ভাটপাড়া: বাম-কংগ্রেসের শান্তিমিছিল ঘিরে ধুন্ধুমার, পুলিশের সাথে ধস্তাধস্তি

লােকসভা ভােটের পর এই প্রথম জুটি বেঁধে ময়দানে নামলেও তা সুখকর হল না বাম-কংগ্রেসের ক্ষেত্রে।

Written by SNS Barrackpore | June 26, 2019 2:33 pm

প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র (File Photo: IANS)

লােকসভা ভােটের পর এই প্রথম জুটি বেঁধে ময়দানে নামলেও তা সুখকর হল না বাম-কংগ্রেসের ক্ষেত্রে। মঙ্গলবার ভাটপাড়ায় শান্তির দাবিতে বাম-কংগ্রেসের মিছিল ঘিরে উত্তেজনা ছড়ায় ভাটপাড়া-কাঁকিনাড়ায়। ১৪৪ ধারা জারি থাকায় মিছিল শুরু হতেই তা আটকে দেয় পুলিশ। যদিও পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে সামনে এগিয়ে চলে মিছিল। এরপরেই পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তি বেঁধে যায় বাম-কংগ্রেস নেতৃত্বের।

ভাটপাড়া পুরসভার সামনেই অবস্থানে বসে পড়ে দু’দলের নেতাকর্মীরা।

এদিন মিছিলে উপস্থিত ছিলেন বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু, সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র, প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি সােমেন মিত্র, মহম্মদ সেলিম সহ সিপিএম নেত্রী গার্গী চ্যাটার্জি, নেপালদেব ভট্টাচার্য, পলাশ দাস, প্রাক্তন ফরওয়ার্ড ব্লক বিধায়ক হরিপদ বিশ্বাস, প্রাক্তন সাংসদ তড়িৎবরণ তােপদার, উত্তর ২৪ পরগনা জেলা কংগ্রেস সভাপতি তাপস মজুমদার প্রমুখ নেতৃবৃন্দ।

প্রসঙ্গত, এদিন শান্তিমিছিলকে দু’বার আটকানাের অভিযােগ উঠেছে পুলিশের বিরুদ্ধে। যার জেরে এলাকার পরিস্থিতি বেশ গরম হয়ে ওঠে। পুলিশ কমিশনার মনােজ বর্মা ও ডিসি জোন-১ অজয় ঠাকুরের নেতৃত্বে বিশদ পুলিশ বাহিনী পরিস্থিতি সামাল দেয়।

প্রকাশ, ভাটপাড়ায় শান্তি ফেরাতে এদিন বিকেলে বাম-কংগ্রেস যৌথভাবে শান্তিমিছিলের আয়ােজন করেছিল। মিছিলের জন্য কংগ্রেস প্রশাসনের কাছে অনুমতিও নিয়েছিল। তবে এদিন বিকেল ৪-৫০ মিনিট নাগাদ কাকিনাড়া স্টেশনের কাছ থেকে মিছিল শুরু হয়ে দু’পা এগােতেই ভাটপাড়া মােড়ের ব্রিজের কাছে কমিশনারেটের ডিসি জোন-১ অজয় ঠাকুরের নেতৃত্বে মিছিল আটকে দেওয়া হয়।

পুলিশের সঙ্গে বাম কংগ্রেস নেতৃত্বের কিছুক্ষণ ধস্তাধস্তি চলে। এরপর বাম কংগ্রেস নেতৃত্বে পুলিশের ব্যারিকেড ফেলে দিয়ে থানার দিকে এগিয়ে চলে। পুলিশ কমিশনার মনােজ বর্মা ও ডিসি জোন-১ অজয় ঠাকুরের নেতৃত্বে র‍্যাফ ও বিশাল পুলিশ বাহিনী শান্তিমিছিলকে ফের ভাটপাড়া থানার কাছে আটকে দেয়।

সেখানে দু’পক্ষের মধ্যে বেশ কিছুক্ষণ ধস্তাধস্তি চলে। তারপর পুলিশ কমিশনার মনােজ বর্মা ভাটপাড়া থানায় বাম-কংগ্রেস নেতৃত্বকে নিয়ে আলােচনায় বসেন। থানা থেকে বাইরে বেরিয়ে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি সােমেন মিত্র বলেন, আমরা তাে কোনও ঝান্ডা নিয়ে মিছিলে হাঁটিনি। এমনকী মিছিলে কোনও স্লোগানও তােলা হয়নি।

