পশ্চিমবঙ্গের বিশাল এলাকা জুড়ে মিলেছে তেলের খনির সন্ধান। তাই রাজ্যের প্রায় ১০০ বর্গকিলোমিটার এলাকা জুড়ে খননের অনুমতি চেয়ে রাজ্য সরকারকে চিঠি দিয়েছে কেন্দ্র। সংসদে কেন্দ্রীয় পেট্রোলিয়ামমন্ত্রী হরদীপ সিংহ পুরী এমনটাই জানিয়েছেন। শুধু তেল নয়, প্রাকৃতিক গ্যাসেরও বিশাল ভাণ্ডার রয়েছে উত্তর ২৪ পরগনার অশোকনগরে। এই তেল এবং গ্যাস উত্তোলন করা গেলে পশ্চিমবঙ্গের অর্থনীতিতে জোয়ার আসবে বলে জানান কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। মন্ত্রী জানান, রাজ্যের অনুমতি পেলেই কাজ শুরু হবে। অন্যদিকে রাজ্য সরকারের তরফে জানানো হয়েছে, খননকাজের সামগ্রিক ছবি স্পষ্ট হলেই অনুমতি দেওয়া হবে।
২০১৮ সালে উত্তর ২৪ পরগনার অশোকনগরে তেলের হদিশ পাওয়া গিয়েছিল। অশোকনগরের ৫.৮৮ বর্গ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে ওই তেল রয়েছে বলে জানায় ওএনজিসি। এরপর ২০২০ সাল থেকে এখনও পর্যন্ত ১৯টি চিঠি রাজ্য সরকারকে দিয়েছে বলে দাবি কেন্দ্রর। কিন্তু রাজ্যের সাড়া মেলেনি।
উল্লেখ্য, পেট্রোলিয়াম দেশের সম্পত্তি। কিন্তু যে রাজ্যের মাটির তলায় সেই তেল থাকে, সেই রাজ্যের থেকে খননের জন্য পেট্রোলিয়াম মাইনিং লিজ নিতে হয়। প্রয়োজনীয় সেই অনুমতিই কেন্দ্র চাইছে।
কিন্তু রাজ্য প্রশাসন সূত্রে জানানো হয়, অশোকনগরের প্রকল্পে ড্রিলিং কিভাবে শুরু হবে, কোথা থেকে শুরু হবে তা যেমন স্পষ্ট ছিল না, তেমনই কোথায় গিয়ে সেই খননকাজ শেষ হবে তাও বোঝা সম্ভব ছিল না। তাই বিপদের সম্ভাবনার কথা ভেবেই সবুজ সংকেত দেওয়া সম্ভব হয়নি। সামগ্রিকভাবে খননকাজ চালানোর ছবি স্পষ্ট না হওয়ায় বিষয়টি আটকে রয়েছে।
শুধু অশোকনগরই নয়, রানাঘাট, কাঁকপুলের মতো এলাকায় আরও ৯৯.০৬ বর্গ কিলোমিটার এলাকায় খনিজ তেল রয়েছে বলে দাবি কেন্দ্রের। সেখানে খননের জন্যে লিজ অনুমতি চেয়েও চিঠি পাঠিয়েছে কেন্দ্র। কেন্দ্রীয় সরকারের দাবি, পশ্চিমবঙ্গে তেলের খনির জন্য ইতিমধ্যেই কেন্দ্রীয় সরকার ১০৪৫.৫ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে। যদি এখানে খননকার্যের মাধ্যমে মাটির তলা থেকে তেল উত্তোলন শুরু করা যায়, তাহলে বছরে পশ্চিমবঙ্গের আয় হতে পারে ৮১২৬ কোটি টাকা। আর তেল উত্তোলনের কাজ শুরু হলে বাংলায় কর্মসংস্থানের নতুন দিগন্ত খুলে যাবে বলে জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী।
প্রসঙ্গত, ওএনজিসি স্যাটেলাইটের মাধ্যমে খনিজ তেল বা প্রাকৃতিক গ্যাসের খোঁজ চালায়। অশোকনগর ছাড়াও পূর্ব মেদিনীপুর জেলার নদ-নদী ও অববাহিকা অঞ্চলে খননকাজ চালানো হয়েছে। এই জেলার ভূপতিনগরে খনিজ তেলের সন্ধান মিলেছে। বিজ্ঞানীরাও বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। এছাড়া পশ্চিম মেদিনীপুরের সবংয়েও মিলেছে খনিজ তেলের সন্ধান। অনুসন্ধান চালিয়ে যে পরিমাণ খনিজ তেল এবং প্রাকৃতিক গ্যাসের সন্ধান পাওয়া গিয়েছে তাতে বদলে যেতে পারে বঙ্গের শিল্পক্ষেত্রের সামগ্রিক মানচিত্র।