অফিসারদের জীবনও কীভাবে জড়িয়ে যায় কেসের সঙ্গে, কীভাবে রাতদিনের হিসেব থাকে না, তাঁদের পারিবারিক সুখ শান্তির চড়া মূল্য দিতে হয়- এই ছবি তারও গল্প বলে। টোটা অভিনীত ‘কনিষ্ক’ চরিত্রটায়, তিনি তাঁর বুদ্ধিদীপ্ত অভিনয় দিয়ে আলাদা মাত্রা যোগ করেছেন। শান্তনু এবং ইন্দ্রজিৎ দুজনেই খুব সাবলীল। ছবিতে ব্রাত্য বসু এবং বাংলাদেশের অভিনেতা জিয়াউল ফারুক অপুর্বর অভিনয়ও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে।

আর বিশেষ ভাবে বলতে হয় ‘নাসির ভাই’-এর চরিত্রে অভিনয় করা অনির্বাণ চক্রবর্তীর কথা, যিনি স্পেশাল চাইল্ড ‘পুতুল’-এর (তানিকা বসু) সিংগেল পেরেন্ট। তাঁর মধ্যে সারাক্ষণ একটা গিল্ট কাজ করতে থাকে যে, তিনি মেয়েকে সময় দিতে পারেন না। ‘নাসির ঠান্ডা মাথার, মিতভাষী একজন অফিসার, যিনি সাধারণভাবে পুলিশ বলতে মানুষ যা বোঝেন, তার থেকে আলাদা। কথা বললেও খুব মৃদু স্বরে বলেন। সহকর্মী হিসেবে কনিষ্কর সঙ্গে একটা বন্ডিং আছে। নাসিরের মেয়ের সাথে তার বন্ডিংটাও এখানে খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিল। আমি নিজে যদিও রিয়েল লাইফে একজন বাবা নই এবং পুতুল একজন স্পেশাল চাইল্ড, তাই এই চরিত্রটা হ্যান্ডেল করার সময় আমায় একটু বেশিই ভাবনাচিন্তা করতে হয়েছিল। তবে চরিত্রটা যহেতু ধীর স্থির, প্রতিম আমায় সেই স্বাধীনতা দিয়েছেন যাতে সেটা পর্দায় যতটা সময় ডিমান্ড করে, আমি যাতে ততটাই দিতে পারি’, বলেন অনির্বাণ।

তানিকা তাঁর চরিত্রে অসামান্য। বললেন, ‘ছোটো থেকে আমি ক্রাইম থ্রিলারের পোকা। আর ক্রাইম ছবিতে ওরকম একটা চ্যালেঞ্জিং চরিত্রে অভিনয় করব, এটা আমার কাছে ছিল একটা বাড়তি আকর্ষণ।’

প্রতিম ডি গুপ্তের ‘চালচিত্র’-র ইউএসপি হল, ক্রাইমের বাইরে একটি মানবিক দৃষ্টিকোণকে প্রাধান্য দেওয়া গল্প এবং স্মার্ট সম্পাদনা। উৎসবের মরশুমে অনেকগুলি ছবির ভিড়ে এটি হারিয়ে যাবে না, সেটা আশা করা যায়।

Advertisement