• facebook
  • twitter
Friday, 5 December, 2025

হুমায়ুনকে সাসপেন্ড করল তৃণমূল, ‘পচা ধান’ বলে তোপ মমতার

দলবিরোধী মন্তব্য করায় বহুবার বিতর্কে জড়িয়েছেন ভরতপুরের তৃণমূল বিধায়ক হুমায়ুন

অবশেষে ভরতপুরের বিধায়ক হুমায়ুন কবীরকে দল থেকে সাসপেন্ড করল তৃণমূল কংগ্রেস। বৃহস্পতিবার কলকাতায় তৃণমূল ভবনে একটি সাংবাদিক বৈঠক করে মুর্শিদাবাদের এই নেতাকে দল থেকে সাসপেন্ড করার কথা ঘোষণা করেন কলকাতার মেয়র তথা রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। এদিনই মুর্শিদাবাদের বহরমপুরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সভা করেন। সেই সভাস্থলে উপস্থিত থাকাকালীন হুমায়ুন সাসপেন্ড হওয়ার খবর পান।
সঙ্গে সঙ্গে সভাস্থল থেকে বেরিয়ে এসে তিনি জানান, আগামী ২২ ডিসেম্বর তিনি নতুন দল তৈরির কথা ঘোষণা করবেন। বহরমপুরের সভা থেকে নাম না করে ভরতপুরের বিধায়ক হুমায়ুন কবীরকে তোপ দেগেছেন মমতা। তিনি বলেন, ‘ভোটের আগে অনেকে ব্ল্যাকমেল করে। বিজেপির টাকা খেয়ে তাঁবেদারি করে। তাদের বিশ্বাস করবেন না। একটা ধান পচে গেলে সরিয়ে দিতে হয়। নাহলে বাকিগুলো পচে যায়। কিছু পোকামাকড় থাকবেই। তাঁদের সরিয়ে দিলে দেশ চলবে রাজ্য চলবে, সব চলবে।’
দলবিরোধী মন্তব্য করায় বহুবার বিতর্কে জড়িয়েছেন ভরতপুরের তৃণমূল বিধায়ক হুমায়ুন। তাঁকে একাধিকবার সতর্ক করেছিল দল। ৬ ডিসেম্বর বেলডাঙায় একটি মসজিদের শিলান্যাস করার কথা ঘোষণা করেছেন হুমায়ুন। বাবরি মসজিদ ধ্বংসের দিন এই কর্মসূচির ডাক দেওয়ায় দলের তরফে আপত্তি করা হয়েছিল। কিন্তু তা সত্ত্বেও নিজের অবস্থানে অনড় থেকেছেন হুমায়ুন। দলকে নিজের অবস্থান সম্পর্কেও জানিয়ে দিয়েছিলেন। সেই কারণেই রাজ্যের শাসকদলের তরফে তাঁকে সাসপেন্ড করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সাসপেন্ডের কথা জানতে পেরে হুমায়ুন জানিয়েছিলেন, তাঁকে চক্রান্ত করে সাসপেন্ড করা হয়েছে। আজ, শুক্রবার কিংবা সোমবার তিনি বিধায়ক পদ থেকে ইস্তফা দেবেন। তবে ৬ তারিখের কর্মসূচি অপরিবর্তিত থাকবে।  ২২ ডিসেম্বর নতুন দল ঘোষণা করার কথাও জানান তিনি। আগামী নির্বাচনে তাঁর দল ১৩৫টি আসনে প্রার্থী দেবে।
হুমায়ুনের মসজিদ তৈরির প্রস্তাবকে সংবিধান–বিরোধী বলে অভিযোগ করে কলকাতা হাইকোর্টে জনস্বার্থ মামলা দায়ের করেছেন এক আইনজীবী। হাই কোর্টের ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি সুজয় পালের ডিভিশন বেঞ্চে মামলাটি দায়ের হয়েছে। চলতি সপ্তাহেই মামলাটির শুনানি হতে পারে। সাংবাদিক বৈঠকে ফিরহাদের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন মুর্শিদাবাদ জেলার দুই নেতা, রাজ্যের বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী আখরুজ্জামান ও হরিহরপাড়ার বিধায়ক নিয়ামত শেখ। ফিরহাদ জানিয়েছেন, দল হুমায়ুনের সঙ্গে কোনও সম্পর্ক রাখবে না। তাঁর কথায়, ‘কেউ কোনও মসজিদ তৈরি করতেই পারেন। তবে সেই ঘটনায় যেন কোনও সাম্প্রদায়িক উস্কানি না থাকে।
আমিও চেতলা এলাকার একটি মসজিদের মুতওয়াল্লি। সেই বিষয় নিয়ে কারও কোনও আপত্তি নেই। নেই কোনও সাম্প্রদায়িক উস্কানি। কিন্তু একটি মসজিদ নির্মাণের কথা বলে যেভাবে ধর্মীয় ভাবাবেগকে উস্কানি দেওয়া হচ্ছে, তা আমাদের মতো রাজনৈতিক দলের পক্ষে মেনে নেওয়া সম্ভব নয়।’ উল্লেখ্য, এর আগে ২০১৫ সালেও হুমায়ুনকে ৬ বছরের জন্য সাসপেন্ড করেছিল তৃণমূল। ২০১৬ সালে রেজিনগরে নির্দল প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে পরাজিত হন তিনি। তারপর কংগ্রেসে ফিরে যান। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগে বিজেপিতে যোগদান করেন হুমায়ুন। পরে ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে ফের তৃণমূলে ফিরে আসেন। দল ভরতপুর থেকে প্রার্থী করে তাঁকে। সেই আসনে জয়লাভ করেন তিনি।

Advertisement

Advertisement