• facebook
  • twitter
Saturday, 14 June, 2025

‘পাক অধিকৃত কাশ্মীর ফেরানো যেত’ সেনাকে সম্মান, কেন্দ্রকে খোঁচা মমতার

'হিন্দু ধর্ম শেখাচ্ছেন? ফেক ধর্ম না আমার’, শুভেন্দুকে তোপ মমতার

প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র

পহেলগাম হামলার পাল্টা ‘অপারেশন সিঁদুর’, ভারতীয় সেনার বীরবিক্রমকে সম্মান জানাতে মঙ্গলবার প্রস্তাব পেশ হয়েছিল বিধানসভায়। অধিবেশনের দ্বিতীয়ার্ধ্বে সেই প্রস্তাব নিয়েই বলতে গিয়ে সেনাদের কুর্নিশ জানিয়েও কেন্দ্রকে একহাত নিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পহেলগাম হামলার পশ্চাতে কেন্দ্রের ব্যর্থতার অভিযোগ তুলেও মুখ্যমন্ত্রী মনে করেন, পাক অধিকৃত কাশ্মীর ফেরানোর এটাই সুযোগ ছিল। পাশাপাশি এদিন সেনাবাহিনীর সাফল্য নিয়ে বিধানসভার আলোচনায় বেনজির তর্কে জড়ান মমতা-শুভেন্দু। মুখ্যমন্ত্রীর কটাক্ষের মুখে পড়েন বিজেপি বিধায়ক অগ্নিমিত্রা পালও। সব মিলিয়ে এদিন চূড়ান্ত বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরি হয় বিধানসভায়।

পহেলগাম হামলায় নিহত এবং শহিদদের শ্রদ্ধা জানিয়ে নিজ বক্তব্যের শুরুতেই মমতা বলেন, ‘আমরা সন্ত্রাসবাদের সমর্থক নই, এর কোনও ধর্ম-বর্ণ নেই। পর্যটকদের খুনে আমরা শোকস্তব্ধ। তাঁদের পরিবারকে সমবেদনা জানাই এবং হিন্দুদের প্রাণ বাঁচাতে গিয়ে মারা গিয়েছেন যিনি, তাঁকেও কুর্নিশ। বাংলাই প্রথম সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে সেনাবাহিনীকে নিয়ে আলোচনা করছে।’

একই সুরে তাঁর সংযোজন, ‘এই রাজ‍্যের তিনজন মারা গিয়েছেন। এটা উল্লেখ করছেন না! বাংলাকে এড়িয়ে চলার কারণ নেই। স্বাধীনতা থেকে নবজাগরণে বাংলাই পথ দেখিয়েছে। সেই সঙ্গে আমরা সংসদে বিশেষ অধিবেশনের দাবিও তুলেছি।’

এরপরই কেন্দ্রের ব্যর্থতা নিয়ে একের পর এক প্রশ্নবাণ ছুঁড়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। মমতার প্রশ্ন, ‘যারা ঘটনা ঘটাল, আজ অবধি একজনকেও ধরতে পারল না কেন্দ্র। কাশ্মীরে যারা হামলা করল, কবে এসেছিল, কোথায় ছিল, কীভাবে এসেছিল, সে সব জানা গেল না! কীসের সুযোগ নিয়ে বাইরের জঙ্গিরা ভারতে ঢুকছে? মধ‍্যপ্রদেশের এক নেতা বলেছেন, মেয়েরা কেন লড়াই করল না? আমি বলতে চাই, জঙ্গি অনুপ্রবেশের বিষয়ে বিএসএফ, রাজ্য পুলিশ জানতে পারল না কেন? ওখানে যখন বিপদে পড়ে লোকে সাহায্য চাইল, একজন পুলিশও কেন ছিল না? ওরা (পাকিস্তান) বিশ্বব্যাংক তথা আমেরিকার ঋণ পেল কী করে! রাষ্ট্রসঙ্ঘে সন্ত্রাসবাদ কমিটির চেয়ারম্যান পেয়েছে পাকিস্তান, কী করে? কূটনৈতিক সম্পর্কে কোনও ফাঁক হচ্ছে না তো? নিজেদের যোগাযোগে ফাঁকের জন্য বহিরাগত শক্তি ঢুকে যাচ্ছে না তো? মোদী-শাহের রাজ‍্য থেকে কীভাবে পাকিস্তানে তথ্য যাচ্ছে? এটাই তো সুযোগ ছিল, পাক অধিকৃত কাশ্মীর দখল করার! কেন করা হল না, এর উত্তর চাইব না?’

