নয় নয় করে ৩০টা বছর পার করল কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব। ডিসেম্বরের ৪ থেকে ১১ তারিখ পর্যন্ত কলকাতার মানুষ ডুবে থাকবেন সেলুলয়েড ম্যাজিকে। এই প্রত্যাশা থেকেই কিছু বাছাই ছবি প্রদর্শনের তালিকায় রাখা হয়েছে। যে-দর্শকরা ওল্ড মাস্টারসদের ছবির ভক্ত, তাঁদের জন্য কয়েকটি মাইলফলক সিনেমা ছাড়াও থাকছে একটি প্রদর্শনী, যা রুপোলি পর্দার এই সমস্ত কিংবদন্তিদের অমূল্য অবদানকে মনে করাবে।
এবছর শতবর্ষের শ্রদ্ধার্ঘ্য বিভাগে তিনজন প্রবাদপ্রতিম বাঙালি নির্দেশককে বেছে নিয়েছে উৎসব কর্তৃপক্ষ। তাঁরা হলেন তপন সিনহা, অরুন্ধতী দেবী এবং হরিসাধন দাশগুপ্ত।
১৯৫০ এবং ৬০-এর দশকের বাংলা চলচ্চিত্রে সুচিত্রা সেন, সুপ্রিয়া দেবী, সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায়, সন্ধ্যা রায় এবং মাধবী মুখার্জির মতো দাপুটে শিল্পীরা তো ছিলেনই- কিন্তু সেই আলোকিতাদের তালিকায় ছিলেন অরুন্ধতী দেবীও। তাঁর অভিজাত ব্যক্তিত্বের কারণেই যেন ভিন্ন একটি আসনে অধিষ্ঠান করতেন এই শিল্পী।
তাঁর প্রথম চলচ্চিত্র, ‘মহাপ্রস্থানার পথে’ (১৯৫২) বুঝিয়ে দিয়েছিল, একজন শক্তিশালি অভিনেত্রী হিসাবে নিজের আসন কায়েম করবেন তিনি। কয়েকটি মুষ্টিমেয় চলচ্চিত্রের কর্মজীবনেই তিনি এমন সব চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন, যারা স্বাধীন,আলোকপ্রাপ্তা এবং স্বাবলম্বী নারী।
অসিত সেন পরিচালিত ‘চলাচল’ (১৯৫৬) ছবিটি একটি প্রধান উদাহরণ। এতে অরুন্ধতী দেবী ‘নীলা’র চরিত্রে অভিনয় করেছেন, যিনি একজন শল্যচিকিৎসক। ১৯৫০-এর দশকের মাঝামাঝি সময়ে নির্মিত একটি চলচ্চিত্রের জন্য একজন মহিলাকে শল্যচিকিৎসক হিসাবে পাওয়া বৈপ্লবিক ঘটনা এবং অভিনেত্রী চরিত্রটিকে অত্যন্ত বিশ্বাসযোগ্য করে তোলেন।
তপন সিনহার ‘ঝিন্দের বন্দী’ (১৯৬১)-এর মতো একটি ছবি যেখানে, উত্তম কুমার (দ্বৈত ভূমিকায়) এবং সৌমিত্র চ্যাটার্জির মতো হেভিওয়েটদের বিরুদ্ধে অভিনয় করা সত্ত্বেও, তাঁর চরিত্র ‘রানী কস্তুরি’ বিশেষভাবে দর্শকদের প্রভাবিত করে।
তবে অরুন্ধতী দেবী কেবল একজন উচ্চমানের অভিনেত্রীই ছিলেন না, তিনি নিজে পাঁচটি চলচ্চিত্র পরিচালনা করেছিলেন, যার মধ্যে দুটি জিতে নিয়েছিল জাতীয় পুরষ্কার। রবীন্দ্রনাথের সাহচর্য পাওয়ার পর থেকে, তাঁকেই প্রাণের দেবতা হিসাবে মনে স্থান দিয়েছিলেন অরুন্ধতী। তাঁর সমগ্র জীবনধারা রবীন্দ্র সংস্কৃতির দ্বারা পরিব্যাপ্ত ছিল।
একাধারে সুরকার, সংগীতশিল্পী এবং নৃত্যশিল্পী হিসেবেও তিনি দক্ষতা অর্জন করেছিলেন। নন্দলাল বসুর তত্ত্বাবধানে কলাভবনে দীর্ঘদিন সৃজনশীলতার পাঠ নিয়েছিলেন তিনি। চিত্রশিল্পে এতটাই দক্ষ ছিলেন অরুন্ধতী যে, এক সময়ে ছবি আঁকাকেই পেশা হিসাবে অনুসরণ করার কথা বিবেচনা করেছিলেন।
এবছর KIFF-এ থাকছে অরুন্ধতী দেবী অভিনীত ছবি ভগিনী নিবেদিতা।