রাজ্যের অর্থনীতির পুনরুজ্জীবনের স্বার্থে অমিত মিত্রের নেতৃত্বে বিশেষ বৈঠক, একাধিক সিদ্ধান্ত গৃহীত

রাজ্যের অর্থমন্ত্রী ড. অমিত মিত্র। (File Photo: IANS)

রাজ্যের অর্থমন্ত্রী ড. অমিত মিত্রের পৌরহিত্যে সোমবার ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে একটি রাজ্যস্তরের বিশেষ ব্যাঙ্কার্স কমিটির (এসএলবিসি) বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এই বৈঠকের মূল লক্ষ্য ছিল, রাজ্যে ব্যাঙ্কগুলি করোনাভাইরাসজনিত মহামারীর প্রেক্ষিতে রাজ্যের প্রভাবিত ক্ষেত্রগুলির জন্য ঋণের মাধ্যমে সহায়তা পৌঁছে দেওয়ার বিষয়টি খতিয়ে দেখা।

অমিত মিত্র ছাড়া বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন পাঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাঙ্কের সিইও মল্লিকার্জুন রাও, রাজ্যের বিভিন্ন বিভাগের মুখ্যসচিব, সচিব, অতিরিক্ত মুখ্যসচিব এবং রাজ্যের বিভিন্ন ব্যাঙ্কের প্রতিনিধিরা। বৈঠকে মূলতঃ কৃষি, কৃষি সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্র, খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ ও উদ্যান, অতি ক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প (এমএসএমই), মৎস্য, স্বনির্ভর গোষ্ঠী (এসএইচজি) এবং রফতানি ক্ষেত্রে কীভাবে ঋণের পরিমাণ বৃদ্ধি করা যায়, তা খতিয়ে দেখা। কারণ, এইসব ক্ষেত্র করোনা মহামারীর ফলে প্রচণ্ডভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।

বৈঠকে উপস্থিত ব্যাঙ্ক প্রতিনিধিরা রাজ্য সরকারের সঙ্গে যৌথভাবে উক্ত ক্ষেত্রগুলিতে বর্তমান ঋণের পুনর্বিন্যাস ঘটানো থেকে শুরু করে নতুন ঋণের বিষয়টিও পর্যালোচনা করবেন, যাতে অর্থনীতিকে চাঙ্গা করা যেতে পারে। বিভিন্ন ক্ষেত্র নিয়ে বিষদে আলোচনা হয়েছে উক্ত বৈঠকে।


১. কৃষি ক্ষেত্র : এসএলবিসি’র বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী (ক) কিষাণ ক্রেডিট কার্ডের সুবিধাভোগী কৃষকদের সংখ্যা বাড়িয়ে করা হল ৪৬ লাখ। (খ) খরিফ ফসলের জন্য ঋণের পরিমাণ ৪৪০০ কোটি টাকা থেকে বাড়িয়ে করা হল ১০ হাজার কোটি টাকা। (গ) যেসব প্রান্তিক চাষিরা কৃষকবন্ধু প্রকল্পের আওতায় ছিলেন, তাদেরও কিষাণ ক্রেডিট কার্ডের সুবিধাভোগী করা হল।

২. এমএসএমই ক্ষেত্র : (ক) রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া এমএসএমই ক্ষেত্রে ঋণের সীমা ১০ শতাংশ বৃদ্ধির ঘোষণা করেছিল। এসএলবিসি’র বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয় যে আরবিআই’কে অনুরোধ করা হবে, যাতে তারা ঋণের সীমা ১০ থেকে বাড়িয়ে ৩০ শতাংশ করে দেয়। (খ) প্রসঙ্গত, ২০১৯-২০ আর্থিক বছরে রাজ্য সরকারের প্রত্যক্ষ হস্তক্ষেপে এমএসএমই ক্ষেত্রে ব্যাঙ্কগুলি ৭৪ হাজার কোটি টাকা ঋণ দিয়েছিল। এসএলবিসি’র বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয় যে, এই ক্ষেত্রে ২০২০-২১ আর্থিক বছরে ঋণের পরিমাণ বাড়িয়ে যেন ৯০ হাজার কোটি টাকা করা হয়।

৩. স্বনির্ভর গোষ্ঠী : ২০১৯-২০ আর্থিক বছরে রাজ্যের স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলিকে ৮,৪০০ কোটি টাকা ঋণ দেওয়া হয়েছিল। এসএলবিসি’র বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়- (ক) ২০২০-২১ আর্থিক বছরে ১০ লাখ স্বনির্ভর গোষ্ঠীকে ঋণ দেওয়া হবে। (খ) ২০২০-২১ আর্থিক বছরে ঋণের লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করা হয়েছিল ১৮৫ কোটি টাকা। এই লক্ষ্যমাত্রা বাড়িয়ে করা হয়েছে ১৫ হাজার কোটি টাকা। খরিফ ফসলের জন্য সমবায় ব্যাঙ্কগুলির ঋণের সীমাও ২৪০০ কোটি টাকা থেকে বাড়িয়ে করা হয়েছে ৩৫০০ কোটি টাকা। (গ) ৪২৮১ কোটি টাকার অনুমোদিত ঋণ আগামী ৩১ মে তারিখের মধ্যে বিতরণ করা হবে। (ঘ) ব্যাঙ্কের কাছে সমস্ত ঋণের আবেদন আগামী ৩০ জুনের মধ্যে অনুমোদন করে পাঠিয়ে দেওয়া হবে। (ঙ) স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সদস্যদের অতিরিক্ত ন্যূনতম ঋণ দেওয়া হবে ৫০০০ টাকা করে। এই ঋণের উর্ধ্বসীমা হবে ব্যক্তিগত স্তরে ১ লাখ টাকা। বর্তমানে গৃহীত ঋণের সঙ্গে এই ঋণও যুক্ত করা হবে।

৪. মৎস্য ক্ষেত্র : এসএলবিসির বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়- (ক) ২০২০-২১ আর্থিক বছরে ১ লাখ মৎস্যজীবীকে কিষাণ ক্রেডিট কার্ডের আওতায় নিয়ে আসা হবে। (খ) ২০২০-২১ আর্থিক বছরে মৎস্যজীবীদের মধ্যে কিষাণ ক্রেডিট কার্ড হোল্ডারদের ৫০০ কোটি টাকা ঋণ দেবে ব্যাঙ্কগুলি।

৫. খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ ও উদ্যান : এই ক্ষেত্রের প্রকল্পগুলি যাতে আর্থিক সমস্যা কাটিয়ে উঠতে পারে তার জন্য এসএলবিসি’র এক নতুন সাব কমিটি গঠন করা হয়েছে। তারা সমস্যাগুলি খতিয়ে দেখে এই ক্ষেত্রে অতিরিক্ত ঋণের পরিমাণ ধার্য করবে।

এমএসএমই, মৎস্য এবং খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্পের জন্য যে এসএলবিসি’র সাব-কমিটি গঠিত হয়েছে, তারা তিন দিনের মধ্যে এসএলবিসি’কে রিপোর্ট জমা দেবে, যাতে নতুন পদক্ষেপের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া যায়।