মমতার বক্তব্যের এই পর্যায়ে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী উঠে দাঁড়ান। বলেন, ‘এসব কী হচ্ছে?’ মুখ্যমন্ত্রী কর্ণপাত না করে বলতে থাকেন, ‘গোটা ঘটনা কানেক্টেড। জঙ্গি অনুপ্রবেশ ঠেকাতে বিএসএফ এবং অন্যান্য নিরাপত্তা এজেন্সিগুলিকে আরও পোক্ত করা উচিত।’ ঠিক এরপরেই শুভেন্দুর উদ্দেশ্যে সরাসরি মমতার আক্রমণ, ‘অপদার্থ বিজেপি দেশের লজ্জা! আপনি বিরোধী দলনেতা? সামান্য ভদ্রতা জানেন না। আপনাকে দেখেই বোঝা যায়, আপনি কিছুই জানেন না। আপনার মতো লিমিটলেস অপোজিশন লিডার জীবনেও দেখিনি।’

এদিন সেনাবাহিনীর সাফল্য প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীকে টিপ্পনি কেটে অগ্নিমিত্রা বলেন, ‘আপনি তো পহেলগামের ঘটনা নিয়েও প্রশ্ন তুলছেন!’ এরপরই পাল্টা মমতার কটাক্ষ, ‘আপনি ফ্যাশন নিয়ে কথা বললে শুনব, কিন্তু রাজনীতি নিয়ে জ্ঞান দেবেন না।’

এই বক্তব্য শেষ হতেই ফের পহেলগাম প্রসঙ্গ তুলে মুখ্যমন্ত্রীর প্রশ্ন, ‘টোটাল সিকিউরিটি ফেলিওর! সরকারের কাছে কেন ছিল না ইনটেলিজেন্স ইনপুট? বিশেষ করে পুলওয়ামায় অত বড় কাণ্ডের পরেও?’

এমতাবস্থায় শুভেন্দুদের চিৎকার-প্রতিবাদ শুরু হয় এবং স্পিকার তাঁদের সংযত হওয়ার পরামর্শ দেন। পরিস্থিতির তোয়াক্কা না করেই মমতা আরও বলেন, ‘আমরা আমাদের ঘরের ছেলেদের লড়াই করার জন্য পাকিস্তানে পাঠিয়েছি। আর আপনি (শুভেন্দু) পহেলগামেই যাননি! আপনি আমাদের ঘরের ছেলেদের অপমান করেছেন! ভোট এলেই একটা পুলওয়ামা করতে হবে, এটা যেন না হয়।’

এরপরই মমতার আক্রমণের লক্ষ্য হন প্রধানমন্ত্রী। তাঁর ভাষায়, ‘অপারেশন সিঁদুরের পরে যখন সব বিরোধীদল বিদেশে গিয়ে দেশের কথা বলছে, তখন প্রধানমন্ত্রী ভোটের প্রচার করছেন! যেখানে হামলা হয়েছে, সেখানে কেন প্রধানমন্ত্রী যাননি? শুধু বাজার করে বেড়াচ্ছেন! আমরা সিঁদুরকে সম্মান করি, আপনি সম্মান করেন না মহিলাদের। সেনাপ্রধান, বিদেশমন্ত্রী, কেন্দ্রীয় মন্ত্রীদের তো বাইরে পাঠানো উচিত ছিল। যেটা আপনাদের করা উচিত ছিল, সেটা দেশের বিরোধী দলগুলি করেছে। আপনাদের বিদায় নেওয়া উচিত, পদত্যাগ করা উচিত।’

মমতা তাঁর সুদীর্ঘ বক্তৃতায় শুভেন্দুকে নিশানা করে মমতার শেষ আক্রমণ, ‘আপনি আমাকে হিন্দুধর্ম শেখাচ্ছেন! আমাদের হিন্দু ধর্ম সর্বজনীন, সর্বধর্ম সমন্বয় শেখায়। আপনাদের মতো ছদ্মবেশী হিন্দু ধর্ম নয়। আমার বিরুদ্ধে আপনি যা ইচ্ছা বলতে পারেন, আমি আপনাকে উপেক্ষা করি। বিজেপি দেশকে ভালবাসে না, শুধু মার্কেটিংকে ভালবাসে!’