ই-পশ মেশিন বসানোয় আপত্তি রেশন ডিলারদের

রেশন দোকানে ই-পশ মেশিন না বসালে খাদ্যশস্যে কেন্দ্রীয় ভরতুকি পাওয়া যাবে না। ধরা পড়বে জাল রেশন কার্ডের কারসাজিও।

Written by SNS Kharagpur | July 10, 2019 2:51 pm

ই-পশ মেশিন (Photo: Wikimedi Commons)

রেশন দোকানে ই-পশ মেশিন না বসালে খাদ্যশস্যে কেন্দ্রীয় ভরতুকি পাওয়া যাবে না। ধরা পড়বে জাল রেশন কার্ডের কারসাজিও। আর ঠিক এই কারণেই নানা অজুহাত দেখিয়ে দোকানে ই-পশ মেশিন বসাতে রাজি নন রেশন ডিলাররা।

সােমবার পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পরিষদ খাদ্য স্থায়ী সমিতির বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে, ডিলারদের কোনও আপত্তি শােনা হবে না। রেশন দোকানে ই-পশ মেশিন বসাতেই হবে।

নতুন নিয়ম অনুযায়ী, উপভােক্তাদের রেশন কার্ডের সঙ্গে তার আধার কার্ডকে লিঙ্ক করা হবে। ওই রেশন কার্ড ই-পশ মেশিনে সােয়াইপ করলেই তার প্রাপ্য খাদ্যশস্যের পরিমাণ জানা যাবে। সেই অনুযায়ী খাদ্যশস্য উপভােক্তাকে দিতে বাধ্য থাকবেন রেশন ডিলার।

ফলে এই সপ্তাহে মাল নেই, এই সপ্তাহে বরাদ্দ চালের পরিমাণ কম, রেশন দোকানে গিয়ে দোকানদারদের এইসব কথাবার্তা আর কোনও উপভােক্তাকে শুনতে হবে না। রেশন ব্যবস্থাকে ঘিরে দুর্নীতির শিকড় উপড়ে ফেলা অনেকটাই সম্ভবপর হবে। রেশন ব্যবস্থা হয়ে উঠবে আগের তুলনায় অনেকটাই স্বচ্ছ।

বছরের পর বছর জাল রেশনকার্ডের মাধ্যমে হওয়া খাদ্যশস্য বা কেরােসিনের ‘লিকেজ’ বন্ধ করা অনেকটাই সম্ভব হবে। কিন্তু এই মেশিন বসানাের ক্ষেত্রে এই রাজ্যে প্রধান প্রতিবন্ধক হয়ে উঠেছেন রেশন ডিলাররা। তারা কোনওমতেই দোকানে এই মেশিন বসাতে রাজি নন।

সােমবার পশ্চিম মেদনীপুর জেলা পরিষদে খাদ্য স্থায়ী সমিতির বৈঠকে এ বিষয়ে আলােচনার পর খাদ্য কর্মাধ্যক্ষ অমূল্য মাইতি বলেন, ‘মেশিন বসাতেই হবে’। সরকারের কমিশন বাড়ালে মেশিন বসানাে সম্ভব নয় বলে জানান ডিলাররা।

তাদের বক্তব্য, ‘অন্য রাজ্যে কেন্দ্রীয় সরকারের দেওয়া ভরতুকির টাকার পুরােটাই ডিলাররা পান। কিন্তু এই রাজ্যে বাম আমলে রেশন ডিস্ট্রিবিউটর নামে এক ধরনের মধ্যস্বত্তভােগী তৈরি করা হয়, যাদের এই ভরতুকির কিছু টন অংশ কমিশন আকারে দেওয়া হত। সেই প্রথা এখনও চলছে। ফলে ক্ষতির মুখে পড়ছেন ডিলাররা।

খড়গপুর এম আর ডিলার্স অ্যাসােসিয়েশনের সম্পাদক শিশির রায় বলেন, মেশিন ব্যবহারের জন্য প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়নি। বসানাের পর মেশিন খারাপ হলে সেই ক্ষেত্রে কী করণীয়, তার সুস্পষ্ট কোনও নির্দেশিকাও নেই।

খাদ্য কর্মাধ্যক্ষ বলেন, প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু অনেক ডিলার প্রশিক্ষণ নেননি। তাদের জন্য আবার প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে। মেশিন খারাপ হতেই পারে। সেই ক্ষেত্রে বিকল্প ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কিন্তু মেশিন না বসানাের কোনও অজুহাত আমরা আর শুনব না।

একটি মেশিনের জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের প্রায় ৪৫ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। স্ক্যানারের জন্য আরও হাজার পাঁচেক টাকা। অর্থাৎ দোকানপিছু প্রায় ৫০ হাজার টাকা এই ই-পশ মেশিন বসানাের জন্য খরচ করা হচ্ছে। প্রতিটি দোকানে মেশিন পৌঁছে গিয়েছে। কিন্তু ডিলারদের বাধায় রেশন ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা আনার উদ্যোগ আপাতত থমকে।