মায়ের বিদায়যাত্রায় বিষাদের ছায়া নয়, কলকাতার কার্নিভালে আগামীর আবাহন

বাতাসে এখনও পুজোর গন্ধ। আকাশে শরতের মেঘ থাকলেও বিসর্জনের বিদায় বাঁশি বেজে গিয়েছে। শুক্রবারই বিসর্জনের শেষ দিন ধার্য করেছে প্রশাসন।

Written by SNS Kolkata | October 11, 2019 1:41 pm

কলকাতার পুজোর কার্নিভাল ঘিরে উৎসাহ ও উদ্দীপনা প্রতি বছরই এক কদম করে বেড়েই চলেছে। (Photo: IANS)

বাতাসে এখনও পুজোর গন্ধ। আকাশে শরতের মেঘ থাকলেও বিসর্জনের বিদায় বাঁশি বেজে গিয়েছে। দুর্গা পরিবারের কৈলাসযাত্রা সূচিত হয়েছে। শুক্রবারই বিসর্জনের শেষ দিন ধার্য করেছে প্রশাসন। তবে মায়ের বিদায়যাত্রায় বিষাদের ছায়া ফেলতে চাননা রাজ্যে  মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আসছে বছর তাে আবার হবেই, তাহলে আর শােক বা বিচ্ছেদ কেন? অন্যবারের মতােই নাচে গানে বর্ণাঢ্য শােভাযাত্রার মধ্যে দিয়ে প্রতিমা নিরঞ্জনের পথে এগিয়ে যাবে কলকাতার কিছু নামকরা পজো উদ্যোক্তা। এই নিয়ে তিনে পা রাখল কলকাতার কার্নিভাল। বিসর্জনের শােভাযাত্রা ঘিরে রেড রােডে সাজো সাজো রব। দেশি-বিদেশি অতিথি অভ্যাগততে ভরে উঠবে মঞ্চ। অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন খােদ মুখ্যমন্ত্রী। তাই প্রস্তুতি তুঙ্গে।

রেড রােড খােলা থাকায় উৎসাহী মানুষের এক পলকে ছবি তােলার হিড়িক দেখা গেল। কলকাতার পুজোর কার্নিভাল ঘিরে উৎসাহ ও উদ্দীপনা প্রতি বছরই এক কদম করে বেড়েই চলেছে। বৃহস্পতিবার মঞ্চ প্রস্তুতিতে ব্যস্ততা চোখে পড়ার মতাে। শুধুমাত্র মঞ্চের সিড়িতে নিরলস ভাবে আলপনা এঁকে চলেছেন তিন শিল্পী। অন্যদিকে মাইক থেকে আলাের কাজ খতিয়ে দেখছেন সংশ্লিষ্ট কার্যনির্বাহীরা। থালি গার্লরা এসে শেষ মুহূর্তের মহড়া দিয়ে নিচ্ছে।

আলােক পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছেন বিশিষ্ট শিল্পী দিনেশ পােদ্দার। গত এক সপ্তাহ ধরে তার নির্দেশে মূল মঞ্চগুলির আলাের কাজ চলছে বলে জানালেন খােদ দিনেশ পােদ্দার। নাকতলা উদয়ন, ৯৫ পল্লি, মুদিয়ালি সহ একাধিক বড় পুজোর আলােক পরিচালনা নিখুত হাতে সমলান তিনি। কর্নিভালের সূচনা লগ্ন থেকেই তিনি এই কাজের সঙ্গে যুক্ত। গত দু’দিন বৃষ্টি হওয়ায় মঞ্চের আলােকসজ্জা নিয়ে বেশ চিন্তিত ছিলেন তিনি। বৃষ্টির জল কোনভাবে চুইয়ে পড়ে যাতে শর্টসার্কিটের মতাে কোনও ঘটনা না ঘটে তার জন্য বিশেষ নজর রাখা হচ্ছে। পলিথিন দিয়ে মুড়ে দেওয়া হয়েছে এলইডি লাইট ও তার বলে জানালেন দিনেশবাবু। রীতিমতাে যজ্ঞিবাড়ির কাজ। সেই আয়ােজনে যেন এতটুকু ত্রুটি না থাকে তার জন্য গােটা কাজের তদারকি করছেন তিনি নিজেই।

