নাট্য এবং নৃত্য যেখানে মিলেমিশে একাকার, ক্রিয়েটিভ ডান্স ওয়ার্কশপের তেমনই এক প্রযোজনা ‘কলাবতী আজও’। এ এক নারীর অসহায়তার আখ্যান, যেখানে সে কেবল সন্তান উৎপাদনের যন্ত্র মাত্র। তার ঠিকানা হয়তো এ দেশেরই অখ্যাত কোনও গ্রাম বা আসলে কোনও বিশেষ স্থানও নয়- সে ভারতের আকর থেকে উঠে আসা এক পরিচয়হীন নারী।
এদেশের শত সহস্র নারীর একজন- নির্যাতনের যন্ত্রণা সয়ে যাওয়ার ভবিতব্য নিয়েই যাঁর জন্ম। ‘কলাবতী’ এমন এক মায়ের কাহিনী, যাঁকে দেখতে হয়েছে একের পর এক জন্ম দেওয়া তাঁর ৯টি শিশু কন্যার হত্যা। পুত্র সন্তানের অভিলাষে যাঁর স্বামী তাঁকে ধর্ষণ করতেও পিছপা হন না। তার পরেও কলাবতী, বুকে পাথর চাপা দিয়ে আবারও জন্ম দেন এক শিশু কন্যার। সেই দশম কন্যা-সন্তান, রূপবতীকে বাঁচাতেই অবশেষে পাড়ি দেন অনিশ্চিতের পথে।
জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ির রথীন্দ্র মঞ্চে, উপস্থাপিত হল এই বিশেষ নাট্য-নৃত্য প্রযোজনা, যা জয়দীপ চক্রবর্তীর কবিতা অবলম্বনে নির্মিত। ভাবনা ও বিন্যাসে শর্মিলা ব্যানার্জী। নাট্য নির্মাণে কিংশুক বন্দ্যোপাধ্যায় এবং নৃত্য পরিকল্পনায় ড. শেলী পাল। ‘মা কলাবতী’-র চরিত্রে শেলী, তাঁর ওপেনিং সিন-এ অনবদ্য, যেখানে কন্যা সন্তানদের নিথর দেহ জেগে উঠে একটা রূপকের মায়াজাল তৈরি করে।
‘ছোট কলাবতী’-র চরিত্রে শম্পা পাল, ‘কলাবতীর স্বামী’-র চরিত্রে সম্পদ পারাল ও অন্যান্যরা সকলেই তাঁদের সেরাটা দিয়েছেন। আন্তর্জাতিক নারী দিবসে ক্রিয়েটিভ ডান্স ওয়ার্কশপের পক্ষ থেকে সম্মাননা জানানো হয় নানান পেশার বিশিষ্ট নারীদের। সম্মাননা গ্রহণ করেন ওড়িশি নৃত্যশিল্পী রিনা জানা, তথ্যচিত্র নির্দেশক অবন্তী সিনহা, নাট্যব্যক্তিত্ব সৌমিতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং অধ্যাপিকা ও কবি পায়েল রায় চৌধুরী।
