ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সংশোধন বা এসআইআর-এর প্রথম দফা শেষ হল বৃহস্পতিবার। আগামী মঙ্গলবার প্রকাশিত হবে খসড়া ভোটার তালিকা। এর পরেই শুরু হবে দ্বিতীয় পর্বের কাজ। তবে তার আগেই ভোট–রক্ষা অভিযানকে আরও কঠোরভাবে এগিয়ে নিয়ে যেতে ইতিমধ্যেই পরের পর্বের ত্রিমুখী প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে তৃণমূল। পরিযায়ী শ্রমিক থেকে নথিহীন ভোটার এবং সদ্য বিবাহিত মহিলাদের নাম তোলা, তৃণমূলের নজর থাকছে তিন দিকেই।
প্রথমত, পরিযায়ী শ্রমিকদের ফেরানোই তৃণমূলের কাছে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠেছে। গত কয়েক মাস ধরে বিভিন্ন রাজ্যে কাজ করা শ্রমিকদের ফেরাতে শাসকদল উদ্যোগী হয়েছিল। তাঁদের ‘উৎসাহিত’ করতে সরকার প্রকল্পও চালু করেছিল। তাতে বিশেষ সাড়া না মিললেও প্রথম দফায় অংশগ্রহণ তৃণমূলে নতুন করে আশার সঞ্চার করেছে। তবে দক্ষিণবঙ্গের বেশ কিছু জেলার অভ্যন্তরীণ তথ্য বলছে, অনেক পরিযায়ী এখনও ফিরতে পারেননি। পরিবারের লোকজন ‘এনুমারেশন ফর্ম’ জমা দিলেও খসড়া তালিকায় তাঁদের নাম থাকবে কি না, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। তাই দ্বিতীয় দফায় তাঁদের সশরীরে শুনানিতে হাজির করানোই এখন তৃণমূলের প্রধান লক্ষ্য। বুথ স্তর থেকে ব্লক স্তরের নেতৃত্বকে ইতিমধ্যেই সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। জেলা সভাপতি ও বিধায়করা গোটা প্রক্রিয়ার উপর তদারকি করছেন।
Advertisement
দ্বিতীয় লক্ষ্য নথিহীন ভোটারদের নাম তোলা। বহু বাড়িতে দেখা গিয়েছে, ২০০২ সালের তালিকায় কারও নামই নেই। পাশাপাশি তাঁদের কাছে কমিশন নির্ধারিত নথিও নেই। এই অংশের পাশে দাঁড়িয়ে তৃণমূল দ্বিতীয় দফায় বিশেষ সহযোগিতার উদ্যোগ নিতে চলেছে। এর জন্য নবান্নও প্রস্তুত। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ইতিমধ্যেই ঘোষণা করেছেন, ১২ ডিসেম্বর থেকে প্রতিটি ব্লকে ‘মে আই হেল্প ইউ’ শিবির হবে। সেখানে সরকারি আধিকারিকরা নথি তৈরিতে সহায়তা করবেন। তবে নথিহীন ভোটারদের এই শিবিরে নিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব তুলে দেওয়া হয়েছে স্থানীয় সংগঠনের কাঁধে। কারণ, অধিকাংশ পুরসভা ও পঞ্চায়েতে তৃণমূলের জনপ্রতিনিধিরাই রয়েছেন। প্রথম দফাতেই তাঁরা নথিহীন ভোটারদের একটি খসড়া তালিকা তৈরি করে রেখেছেন বলে শাসকদলের দাবি।
Advertisement
তৃতীয় নজর সদ্যবিবাহিত মহিলারা। অনেকে এক জেলা থেকে অন্য জেলায় বা বাইরে থেকে পশ্চিমবঙ্গে এসেছেন বিয়ের পর। তাঁদের নাম তোলার জন্য পৃথক কৌশল তৈরি করছে তৃণমূল। সংখ্যাটা খুব বেশি না হলেও তাঁদের কাছেও দলের উপস্থিতির বার্তা পৌঁছে দিতে চায় শাসকদল।
প্রথম দফার মতো দ্বিতীয় দফাতেও তৃণমূল পুরসভা ও পঞ্চায়েত স্তরের অস্থায়ী কর্মীদের সক্রিয়ভাবে কাজে লাগাতে চাইছে। নিচুতলায় তৃণমূল যে আলাদা আর্থিক পরিকাঠামো গড়ে তুলেছে, সেই ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত এই কর্মীদের বেশির ভাগই দলের। প্রথম দফায় তাঁদের সক্রিয়তা চোখে পড়েছে। দ্বিতীয় দফায় প্রশাসনিক প্রক্রিয়ার সঙ্গে তাল মিলিয়ে আরও সুসংগঠিতভাবে কাজ করতে বলেছে তৃণমূল। কারণ, এবার যাঁরা দফায় দফায় নথি যাচাই করবেন, তাঁরা রাজ্য সরকারের কর্মী হলেও আপাতত কমিশনের মনোনীত আধিকারিক হিসেবেই দায়িত্ব পালন করবেন।
তার পাশাপাশি নতুন ভোটারদের নাম তোলার ক্ষেত্রেও কড়া নজর রাখতে চাইছে রাজ্যের শাসকদল। তৃণমূলের আশঙ্কা, তালিকায় ১৮ বছরের ঊর্ধ্বে ‘ভুয়ো’ ভোটার ঢোকানো হতে পারে। তাই স্থানীয় স্তরে তৎপরতা বাড়িয়ে ‘নজরদারি’-কে গুরুত্ব দিচ্ছে দল। মৃত ভোটারদের নাম বাদ দেওয়ার ক্ষেত্রে নথি পরীক্ষা নিয়ে কমিশনকে চাপের মুখে ফেলতেও প্রস্তুতি নিচ্ছে তৃণমূল। তাদের হিসাব, এর ফলে নাম তালিকায় যুক্ত না–হলেও পরবর্তী আইনি জটিলতায় কমিশনই ‘প্যাঁচে’ পড়বে।
এ ছাড়া ‘দিদির দূত’ অ্যাপে তথ্য দাখিল করে সমান্তরাল হিসাবও রাখছে শাসকদল। সরকার এবং দলের পরামর্শদাতা সংস্থা প্রতিটি বিধানসভা ধরে ধরে পুরো প্রক্রিয়া তত্ত্বাবধান করছে। তৃণমূল নেতৃত্বের সর্বসম্মত মত, দ্বিতীয় দফা আরও গুরুত্বপূর্ণ। দক্ষিণবঙ্গের এক জেলা সভাপতির কথায়, ‘প্রথম দফায় কমিশনের চাপের জন্য কিছু ক্ষত তৈরি হয়েছিল। দ্বিতীয় দফাই সেই ক্ষত সারানোর সুযোগ রয়েছে।’
Advertisement



