সমাজের কুসংস্কার এবং অন্ধবিশ্বাসের বিরুদ্ধে দুই বোনের লড়াইয়ের গল্প ‘ডাইনি’। বেঁচে থাকার গল্প। নিজের সর্বস্ব দিয়ে আপনজনকে রক্ষা করার গল্প। ডাইনি চরিত্রে মিমি চক্রবর্তী। গল্প শুনলেন দেবযানী লাহা ঘোষ।
প্রশ্ন: ডাইনির সিরিজে মিমি এই চরিত্রটার মধ্যে এমন কি স্পার্ক পেলে যে যার জন্য তুমি এই চরিত্রটা করতে রাজি হলে?
মিমি: পরিচালক নির্ঝর যখন প্রথম আমার কাছে এই চরিত্রটা নিয়ে আসে গল্পটা শুনে ভীষণ চ্যালেঞ্জিং লেগেছিল। এটা দুই বোনের জার্নি।
Advertisement
ডাইনি বলে যাদের দাগিয়ে দেওয়া হয় সমাজে, ছোটবেলায় ভাবতাম তারা বোধহয় অন্য গ্রহের মানুষ। তাদের চোখ, দাঁত, নাক খুব বড় হবে। আস্তে আস্তে যখন বড় হয়েছি, তখন বুঝেছি তারা কিন্তু তোমার আমার মতো দেখতে মানুষই। আগে এমন ঘটনা অনেক ঘটতো, আমরা জানতে পারতাম না। এখন বিভিন্ন মাধ্যমে জানতে পারি। কোনো একটা ঘটনা নয়। অনেকগুলো সত্য ঘটনা অবলম্বনে এই সিরিজটা তৈরি। চরিত্রটার মধ্যে মনে হয়েছে আমার অনেক কিছু করার আছে। একটা কিক পেয়েছিলাম ভেতর থেকে। তাই এই চরিত্রটা করতে রাজি হয়ে গিয়েছিলাম।
Advertisement
প্রশ্ন: প্রায় দিনই আমরা শুনতে পাই ডাইনি অপবাদে বিভিন্ন মানুষকে দাগিয়ে দেওয়া হচ্ছে। আজও গ্রামে গঞ্জে মহিলাদের এইভাবে অপবাদ দেওয়া হয়। সেই বিষয়ের উপর কতটা সোচ্চার এই সিরিজ?
মিমি: নির্ঝর আমার কাছে যখন ওর এই গল্পটা নিয়ে আসে। তখন আমি ওকে প্রশ্ন করেছিলাম এখনো এইসব হয়? ও তখন আমাকে একটা ডেটা দেখায়। আমি অবাক হয়েছিলাম। আমাদের এই সিরিজটা অনেকগুলো সত্য ঘটনা থেকে অনুপ্রাণিত। নির্ঝর একটা নতুন টিম নিয়ে কাজ করেছে। ও জলপাইগুড়ির আমিও জলপাইগুড়ির, আমি ওর সঙ্গে কোথাও একটা কানেকশন অনুভব করেছিলাম।
প্রশ্ন: দুই বোনের গল্প লতা এবং পাতা তাদের জার্নিটা যদি একটু বলো?
মিমি: আমি বড়দি, পাতা এবং সে ছোটবেলায় এই নর্থবেঙ্গল ছেড়ে চলে যায়। গ্রাম, সমাজ, চা বাগানের এই জীবন তার পছন্দ নয়। পরে আবার ফিরে আসে এবং বোনকে এই অবস্থায় দেখে ঝাঁপিয়ে পড়ে। তখন এই গল্পের লড়াইটা দুই বোনের কাছেও নিজেদের অস্তিত্বের লড়াই হয়ে দাঁড়ায়।
প্রশ্ন: কুসংস্কারের আড়ালে ডাইনি অপবাদ দিয়ে মেরে ফেলার যে রীতি গ্রাম-গঞ্জে গড়ে উঠেছিল, বা মহিলাদের ঠকিয়ে জমিজমা কেড়ে নেওয়া— সেটা কিভাবে উঠে আসছে এই সিরিজের মধ্যে?
মিমি: ডাইনি অপবাদে কেন মানুষদের মেরে ফেলা হয় সেটা কিন্তু এই সিরিজে অবশ্যই আছে। তাছাড়া তার পেছনে রয়েছে নারীর অধিকার ছিনিয়ে নেওয়ারও গল্প। যখন কোনো মেয়ে জমি নিয়ে কথা বলে বা যৌন হিংসার বিরুদ্ধে গলা তোলে, তখনই তাকে চুপ করিয়ে দিতে খুন করা হয়। যেমন রয়েছে, যদি কোনো নারী পুরুষতান্ত্রিক সমাজের বিরুদ্ধে মাথা তুলে দাঁড়াতে চায়, তাহলে তাকে নানা অপবাদ দিয়ে সরিয়ে দেওয়া হয়। আর সেখানে ডাইনি অপবাদ দেওয়াটা ভীষণই সহজ এই পুরুষতান্ত্রিক সমাজে।
প্রশ্ন: এই ইন্ডাস্ট্রিতে নিশ্চয়ই তোমাকেও অনেক কিছু সহ্য করতে হয়?
মিমি : সব মহিলারাই নানাধরনের সমস্যা ফেস করছে। চলতে গেলে আমাদের সবাইকে কিন্তু অনেক কিছু ফেস করতে হয়। বিভিন্ন জায়গায়, বলতে পারো ইন্ডাস্ট্রিতে যে যেমন আছে, সে তার মতো করে ফেস করে। মেয়েরা যখন মাথা তুলে দাঁড়ায় বা তারা যখন অনেকটা এগিয়ে যায় পুরুষদের থেকে, তখন সব জায়গা থেকেই তাকে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। মেয়েরা সক্ষমতা দেখাতে গেলে নানা বাধার সম্মুখীন হতে হয়। এটা কিন্তু সব জায়গাতেই আছে। সব জায়গাতেই যুদ্ধ করে লড়াই করেই সেই জায়গাটা ছিনিয়ে নিতে হয়। সেটা প্রতিদিনের দৈনন্দিন জীবনেই হোক, বা কাজের ক্ষেত্রে। সব জায়গাতেই নারীরা লড়াই করছে, লড়াই করবে এবং লড়াই করেই তাদের জায়গা ছিনিয়ে নেবে।
প্রশ্ন: তোমার সোলো ট্রিপ কেমন হল?
মিমি: দারুণ দারুণ। খুব এনজয় করেছি। খালি একা লাগেজটা টানতে খুব অসুবিধা হয়েছে। কিন্ত ঘুরে এসে দারুণ মুডে আছি। আবার শুটিং ফ্লোরে চলে এসেছি।
প্রশ্ন: রক্তবীজ টু-এর শুটিং কেমন চলছে?
মিমি: খুব ভালো। এবারের থ্রিলারটা আরো জমজমাট। দর্শকদের সঙ্গে দেখা হবে পুজোয়। তবে হইচইতে ডাইনি দেখানো শুরু হয়ে গেছে। যারা দেখোনি। প্লিজ দেখো।
Advertisement