অন্যদিকে জায়েন্ট স্ক্রিনে অনুষ্ঠান সরাসরি দেখার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। সেখানে দুটি ড্রোন ব্যবহার করা হচ্ছে। এছাড়া থাকছে স্ট্যান্ড ক্যামেরা। ক্যামেরার জন্য তৈরি হয়েছে পৃথক কন্ট্রোল রুম। সেখানেও শেষ পর্বের প্রস্তুতি তুঙ্গে। ৭৫ জন শুধু ক্যামেরার কাজের জন্য নিয়ােজিত।

এবারের থিম বিশ্বখ্যাত বাঁকুড়া, বিষ্ণুপুর, বীরভূমের পােড়ামাটির শিল্প। মূল মঞ্চ সহ দুটি ‘থিম্যাটিক স্টেজ’ তৈরি হয়েছে। গােটা অনুষ্ঠান দেখার জন্য মােট ১৫২২০ টির বেশি বসার আসন রয়েছে। সেখানে থাকবেন প্রশাসন থেকে পুলিশের শীর্ষ কর্তা, সেনাবাহিনীর আধিকারিক থেকে বিদেশি কনস্যুলেটের কূটনীতিক ও বিশিষ্টজনেরা। এছাড়াও থাকবেন রাজ্যের মন্ত্রী, পারিষদ, বিচারপতি সহ অন্যান্যরা। পূজো কমিটির সদস্যদের জন্যও থাকবে পৃথক বাসার আসন। এর পাশাপাশি সাড়ে ৪ হাজারের কাছাকাছি আসন রাখা হয়েছে শুধুমাত্র আম দর্শনার্থীর জন্য। কার্নিভালে এবার ৭৫ টি পুজো কমিটি অংশগ্রহণ করছে বলে জানা গিয়েছে।

অনুষ্ঠানে নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে বিশাল বাহিনী মােতায়েন করা হয়েছে। রেড রােডের পূর্ব প্রান্তে তিনটি ও পশ্চিম প্রান্তে দুটি পৃথক জায়গায় থাকবে বাহিনী। মূল মঞ্চের সুরক্ষা ব্যবস্থা খতিয়ে দেখতে বৃহস্পতিবার বিকেলে দেখা গেল আইবি থেকে কলকাতা পুলিশের কমব্যাটের শীর্ষ কর্তাদের। কার্নিভাল নজরবন্দি রাখতে ৮০ টিরও বেশি সিসি ক্যামেরা বসানাে হয়েছে। পুলিশের পৃথক কনট্রোল রুম খােলা হয়েছে। সেখানে থাকবেন পুলিশের শীর্ষ আধিকারিকরা। ওয়ারলেস থেকে সিসি ক্যামেরার সরাসারি ফুটেজ পুলিশ আধিকারিকরা সেখানে বসেই সরাসরি দেখতে পাবেন। ছােড়া প্রয়ােজনে সেখানে আলােচনা সারতে পারবেন। লালবাজারের সঙ্গে সরাসরি যােগাযােগ রাখঅ হবে এই মােবাইল কন্ট্রোল ইউইনট থেকেই।

অন্যদিকে কার্নিভাল থাকায় বেশ কিছু সংলগ্ন রাস্তার যােন নিয়ন্ত্রন করবে কলকাতা পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ। বৃহস্পতিবার রাত ১২ টা থেকে শুক্রবার সকাল ৯ টা পর্যন্ত প্রয়ােজনে রেড রােড বন্ধ রাখা হতে পারে। এছাড়া শুক্রবার দুপুর ২ টো থেকে অনুষ্ঠান শেষ হওয়া পর্যন্ত বন্ধ রাখা হবে রেড রােড, লাভার্স লেন, কুইন্সওয়ে, পলাসি গেট রােড এবং এসপ্ল্যানেড র‍্যাম্প। আজ দুপুর ২ টার পর থেকে পার্কিং করা যাবে না চৌরঙ্গি রােড, ওল্ড কোর্ট হাউজ স্ট্রিট, আরএন মুখার্জি রােড, হেয়ার স্ট্রিট, ক্যাথিড্রাল রােড, কুইন্সওয়ে, মেয়াে রােড, স্ট্রান্ড রােড সহ একাধিক রাস্তায়। বেশ কয়েকটি রাস্তায় গাড়ির গতিপথ পরিবর্তন করা হতে পারে।