• facebook
  • twitter
Saturday, 6 December, 2025

২৬ হাজার চাকরি বাতিলের দাবি তুলে দলে তীব্র বিরোধিতার মুখে বিকাশ

যাঁরা অযোগ্য তাঁদের আবার পরীক্ষা নেওয়া হোক

ফাইল চিত্র

২০১৬ এসএসসি-তে ২৫,৭৫৩ জন প্রার্থীর চাকরি বাতিল মামলায় সোমবার শুনানি হয় সুপ্রিম কোর্টে। সেই সময় আদালতে মামলাকারীদের অন্যতম আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য এই ২৬ হাজারের প্যানেল বাতিলের পক্ষে সওয়াল করেন। তাঁর এই অবস্থান নিয়ে দলের মধ্যে প্রবল বিরোধিতার মুখে পড়েছেন কলকাতা পুরসভার প্রাক্তন মেয়র ও সিপিএম নেতা বিকাশবাবু।

তাঁর মন্তব্যের বিরোধিতা করেছে সিপিএম-এর ছাত্র সংগঠন এসএফআই থেকে শুরু করে পার্টির শিক্ষক সংগঠন এবিটিএ। বিপক্ষে থাকা এসএফআই নেতৃত্ব বুঝিয়ে দিয়েছে, বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য আইনজীবী হিসাবে যে মন্তব্য করেছেন, সেটা তাঁর নিজস্ব বক্তব্য। কিন্তু সংগঠনগতভাবে প্যানেল বাতিলের পক্ষে নয় এসএফআই।

Advertisement

বিকাশবাবুর এই মন্তব্য নিয়ে এসএফআই-এর রাজ্য সম্পাদক দেবাঞ্জন দে বলেন, ‘২৬ হাজার চাকরিপ্রার্থীর সম্পর্কে আমাদের মনোভাব এটাই যে, খুব স্পষ্টভাবে যোগ্য-অযোগ্যদের আলাদা করতে হবে। যাঁরা যোগ্যতার বিচারে চাকরি পেয়েছেন, তাঁদের চাকরি চলে যাবে, এটা হতে পারে না। প্যানেল বাতিল করা মানে এই প্যানেল আবার প্রস্তুত করতে দু-তিনবছর সময় লেগে যাবে। তা হলে স্কুলগুলি শিক্ষকশূন্য হয়ে পড়ে থাকবে।’

Advertisement

ওই ছাত্রনেতার দাবি, ‘যাঁরা যোগ্য, তাঁদের চাকরি কাড়া যাবে না, যাঁরা অযোগ্য তাঁদের আবার পরীক্ষা নেওয়া হোক।’ ছাত্রনেতা দেবাঞ্জনের সমর্থনে সুর মিলিয়ে সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী বলেছেন, যোগ্য ও ন্যায্য কারও চাকরি যেন বাতিল না হয়। তিনি বলেছেন, ‘দুর্নীতির বিষয়টি সামনে এনেছিলেন বিকাশ ভট্টাচার্যই। কিন্তু কারও যোগ্য চাকরি বাতিল করা যাবে না। পরীক্ষা দিয়ে, লেখাপড়া করে পাস করে নিজের যোগ্যতায় যাঁরা চাকরি পেয়েছেন, দুর্নীতির চাকরি হিসাবে তাঁদের গণ্য করা যাবে না।’

এদিকে মঙ্গলবার সিপিএমের শিক্ষক সংগঠন এবিটিএ-র সাধারণ সম্পাদক সুকুমার পাইন এ প্রসঙ্গে বলেছেন, ‘পুরো ২৬ হাজার চাকরি বাতিলের পক্ষে আমরা নই। কারণ, এই প্যানেলে বহু যোগ্য প্রার্থী রয়েছেন। যাঁরা আগে চাকরি করতেন। কিন্তু উচ্চ বেতনের জন্য তাঁরা ফের এই পরীক্ষাটা দিয়েছিলেন। তাছাড়া কাছাকাছি স্কুলে আসার জন্য অনেকেই পরীক্ষা দিয়েছেন। ফলে সবাই যে অযোগ্য, এটা আমরা বলতে পারি না। যোগ্যদের চাকরি বহাল রাখার জন্য আমরা সুপ্রিম কোর্টে দু’জন নাম করা আইনজীবীও দিয়েছি।’

অন্যদিকে কলকাতার ধর্মতলায় অবস্থানরত চাকরিপ্রার্থী, যাঁরা এই বিতর্কিত প্যানেলে নাম থাকায় চাকরি করছেন, ইতিমধ্যেই তাঁরা ৬বছর ধরে শিক্ষকতার সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন। আইনজীবী বিকাশ ভট্টাচার্যের মন্তব্য নিয়ে তাঁরাও কড়া প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন। চাকরি নিশ্চিত করার দাবি জানিয়ে তাঁরা অবস্থানে বসেছেন। সেখানে অবস্থানরত এক শিক্ষক বিষয়টির প্রতিবাদ করে বলেন, কেন তাঁরা ফের পরীক্ষায় বসবেন? একটা পরীক্ষা পদ্ধতির মধ্যে দিয়ে পাশ করে যোগ্যতার ভিত্তিতে চাকরি পেয়েছেন। এছাড়াও বিভিন্ন ভেরিফিকেশনে তাঁরা ডকুমেন্ট দিয়েছেন। বিকাশবাবুকে তীব্র আক্রমণ করে এক চাকরিপ্রার্থীর প্রশ্ন, যিনি নতুন করে পরীক্ষায় বসার কথা বলেছেন, তাঁকে নতুন করে মাধ্যমিক পরীক্ষা দিতে বললে তিনি কি পাশ করতে পারবেন?

প্রসঙ্গত সোমবার প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খান্নার এজলাশে দুই ঘন্টা ধরে মামলার শুনানি চলে। সেসময় মূল মামলাকারীর আইনজীবীদের কাছে বিচারপতি জানতে চান, ওএমআর শিটে নম্বর নিয়ম মেনেই কি প্রকাশ করা হয়েছিল? এই প্রশ্নের সওয়াল জবাবে মামলাকারীদের আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য বিষয়টির বিরোধিতা করে বলেন, নিয়ম মেনে ওএমআর শিটে নম্বর প্রকাশ করা হয়নি।

বিকাশবাবু আরও বলেন, মামলা দায়েরের পর আদালতের নির্দেশে ওএমআর শিট প্রকাশ করা হয়। অথচ এই পরীক্ষার ফলপ্রকাশ অনেক আগেই হয়ে গিয়েছিল। বিকাশবাবু আদালতে অভিযোগ করেন, পুরো নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়েই প্রশ্ন রয়েছে। কারণ শিক্ষা দপ্তরের এই গোটা প্রক্রিয়া ছিল বিতর্কিত। সেজন্য গোটা প্যানেল বাতিল করা উচিত। রাজ্যের উচিত স্বচ্ছভাবে কাজ করা। অথচ বিষয়টি নিয়ে রাজ্য সরকার, স্কুল সার্ভিস কমিশন ও মধ্যশিক্ষা পর্ষদ প্রত্যেকে পৃথক কথা বলেছে। এই তিন বিভাগের একটির সঙ্গে আর একটির কথার কোনও মিল পাওয়া যাচ্ছে না।

Advertisement