এখানে আমরা কেউ অশান্তি করতে আসিনি। শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য এখানে এসেছি। তবুও মিছিল আটকে দেওয়া হল।

সােমেন মিত্রের অভিযােগ, নির্বাচনের আগে থেকে এখানে বিশৃঙ্খল অবস্থা চলছে। একের এখানে জঙ্গলের রাজত্ব চলছে। এখানে কোনও সরকার আছে বলে মনে হয় না। সমাজবিরােধী ও বাহুবলীরা এখানে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। কংগ্রেস নেতা সােমেন মিত্র প্রশাসনকে একহাত নিয়ে বলেন, কয়েকদিন আগে গণ্ডগােলের জন্য থানা উদ্বোধন না করে ডিজি পালিয়ে গেলেন।

এতেই বােঝা যাচ্ছে পুলিশ আর মানুষকে নিরাপত্তা দিতে পারছে না। তিনি বললেন, পুলিশ কমিশনারের সঙ্গে দেখা করেছি। সাধারণ মানুষ যাতে স্বাচ্ছন্দে ঘুরে বেড়াতে পারে, দোকানপাট খুলতে পারে সেজন্য উনি সাতদিন সময় নিয়েছে।

তাঁর কথায়, চারদিন আগে পুলিশ কমিশনারের দায়িত্বভার নিয়েছেন মনােজ বর্মা। তাহলে কি আগে যারা দায়িত্বে ছিলেন, তারা অপদার্থ। এপ্রসঙ্গে তিনি বলেন, নবান্নের নির্দেশে এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।

অপরদিকে বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু বলেন, কংগ্রেস মিছিলের জন্য প্রশাসনের কাছ থেকে অনুমতি নিয়েছিল। এদিন তৃণমূল ও বিজেপি বাদে সব দলই মিছিলে সামিল হয়েছিল। কিন্তু পুলিশ শান্তিমিছিল করতে দিল না। রাস্তায় মিছিল আটকে দিল। তার কথায়, এখানে তৃণমূল আর বিজেপির মধ্যে সবকিছু ঘােরপাক খাবে, তা হতে পারে।

মুখ্যমন্ত্রীকে কটাক্ষ করে তিনি বলেন, এখানে শুধু বাংলাভাষী মানুষ থাকবে। হিন্দিভাষী থাকবে না। তা কখনই হতে পারে না। তিনি বলেন, পুলিশ কমিশনারের সঙ্গে কথা বলে বােঝা গেল, কাঁকিনাড়া এতদঅঞ্চলে শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে প্রশাসনের কার্যকরী ভূমিকা ঠিক ছিল না।

তবে পুলিশ কমিশনার স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনতে সাতদিন সময় নিয়েছেন। পরিস্থিতি যদি স্বাভাবিক না হয়, তাহলে আমরা ফের মিলিত হব শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে।

প্রসঙ্গত, দুই স্থানীয় যুবকের মৃত্যুর ঘটনাকে কেন্দ্র করে কয়েকদিন আগেই নতুন করে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে ভাটপাড়া কাঁকিনাড়া। স্থানীয়রা অভিযােগ করেন, পুলিশের গুলিতে মৃত্যু হয় এলাকার ১৭ বছরের বাসিন্দা রামবাবু সাউ, বছর চল্লিশের ধরমবীর সাউয়ের।

ইতিমধ্যে ভাটপাড়ায় মৃত দুই ব্যক্তির পরিবারের সঙ্গে দেখা করেছে বিজেপি’র সংসদীয় দল। পাশাপাশি মৃতদের পরিবারকে ১০ লক্ষ টাকা করে আর্থিক সাহায্য দেওয়ারও ঘােষণা করেছে গেরুয়া শিবির।

স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন বারাকপুরের সাংসদ অর্জুন সিং। বৈঠকে সকল পক্ষকে সবরকমভাবে এলাকায় শান্তি ফেরানাের আবেদন করা হয়েছে প্রশাসনের তরফে। তারপ থেকেই গত দু’দিনে দোকানপাট খােলা হয়। চালু হয় স্কুল, বাস। যার মধ্যে দিয়ে ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হচ্ছে ভাটপাড়া-কাঁকিনাড়া।